• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ডিসেম্বরে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, দু’পাড়ে উচ্ছ্বাসের আমেজ

  ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৪৬
ডিসেম্বরে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, দু’পাড়ে উচ্ছ্বাসের আমেজ
পদ্মা সেতু

স্বপ্ন যখন বাস্তবে। পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। সময় ঘনিয়ে আসছে সেতু ছুঁয়ে দেখার, স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করার পর যখন আরও কয়েকটি সংস্থা সরে যায় সেসময় মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্থা দাঁড়ায়, ভেঙে যেতে থাকে স্বপ্ন, তবে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। লক্ষ্য নেয় অবিশ্বাস্যকে জয় করার। অবশেষে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দোরগোড়ায় দেশ। অপেক্ষা এখন সময়ের।

পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। নানান প্রতিকূলতায়ও থেমে নেই এর কর্মযজ্ঞ। আর মাত্র ৪টি স্প্যান বসলেই দৃশ্যমান পুরো পদ্মা সেতু। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নপূরণ সন্নিকটে। দু'পাড়ে উচ্ছ্বাসের আমেজ।

পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৩৭টি স্প্যান ইতোমধ্যে বসানো হয়ে গেছে। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৫ হাজার ৫৫০ মিটারে। বাকি থাকছে আর মাত্র ৪টি স্প্যান। চলতি মাসে আরও ২টি স্প্যান বসানোর শিডিউল রয়েছে। এছাড়াও আগামী ডিসেম্বরে বাকি ২টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে স্প্যান বসানোর কাজ। এর মাধ্যমে ডিসেম্বরেই দৃশ্যমান হবে সেতুর পুরো ৬.১৫ কিলোমিটার।

সব শেষ গত ১২ নভেম্বর সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয় ৩৭তম স্প্যানটি (২-সি)। অবশিষ্ট ৪টি স্প্যানের মধ্যে এ মাসেই সেতুর ১ ও ২ নম্বর পিলারের ওপর বসবে ৩৮তম স্প্যান (১-এ) ও সেতুর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হবে ৩৯তম স্প্যান (২-ডি)। আগামী ডিসেম্বরে শেষ দুটি স্প্যানের মধ্যে সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর বসবে ৪০তম স্প্যান (২-ই)। সবশেষ ৪১তম স্প্যানটি (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নাম্বার পিলারের ওপর। আর এর মাধ্যমে শেষ হবে স্প্যান বসানোর কাজ। সৃষ্টি হবে দু'পাড়ের মেইল বন্ধন।

এদিকে স্প্যান বসানোর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও হচ্ছে দ্রুত গতিতে। একদিকে যেমন পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। অপর দিকে রোডওয়ে স্ল্যাব ও রেলওয়ে স্ল্যাবের কাজও এগিয়ে চলেছে। বন্যা, নদীতে প্রবল স্রোত ও পানি বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের গত চারমাস স্প্যান বসানো হয়নি। তবে এখন কাজ চলছে পুরোদমে।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের নিশ্চিত করে জানান, মূল সেতুর ২ হাজার ৯৭০টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ১৮৯টি বসানো হয়েছে। ২ হাজার ৯৫৮টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬টি। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে মোট ৪৩৮টি সুপার গার্ডারের মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ১৫০টি ও জাজিরা প্রান্তে ২৩৪ সহ ৩৮৪টি স্থাপন করা হয়েছে।

অপরদিকে, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দু'পাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাস চলছে। দেখা দিয়েছে আসার আলো। সেতুর দুই পাড়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেস সড়ক এলাকায় পরিবেশের নতুন রঙ লেগেছে। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের রাজধানী যাতায়াত অল্পসময়ে আরামদায়ক হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে উন্নয়নের ধারাকে কাজে লাগাতে ও আর্থিক সচ্ছলতা ফিরাতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে অর্থ বিনিয়োগ করছে। আশপাশের এলাকায় রিসোর্ট, পার্ক, হোটেল-মোটেল গড়ে তুলার পরিকল্পনায় জমি কেনা-বেচা হচ্ছে। বেড়েছে জমির দাম। নতুন কর্মক্ষেত্র, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের স্বপ্ন ফুটে উঠেছে মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের।

মাদারীপুরের শিবচর এলাকার মীর মফিজুর ইসলাম ইমরান জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গতি যতই বেড়ে চলেছে। ততোই আমাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের উচ্ছ্বাস বাড়ছে। ঢাকায় যাতায়াতে ফেরিতে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা নিরসন হবে। সেতুকে কেন্দ্র করে উন্নত হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। নির্মাণ হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিষ্ঠান। বেড়েছে জমির দাম। এ সেতুর কাজ শেষ হলে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার শিল্পকারখানার যানবাহন রাজধানীতে যাতায়াত সহজ হয়ে পড়বে। এখানে বিনিয়োগও বাড়বে। আমরাও রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অল্প সময়ে যেতে পারবো। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা আনন্দিত।

এছাড়াও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদিখা উপজেলায়ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে জোরেশোরে।

লৌহজং দক্ষিণ মেদিনী মণ্ডল এলাকার শরিফুল ইসলাম সঞ্জীব জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। নির্মাণ কাজে এলাকা থেকে অনেক শ্রমিক নিয়োগ দেয়ায় এলাকার বেকারত্ব কমেছে। অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। আয় রোজগার বেড়েছে। জমির দামও বেড়েছে। সড়কের আশপাশের জমি কিনে অনেক হাউজিং প্রকল্পও ঢুকেছে। পদ্মা সেতু হলে এসব এলাকায় পর্যটন শিল্প, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হোটেল-মোটেল গড়ে উঠবে অর্থনীতির উন্নয়ন হবে এ স্বপ্ন দেখছে এ এলাকার মানুষ।

লৌহজং এলাকার ঠিকাদার ব্যবসায়ী মো. মর্তুজা খান জানান, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ৬ লেনের যে এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণ হয়ে তা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় খাবারের দোকানসহ দোকান-পাটের ব্যবসা জমে উঠেছে। বেচা কেনা বেড়েছে। পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল আমরা সাপলাই দিচ্ছি। অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) মূল সেতুর কাজ ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আমাদের সাহস অনেক বেড়ে গেছে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
‘পদ্মা সেতুতে দৈনিক আয় সোয়া ২ কোটি টাকা’
চলতি বছরই শেষ হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ : কাদের
X
Fresh