• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ফলোআপ

ইসলাম ও নবীর বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়

  ০৭ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৩
Reilly used to post religious incitement to seek refuge in France
গ্রেপ্তারকৃত রেইলি এবং তার টুইটার পোস্টের অংশবিশেষ

প্রবাদ আছে ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’। ফ্রান্সের অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে দেশে বসে ইসলাম ধর্ম, আল্লাহ্ এবং নবী মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছিলেন ১৯ বছর বয়সী তরুণী ইশরাত জাহান রেইলি। গত ৩ বছর যাবত এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে গত ২ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয় তার। এরপর ৩ বছর বয়সী ছেলে সন্তান নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাজধানীর দারুসসালাম এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন রেইলি। কমিউনিটি পুলিশে নিম্ন পর্যায়ে চাকরিও ছিল তার।

টার্গেট ফ্রান্স বা ইউরোপের দেশ, দীর্ঘদিন র‌্যাবের নজরদারী
সম্প্রতি ফ্রান্সে ধর্মীয় অবমাননার ইস্যুতে যখন পুরো বিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে, সে সময় রেইলি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যদিও গত ৩ বছর যাবত এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেইলির ৭টি আইডি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তার একটি আইডি নিষ্ক্রিয় করা হলে, আরেকটি আইডি খুলে সে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট অব্যাহত রাখে। এভাবেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ’ খেলছিল এই বেপরোয়া তরুণী।

স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি
খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয় ইশরাত জাহান রেইলির। এইসএসসি শেষ করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি রেইলি। সাবেক স্বামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আর বিয়ে করেননি রেইলি। তবে একাধিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে এই তরুণীর বিরুদ্ধে।

ফেসবুক অনুরোধ রাখলেও উল্টো টুইটার
উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। যে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পথ সুগম হয়। ইসরাত জাহান রেইলি সে পথই অনুসরণ করছিলেন। তিনি যখন ফেসবুকে একের পর এক ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তার ফেসবুক আইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম হয়। তবে ৩২ হাজার ফলোয়ার সম্মিলিত তার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালেও সাড়া মিলেনি। এমনটি কেবল রেইলির ক্ষেত্রে নয়, অন্যদের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনুরোধ জানালে ফেসবুক তা আমলে নেয়। কিন্তু টুইটার কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না, র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাই জানানো হয়।

উস্কানিতে সক্রিয় চক্র
রেইলির টুইটারে অসংখ্য বিদেশিসহ ৩২ হাজার ফলোয়ার রয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট কেবল রেইলি নয়, তার মতো এমন একাধিক লোকজন রয়েছেন, যারা নিয়মিত উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে আসছেন। তাদের আটক করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দারা।

৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে দেশ বিদেশে ধর্ম অবমাননার পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে রেইলিকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব-৪ এর এসআই রাসেল মন্ডল বাদী হয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গতকাল শুক্রবার (৬ নভেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৬। মামলাটি তদন্ত করছে দারুসসালাম থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহম্মেদ আরটিভি নিউজকে বলেন, এই মামলায় রেইলিকে আজ শনিবার (৭ নভেম্বর) ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরটিভি নিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক কুৎসা রটানোর দায়ে ইসরাত জাহান রেইলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নিজের নামে ৭টি ফেসবুক আইডি, ২টি ব্যক্তিগত ব্লগ ভিত্তিক ফেসবুক পেইজ এবং টুইটার আইডি থেকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করে আসছিলেন। তার একাধিক ফেইসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি নতুন আইডি খুলে ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত ইসরাত জাহান রেইলি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে অ্যাসাইলাম পেতে এ ধরনের উগ্র ও উস্কানিমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে আসছিলেন।

কেএফ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh