সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে ঢাকায় এসে হয়েছে ‘পথশিশু’ (ভিডিও)
অভাবের কারণেই, শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিণত হচ্ছে পথশিশুতে। যে শৈশব হওয়ার কথা ছিল আনন্দময়, এদের জন্য তা হয়ে উঠেছে ভয়ংকর। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব শিশুর শিক্ষার আগে দরকার থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা।
ছয় সন্তানের জননী হানিফার চোখে কোনো স্বপ্ন নেই। আছে কেবল বেঁচে থাকার তাগিদ। তাই গ্রাম ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় এসে ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। দু’বেলা খাবার যোগানোই তার একমাত্র সংগ্রাম।
ছয় সন্তানের জননী হানিফা বলেন, ‘আমার সন্তানদেরতো আমারই দেখা লাগবে। কার কাছে দিমু তাগোর। তারা সিগনালে ফুল বিক্রি করে, বড় দুইজন তোয়ালে বিক্রি করে।’
হানিফার দুই মেয়ে, গ্রামের মাদরাসায় পড়তো। এখন ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষা করে। তবে সুযোগ পেলে, আবারো গ্রামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
হানিফার দুই মেয়ে জানায়, ‘আমাগো গ্রামে ফিরে যাইতে ইচ্ছা করে। আবারও পড়াশোনা করতে মন চায়। আমি যখন গ্রামে ছিলাম তখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম আর আমার বোন পড়তো ক্লাস টুতে। কিন্তু ঢাকায় আসার পরে আর পড়াশোনা করা হয় নাই’।
বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে পুতুল। বড় দুই ভাই ছিল, তাদেরও কোনও হদিস নেই। পুতুলের জীবনের সঙ্গী এখন কেবল এক খালা। তার সঙ্গেই কখনো ফুটপাতে, কখনও বস্তিতে রাতে কাটে।
পড়ালেখা ভালো লাগে না বলে কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কাউকে আবার পথে এসে দাঁড় করিয়েছে, ক্ষুধা বা স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। পথের এসব শিশুর গল্পগুলো মোটামুটি এমনই।
গল্পগুলো পুরনো প্রায় সবারই জানা। ঘুরে ফিরে এসব গল্প নিয়েই পথে আসছে বেশিরভাগ শিশু। শিশুরা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে সেজন্য পরিবারগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থার কথা বললেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ।
ইউনিসেফ চাইল্ড প্রোটেকশনের অফিসার ফাতেমা খাইরুন্নাহার বলেন, শিশুদের রাস্তায় আসার কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে হবে সবার আগে। যে সকল শিশুদের বাবা মা থাকা স্বত্বেও রাস্তায় আসছে, তাদের আসার পেছনে কারণ খুঁজতে হবে। বাবা মায়ের সাথে তাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন সেই সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। যেই শিশুটা পরিবার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তাদের বের করার জন্য কোন ট্র্যোসিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই এই পরিবারগুলোকে সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে।
স্বাধীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এসব শিশুর মনস্তত্ত্ব পরিবর্তনে, দীর্ঘ সময়ের মোটিভেশন প্রয়োজন জানিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, হাল ছেড়ে না দিয়ে, লেগে থাকতে হবে। সঠিক ও সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে ঘুরে-ফিরে এমন সব গল্প নিয়েই পথে আসবে শিশুরা। নাম লেখাবে ছিন্নমূলের তালিকায়।
এসএম/এমকে
মন্তব্য করুন