• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

প্রেসক্লাবের সামনে মাসের পর মাস অনশনের ফলাফল শূন্য

  ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:১২
result, months, fasting, front of the press club, zero
প্রেসক্লাবের সামনে মাসের পর মাস অনশন

ভুক্তভোগীরা যখন সঠিক সমাধান পান না, তখনই ন্যায় বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন, ধর্মঘট ও মানববন্ধনে বসেন। তাদের অধিকার আদায়ের ভরসাস্থল হয়ে ওঠেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত। করোনাকালীন সময়েও ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন ও অনশনের জন্য এই ফুটপাত একদিনের জন্যও খালি থাকেনি। দুই মাস বা তিন মাস অনশন করে কোনও ফলাফল হাতে না নিয়েই ঘরে ফিরেছেন অনেক ভুক্তভোগী। তারপরেও যেন শেষ ভরসা প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে মানববন্ধন ও অনশন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে অনশন করে আসছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে এসে তারা মানববন্ধন ও অনশন করছেন। শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা অনশন করছেন। সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্লে-কার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে স্লোগান লিখে মানববন্ধনের দাবি দাওয়া তুলে ধরছে।

প্রেসক্লাবের সামনে দায়িত্বরত এস. আই কমল শাহা আরটিভি নিউজকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমোতি ছাড়া রাজধানীতে কোনও সভা-সমাবেশ করা যাবে না। তবে মানবিক কারণে ডিএমপির অনুমোতি ছাড়াই প্রেসক্লাবের সামনে তাদের ধর্মঘট বা আমরণ অনশন করতে দেওয়া হচ্ছে। যদি তারা কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা ইপিজেডের এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিকরা নিজেদের পাওনা আদায়ের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজিএমই’র কাছে তাদের দাবি জানানোর পরও কোনও সুরহা না হওয়ায় শ্রমিকরা প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসেছেন। অনশনে প্লে-কার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে লিখা ‘এক হাজার ১শ’ শ্রমিকের জীবন নিয়ে ছিনি-মিনি খেলবেন না। কারখানা খুলে দাও, না হলে সকল পাওনা বুঝিয়ে দাও’।

জানা গেছে, এ ওয়ান (বিডি) কারখানাটি ইতালির মালিকানাধীন। গত জানুয়ারি থেকেই কাজ নেই। আর্থিক সংকটের কারণে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পারায় ১৮ এপ্রিল কারখানাটি বন্ধ করে দেয় ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ইজারা চুক্তিও বাতিল করা হয়। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় ১ হাজার ১০০ পোশাক শ্রমিক। তাদের পাওনা ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। পাওনা টাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। গত ৭ মাসেও এসব পোশাক শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধানে কোনও কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক আব্দুস সালাম আরটিভি নিউজকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বেতন পায়নি। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া না দিয়ে কারখানাটি ১৮ এপ্রিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দাবি আদায়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কাছে ২১ বার গিয়েও কোনও সুরহা পায়নি। শ্রমিকরা পাওনা টাকা চাইতে গেলে মারধর করা হয়েছে।

এছাড়া ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৮১ দিন ধরে অনশন করছেন তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিকরা। অনশন অবস্থায় সুচিকিৎসার অভাবে শারমিন বেগম নামে এক শ্রমিক মারা গেছে বলে জানা যায়। তাজরীন গার্মেন্টস কারখানায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর অগ্নিকাণ্ডে ১১৩ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়ে মারা যায়। আহত হয় অনেক শ্রমিক। তাজরীনের আহত বেশ কয়েকজন শ্রমিক তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার দাবিতে ৮১ দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শ্রমিকদের এই কর্মসূচি পালনকালে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে কোনও আশ্বাস মেলেনি, এমন কি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) তাদের কোনও খোঁজ নেয়নি। শ্রমিকদের অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক আলেয়া আক্তার আরটিভি নিউজকে বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে ৮১ দিন ধরে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার এই ৩ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আহত শ্রমিকের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কিংবা কোনও সংস্থা এগিয়ে আসেনি।

এই দুই পোশাক কারাখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি আমরণ অনশন করছেন ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ এর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা। তারা নিয়োগের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। গত ৫৬ দিন ধরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জনকে প্যানেলে নিয়ে নিয়োগের দাবিতে অনশন করছেন। গত ১২ জুলাই একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেল প্রত্যাশীরা। একই তারিখে প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও স্মারকলিপি দিয়েছে ২০১৪ স্থগিত নিয়োগের প্যানেল প্রত্যাশীরা।

প্যানেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশী আরিফ হোসেন দিনাজপুর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে এসেছেন। তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ, বেকারমুক্ত হবে বাংলাদেশ। ‘মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন স্লোগান সামনে রেখে আমরা প্রত্যাশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আকুতি শুনবেন। আমাদের চাকরির বয়স শেষ, আমাদের প্যানেলে নিয়োগ না দিলে প্রতিটি পরিবারে দুঃখ নেমে আসবে।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক মাজাহারুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিন কমবেশি ২ শিক্ষক অবস্থান করছেন। আমাদের দাবি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো জাতীয়করণ করা হোক।

এফএ/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেন যারা
রমজান মাসে ৪ বিশেষ আমল
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল
হেঁটে পদ্মাসেতুর রূপ উপভোগ করলেন ভুটানের রাজা
X
Fresh