• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

শত কোটি টাকার অনিয়ম নিয়ে সাঈদ খোকন ও দেলু যা বললেন (ভিডিও)

  ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৪৬
What Saeed Khokon and Delu said about irregularities worth hundreds of crores of rupees
ফাইল ছবি

নকশাবহির্ভূত ও পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান থাকায় সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানে ফুলবাড়িয়া মার্কেটে অবৈধ উচ্ছেদ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে ঘুষের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জাকের সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু। যে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে অবৈধ দোকানকে বৈধতা দিয়েছেন তিনি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। কেবল তাই নয়, চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।

শতকোটি টাকার অনিয়ম নিয়ে সাঈদ খোকনকে দোষারোপ করে দেলোয়ার যা বললেন:

দেলোয়র হোসেন দেলু বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেট থেকে সাঈদ খোকন শত কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে সিটি করপোরেশনের ইউসুফ আলী সরদার ঘুষের টাকার জন্য আমার নারায়নগঞ্জ বাসায় যায় এবং সাঈদ খোকনের সাথে আমাকে ফোনে ধরিয়ে দেয়। তারপরও আমি টাকা দেইনি। তবে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মেয়রের কাছে সরাসরি টাকা পাঠিয়েছে। ইউসুফ আলীর হাতেও ২ কোটি টাকা দিয়ে এসেছিল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ফুলবাড়িয়ার ওই তিনটি মার্কেট ছাড়া সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটও বাদ নেই যে সাঈদ খোকনের মাধ্যমে জর্জরিত হয়নি। তার আশকারায় বাইরের লোকজন মার্কেটে প্রথমে টিন দিয়ে দোকান বানায়, পরে সেগুলো দেয়াল দিয়ে দখল করে। একটা তিল পরিমাণ জায়গা খালি রাখেনি। এজন্য গত ৩ বছর আগে আমি লজ্জায় মার্কেট ছেড়ে চলে আসি। যারা অবৈধভাবে দখল করছিল তাদের আমি বলেছি, ঘুষের টাকা কেউ ফেরত দেয় না। এই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তোমরা এতোগুলো টাকা দিয়ে কেনো অস্থায়ী জায়গায় বসতেছো।

দেলু অভিযোগ করে আরও বলেন, মেয়র থাকাকালীন সাঈদ খোকন একেকবার বুলডোজার লাগিয়েছে আর ভয় দেখিয়ে দোকান মালিকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিয়েছে। ‘শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ’ নামের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সাঈদ খোকন টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, যা তার নিজের একাউন্ট।

সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আরও যতো অভিযোগ:

কেবল ফুলবাড়িয়া-২ মার্কেট থেকেই ২০১৮ সালে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু। মার্কেট দোকান সমিতি বলছে, ২০১৮ সালে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের শেষ সময়ে গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া এলাকার ১৬টি মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তখন অবৈধ দোকানকে বৈধতা দেওয়ার কথা বলে প্রতি দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

আরেক দোকন মালিক বলেন, মার্কেট কর্তৃপক্ষ দেলোয়ার হোসেন দেলু আমাদের কাছ থেকে মোট ১৬ লাখ ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা কোথায় যাব। আমরা তো এখন রাস্তায় বসে গেছি। আমাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেলো। আমাদের পরিবার কিভাবে চলবে!

কেবল ফুলবাড়িয়া-২ মার্কেট থেকে ২১ কোটি টাকা তুলেছে মালিক সমিতি। আর ওই টাকা সাঈদ খোকনকে দেওয়ার জন্য জমা দেন ফুলবাড়িয়া মার্কেটের লোপাটের মূল হোতা ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর অ্যাকাউন্টে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি মার্কেট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা ২ লাখ, ৩ লাখ ও ৫ লাখ করে টাকা নিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ দোকানের ভাড়া কাটার জন্য প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। আর দেলোয়ার হোসেন তার অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তরা ব্যাংক ফুলবাড়িয়া শাখার মাধ্যমে সাঈদ খোকনকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা গ্রহণ করেছেন সাঈদ খোকন। প্রতিটি চেকই ছিল ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত।

ফুলবাড়িয়া-২ মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, সে (সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন) একেক সময় একেক ধরনের কথা বলে আমার থেকে চেক রাখছে। লোকজন দিয়ে আমার থেকে টাকা আদায় করেছে। মোট ৩৪ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।

এছাড়া ফুলবাড়িয়া ১ থেকে ৮ কোটি, সুন্দরবন সুপার মার্কেট থেকে ৩৬ কোটি, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার থেকে ২৪ কোটি ৭০ লাখ, ঢাকা ট্রেড সেন্টার থেকে ৬৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে।

শত কোটি টাকার অনিয়ম নিয়ে যা বললেন সাঈদ খোকন:

ফুলবাড়িয়া মার্কেট উচ্ছেদের চলমান অভিযান সম্পূর্ণ অবৈধ বলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। এ বিষয়ে সাক্ষাতকার নিতে চাইলে সাঈদ খোকন আরটিভি নিউজকে বলেন, আমিতো লকডাউনে থাকি, উপস্থিতিতে মুখোমুখি কথা বলাতো ডিফিক্যাল্ট। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন টাকা পয়সা হাতিয়ে নেইনি। যে টাকা নেওয়া হয়েছে তা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত মেয়রের তহবিলে নেওয়া হয়েছে, যা সরকারের তহবিলেই জমা পড়েছে। সিটি করপোরেশন মেয়রের তহবিল একাউন্টসে যদি এখনও তল্লাসী করা হয়, ওই টাকার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। আমাদের সিটি করপোরেশন কিভাবে এবং কোন প্রসেসে ওইসব দোকানের ভাড়াগুলো আদায় করেছিলো তার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার একার নয়, তা ছিলো বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত। যা হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং আইনজীবীদের মতামত নিয়ে নেওয়া হয়েছিলো।

প্রকৌশলী দিয়ে দোকানগুলোর নকশা কারেকশন করে সেগুলোর বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে গত ৮-৯ বছরের ভাড়া আদায় করা এবং রশিদ দেওয়া, হলফনামা রিসিভ করা সবই লিগ্যাল ছিলো।

আর ডকুমেন্টস্গুলো দেখলেই বোঝা যাবে, ওইসব দোকান ভাঙ্গা বৈধ নাকি অবৈধ। ৯১১ টি দোকান থেকে আমরা সিটি করপোরেশন যে পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া আদায় করেছিলাম, তা আদালতের নির্দেশেই বোর্ড সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। টাকাগুলো আমার ব্যক্তিগত একাউন্টে নেইনি।

অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন একাউন্টে দেলোয়ার হোসেন দেলুর মাধ্যমে টাকা কোটি কোটি নিয়েছেন, এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বলেন, দেলোয়ার হোসেন দেলু কোন একাউন্টে, কার একাউন্টে, কি টাকা জমা দিয়েছেন এটা আমার জানা নেই। আমরা সিটি করপোরেশনের একাউন্টে টাকা নিয়েছি।

ফুলবাড়িয়ায় দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। দোকানগুলোর লিগ্যাল ডকুমেন্টস আছে। অথচ, উচ্ছেদের আগে নিয়ম অনুযায়ী কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি। জনসম্মুখে যখন সাম্প্রতিক অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে গেলো, যে কারণে লাখ লাখ লোক পথে বসে গেলো। তখনই বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল আমাকে বিভিন্নভাবে অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। এটাতো কাম্য হতে পারে না। ওই বোর্ড সভায় যারা দোকান বৈধতার ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল তাদের ৮০ শতাংশ এখনও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বপালন করছে।

শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ নামের আমার কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই এবং এই নামের আমার কোনে একাউন্টও নেই, এক কথায় এই নামে আমার কোনও কিছুই নেই। বরং তাকে (দেলোয়ার হোসেন দেলুকে) আইনে আওতায় এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এটি সম্পূর্ণ ভূয়া তথ্য, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব কাজ করা হচ্ছে। যে সুগার মিলের কথা বলা হচ্ছে, আসলে আমার কোনো সুগার মিলই নেই।

প্রসঙ্গত, সাঈদ খোকনের পর ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্বে এসেই এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ব্যবসায়ীদের বাধা এলেও পিছু হটেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানা গেছে।

কেএফ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ৩০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
হাতিয়ায় খালের ওপর নির্মিত ভবন ভেঙ্গে দিলো মেয়র
টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ থেকে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি, এসএসসি পাসেই আবেদন
X
Fresh