• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাহাড়ের তিন উপজেলা ও সাজেক যাওয়া সহজ করবে চেঙ্গি সেতু

  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৯:২৭
Chengi Bridge,easier to go, three upazilas,hill and Sajek
চেঙ্গি সেতু

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেঙ্গি নদীর উপর নির্মিত সেতুর মাধ্যমে সাজেক যাওয়ার দূরত্ব যেমন কমবে তেমনি রাঙামাটি তিন উপজেলার বাসিন্দাদের যাতায়াতেও সহজ হবে। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত হলেও সড়ক পথে যেতে হয় খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে। এতে একদিকে সময় যেমন বেশি লাগছে অন্যদিকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে।

নানিয়ারচরের চেঙ্গি সেতু দিয়ে রাঙামাটি থেকে সাজেক যাওয়া সহজ হবে এবং সময় কম লাগবে। রাঙামাটির নানিয়ারচর, লংগদু উপজেলা ও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে দীঘিনালা হয়ে সাজেক যাওয়া যাবে।

ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কয়েকটি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নৌ-পথই একমাত্র মাধ্যম ছিল যাতায়াতের। ফলে নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি উঠে। দীর্ঘ ৬০ বছর পর নির্মিত এই সেতুর ফলে রাঙামাটি জেলার দুর্গম তিন উপজেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। চেঙ্গি নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলাতেই নয়, সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও। পাশাপাশি খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া সম্ভব হবে। অথচ এক সময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনও সড়ক ছিল না। নৌ-পথে যেতে দুই ঘণ্টার মত সময় লাগতো। এখন এক ঘণ্টারও কম সময়ে সড়ক পথে নানিয়ারচর সদরে যাওয়া যাবে। চলাচলের জন্য সেতুটি শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সেতুটি খুললে দুর্গম যাতায়াতের কষ্ট ঘুচছে তিন উপজেলার মানুষের। তবে নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনও নির্মিত না হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এর সুবিধা পাচ্ছেন না।
এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন জানান, সড়কটি নির্মাণে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্স্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। শিগগিরই সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।

সরাসরি রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান (ইসিবি)। রাঙামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়ক পথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ছয় থেকে ঘণ্টা। তাছাড়া সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় সময় আরও বেশি লাগে। তাই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর নৌ-পথেই উপজেলাবাসীকে জেলায় যাতায়াত করতে হতো। তাতেও সময় লাগতো ছয়-সাত ঘণ্টায়।

একইভাবে রাঙামাটি থেকে সড়কপথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। এই উপজেলার সঙ্গে রাঙামাটি সদরের কোনও বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌ-পথেই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নানিয়ারচরের চেঙ্গী সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গম পরিস্থিতি অনেকটাই লাঘব হতে যাচ্ছে।

রাঙামাটি থেকে নানিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নানিয়ারচর থেকে লংগদু সদরে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। চেঙ্গী সেতু ব্যবহার করে এখন এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি লংগদু বা বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব হবে।

নানিয়ারচর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুল মজুমদার বলেন, এই এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবো। তাছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকেও চলে যেতে পারবো।’ এই সেতু দিয়ে লংগদু দীঘিনালা হয়ে সহজে সাজেকেও যাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দীন মামুন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বাঘাইছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হোক। আমাদের এখন খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙামাটিতে আসা-যাওয়া করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু চেঙ্গি সেতুর মাধ্যমে আমাদের এতোদিনের যে সমস্যা সেটা দূর হচ্ছে। আমরা ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টার মধ্যে রাঙামাটি পৌঁছাতে পারবো।

লংগদু উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক আরমান খান বলেন, ‘এক সেতুতেই আমাদের তিন উপজেলার ভাগ্য পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কিন্তু লংগদু থেকে নানিয়ারচর রাস্তার কাজটি এখনও না হওয়ায় সেতু হওয়ার পরও আমরা সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবো না। সরকারের এতো উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, কিন্তু কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ৬০ বছর পর আমরা সরাসরি রাঙামাটির সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। এরপরও ১৮ কিলোমিটারের একটি সড়কের জন্য এখন আরও অপেক্ষার প্রহর কাটাতে হবে।’

সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

সেতু নির্মাণকারী সংস্থা মনিকো লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার পাল জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। সহসাই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সেতু ভেঙে ভোগান্তি, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল  
সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ, নেই ভোগান্তি
সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে বাড়ছে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ 
ছুটির ৫ দিনে পদ্মা সেতুতে যত টাকার টোল আদায়
X
Fresh