• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নুরদের ‘গণ অধিকার পরিষদ’ গঠনে গণচাঁদার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

কাজী ফয়সাল

  ১৮ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২৪
Dhaka University, VP,
নুর ও রাশেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে শিগগিরই আসছে নতুন রাজনৈতিক দল 'বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ'। নতুন এই দল গঠনকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সুসংগঠিত করতে গণচাঁদা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতারা। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না অনেকেই। বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, সংগঠনের নামে সংগ্রহ করা লেনদেনে নীতিগতভাবেই স্বচ্ছতা থাকা দরকার। তাতে কেউ প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেইজে ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ বিবৃতি পোস্ট করে দেশের মানুষের কাছে সযোগিতা চেয়ে গণচাঁদার আহ্বান জানান নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁন। একই সঙ্গে তারা একটি লিফলেটও প্রচার করেন। জনগণের উদ্দেশে নুর বলেন, তারুণ্যের নতুন ধারার রাজনীতিতে আপনাদের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব মো. আরিফ হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক মহাসংকট থেকে উত্তরণের জন্য ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারে গণমানুষের অংশগ্রহণে শিগগিরই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ গঠিত হতে যাচ্ছে।

নুরের ফেসবুক পেজে প্রকাশ হওয়া ওই বিবৃতিতে দেশের মানুষের উদ্দেশে আরও বলা হয়, গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের মহৎ কাজে আপনাদের সহযোগিতা, সমর্থন ও সহমর্মিতা থাকবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের এই সংগ্রামকে আরও সুসংগঠিত করে এগিয়ে নিতে গণচাঁদা সংগ্রহের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গণচাঁদার বিষয়টি রাজনীতিতে এক সময় ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও এখন তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দলের নেতারা ব্যক্তিগত সুবিধায় কাজে লাগায় বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরগুলো ব্যক্তিগত নামে হওয়ায় তা আরও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

প্রকাশিত লিফলেটে তারা তাদের নতুন রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে ৮টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর ও নাহিদুল ইসলাম নামের একজনের বেসরকারি ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর প্রকাশ করেন। এই নাহিদুল ইসলাম বর্তমানে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ বলছেন, এটি নুর-রাশেদদের পকেট ভারী করার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। আব্দুর রহমান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ জনগণের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পেছনে অবশ্যই তাদের কোনো উদ্দেশ্য আছে। এভাবে তিনি জনগণের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না। অনেক সংগঠনই চাঁদা তুলে দল পরিচালনা করে থাকে। তবে সেখানে আর্থিক সব কার্যক্রম চলে সংগঠনের নিজস্ব একাউন্টে, ব্যক্তির নামে করা একাউন্টে নয়।

‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ এর একটি অংশ বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ। এর সদস্য সচিব মো. আরিফ হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, বিজ্ঞপ্তিটি আমাদের নেতা নুরুল হক নুর এবং রাশেদ খাঁনের ফেসবুক একাউন্ট এবং পেজ থেকে পোষ্ট করা হয়েছে। সংগঠনের ফান্ডে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে আমরা স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বা এটি এডিট করে কেউ যেনো প্রতারণা না করতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখছি। তবে এখন পর্যন্ত আমরা প্রতারণার কোনও অভিযোগ পাইনি। এছাড়াও স্বচ্ছতার স্বার্থে আমরা বিজ্ঞপ্তির নিচের দিকে আমাদের ৩ জনের মোবাইল সিম নম্বর উল্লেখ করে দিয়েছি। কেউ চাইলেই টাকা পাঠানোর আগে এবং পরে কল দিতে পারে। এভাবে এখন অনেকেই টাকা পাঠাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমরা শিগগিরই ফান্ডে জমানো টাকার পরিমাণ জানিয়ে দেবো। প্রথমে ব্যক্তিগত নম্বর না দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছিলাম সংগঠনের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। অথচ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংঠন পরিচালনার জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নেতৃত্বের থাকারাই ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরগুলো দিয়েছি। সংগঠনের নামের ব্যাংক খোলার জন্য আমরা আবারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে আমাদের বিরোধীরা এটিকে কেন্দ্র করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

সংগঠনের জন্য এমন প্রক্রিয়ায় অর্থ সংগ্রহের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাসস’র পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আরটিভি নিউজকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে একজন নাগরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার অধিকার বা সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। তবে সেই সংগঠনের সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তবে সংগঠন পরিচালনার জন্য যে ব্যয় নির্বাহ হবে, তা কিভাবে সংগ্রহ করা হবে এবং তার আয় কোথা থেকে আসবে সেগুলোর স্পষ্টার দরকার আছে। প্রতিটি সংগঠনেরই আয় ব্যায়ের হিসাব সংগঠনের পলিসি অনুযায়ী স্বচ্ছভাবে থাকতে হয়। একটি নতুন সংগঠনের জন্য যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, সেটি কিভাবে সংগ্রহ করা হবে, তারও একটি বিধিবিধান থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সংগ্রহ করলে এর স্বচ্ছতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ এখানে ব্যক্তি ওই সংগঠনে সরাসরি অর্থ প্রদানের সুযোগ পাচ্ছে না। এরমধ্যে কোনও ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে সেই সংঠনটির গ্রহণযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। অস্পষ্টতার কারণে সংগঠনটি তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারে। যে বিকাশ, রকেট এবং নগদ এর নম্বরগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি সংগঠনের নেতৃত্বের জড়িত কারো হয়, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে কোনটি কার নম্বর। এছাড়াও যে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটিও স্পষ্ট করতে হবে, ওই ব্যংক একাউন্টধারী সংগঠনের কোন পদে রয়েছেন। এছাড়াও একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর সংঠনের ফান্ডে জমা পড়া অর্থের হিসেব সকলকে জানানো উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, ফান্ডের জন্য ব্যক্তিগত নয়, সংগঠনের নামে করা একাউন্টেই অর্থ সংগ্রহ করা জরুরি। এর ফলে অর্থ প্রদানকারী কেউ প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। ওই সংগঠনে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। সংগঠনের নামে যদি কেউ একাউন্ট খুলতে বাধা দেয়, সেক্ষেত্রে সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে কে বা কারা বাধা দিয়েছে। সেটি উল্লেখ করা না হলে বুঝতে হবে এখানেও কোনও অস্পষ্টতার রহস্য লুকিয়ে আছে।

কেএফ/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজাকে বিনোদন দেওয়াই সংসদ সদস্যদের কাজ : নুর
তাদের কলিজা কাঁপে, ভয়ে রাতে ঘুম হয় না : নুর
ক্ষমা চাইলেন নুর
ভিপি নুরের আদালত অবমাননা নিয়ে শুনানি আজ
X
Fresh