• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নগরবাড়ীঘাটে উন্মুক্তভাবে কয়লা আনলোড: ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ

  ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১১:৩৯
Open unloading of coal at Nagarbarighat: Health and environment at risk
নগরবাড়ীঘাটে উন্মুক্তভাবে কয়লা আনলোড করা হচ্ছে

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যেই চলছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী নৌবন্দর নগরবাড়ী ঘাটে উন্মুক্ত পরিবেশে কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা লোড-আনলোড কার্যক্রম। কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা শুধু নিজেদের লাভের আশায় এসব করছেন। উন্মুক্ত স্থানে কয়লা স্তুপ করে রাখায় দূষিত হচ্ছে মানবদেহ ও পরিবেশসহ ফসলী জমি। যেন দেখার কেউ নেই।

নগরবাড়ী নৌবন্দর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে কয়লা আমদানিকারকরা কয়লা আমদানি করে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে এবং পরে কার্গো জাহাজযোগে নগরবাড়ী নৌবন্দরে নিয়ে আসেন। এই কয়লা দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যবসার সাথে পাবনার সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, যশোরের নওয়াপাড়া ট্রেডার্সসহ ৭টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার টন কয়লা কার্গো জাহাজ থেকে আনলোড করে শতশত শ্রমিক ঘাট পাড়ে খোলা জায়গায় স্তুপ করে রাখেন। সেখান থেকে আবার শতশত ট্রাক লোড করে দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়লা সরবরাহ করা হয়। এই লোড-আনলোড করায় পুরো এলাকা কালো ধোয়ায় বাতাস দূষিত হয়ে পড়ে। এদের কারণে মানুষ নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতেও পারে না। কয়লার কালো গুঁড়া, কালো ধোয়া ও দূষিত বাতাসে এখানকার অনেকেই ফুসফুসে জটিল রোগ ও মরণ ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়াও কয়লার কালো গুঁড়া এ এলাকার ফসলি জমির উপর এবং ফল ফলাদির গাছের উপর স্তুপ আকারে পড়ে জমির উর্বর শক্তি হ্রাস এবং গাছের মুকুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা বিনষ্ট করেছে।

জীবনযুদ্ধে পরাজিত এসব ঘাট শ্রমিক মিজান, আজিজুল, ছাত্তার, আলম, আয়েজ, ভুতে রহিমসহ অনেকেই জানান, বিপদ জেনেও পেটের তাগিদে তারা কয়লা লোড আনলোড করার কাজ করেন। দিনে তারা ৪ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান। সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে হাতমুখ ধুলে নাক ও মুখ থেকে এবং কাশি বা থুথুর সাথে কয়লার কালো গুঁড়া বের হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কয়লা বহনের কারনে শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধা মন্দা এমনকি ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একসময় এসব শ্রমিকেরা ফুসফুসজনিত বড় রোগে আক্রান্ত হবেন।

নগরবাড়ীর ঘাট এলাকার কৃষক আবুল হাশেম, উম্বর প্রামানিক, রফিক মিয়া জানান, কয়লার গুঁড়া ফসলি জমিতে পরে মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে আর কোনো ফসলই ভালো হচ্ছে না। আর কিছুদিন গেলে এসব জমিতে ফসল আবাদের আশা ছেড়ে দেওয়া লাগবে। প্রশাসনের কোনো লোকই এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছে না।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী জানান, কয়লার স্তর পড়ে জমিতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। মাটি ঠিকমতো প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করতে পারছে না। জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড হবার পর নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করে রেখে বিক্রি করলে সবার জন্যই উপকার।
এ ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো সনদপত্র আছে কিনা তাও জানা যায়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, কয়লা আমদানি, রপ্তানি ও বিপণন এবং সংরক্ষণের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে করতে হবে। নগরবাড়ী নৌবন্দর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, কয়লা ব্যবসায়ীরা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা যদি এই প্রতিশ্রুতি না মানেন তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সেতু ভেঙে ভোগান্তি, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল  
গরমে ঘন ঘন হিট ক্র্যাম্প, যাদের ঝুঁকি বেশি 
উচ্চঝুঁকিপূর্ণ রুট পার হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ, পাহারায় ইইউ’র যুদ্ধজাহাজ
ঢাকার ৪২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন সিলগালার নির্দেশ
X
Fresh