• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পরিকল্পিতভাবে নিরুৎসাহী করা হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘বড় সরদার বাড়ি’ পরিদর্শন

ফারুক আলম

  ১৫ অক্টোবর ২০২০, ২০:১৮
Banladesh, National, History, Bengal,
সরদার বাড়ি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর দেখতে এসে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শানার্থী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সোনারগাঁও জাদুঘর প্রবেশমূল্য পঞ্চাশ টাকা আর ‘বড় সরদার বাড়ি’ প্রবেশ মূল্য একশ টাকা। কিন্তু সরদার বাড়ি প্রবেশ মূল্য অনেক বেশি বলে অভিযোগ অনেকের।

‘বড় সরদার বাড়িতে’ পরিকল্পিতভাবেই দর্শনার্থী প্রবেশে নিরুৎসাহী করতেই এমনটি করা হয়েছে বলে জানায় জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য পঞ্চাশ টাকা হলেও সরদার বাড়িতে প্রবেশ মূল্য একশ টাকা করা হয়েছে। দুই তলা বিশিষ্ট সরদার বাড়ির ভেতরে ঐতিহাসিক সংগৃহীত তেমন কোনও নিদর্শন নেই। ছোট ছোট কিছু কক্ষ আছে সেগুলোও ফাঁকা। বাইরে বাড়ির সামনে তলোয়ার, হাতে ঘোড়ার পিঠে দুই সৈনিকের মুর্তি। প্রাসাদের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পুকুরে শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে। সোনারগাঁও ঘুরতে এসে দর্শনার্থীদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ভিজিটর খাতায়ও লিখা আছে।

দর্শনার্থীদের মতে, সোনারগাঁও জাদুঘর এবং সরদার বাড়ি দুটো মিলে টিকেটের মূল্য ১শ’ টাকা করলে সব শ্রেণির দর্শনার্থীরা তা দেখতে পাবেন।

প্রায় ছয়শ বছরের পুরনো সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়ি। যা সরকার লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে রূপান্তরিত করে ১৯৮১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ২৭ হাজার ৪শ’ বর্গফুট আয়তনের এ বাড়িটি নিচ তলায় ৪৪৭টি এবং দ্বিতীয় তলায় ৩৮টি কক্ষ আছে। ঈশা খাঁর জমিদার বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সোনারগাঁও জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন অনেকেই। কিন্তু সরদার বাড়িতে প্রবেশ মূল্য বেশি হওয়ায় দর্শনার্থী সরদার বাড়িতে দেখতে যাচ্ছেন না। আজিমপুর থেকে আব্দুল মোল্লা পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে সোনারগাঁও জাদুঘরে ঘুরতে আসেন। দুই ঘণ্টা ঘোরাফেরার পর তার দশ বছরের ছেলে শাওন বায়না ধরে সরকার বাড়ি দেখার। কিন্তু আব্দুল মোল্লা বারবার তার ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সরদার বাড়িতে দেখার মতো কিছু নেই। এরপরও ছেলের বায়না থামে না। বাধ্য হয়ে পাঁচশ টাকা খরচ করে পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে সরদার বাড়িতে প্রবেশ করেন। সরদার বাড়ি ঘুরার পর আব্দুল মোল্লা এই প্রতিবেদককে বলেন, কিছুদিন আগেও সরদার বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ ছিল না। এখন প্রবেশের সুযোগ দিলেও প্রবেশ মূল্যের বৈষম্যের জন্য অনেকেই সেখানে যেতে পারবেন না। যার ফলে ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান দেখা থেকে বঞ্চিত হবে কোমলমতী শিশুসহ সবাই।

সোনারগাঁও জাদুঘরে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থী জাদুঘর ঘুরতে আসছেন। ঘুরতে এসে ‘বড় সরদার বাড়ি’ প্রবেশ মূল্য একশ টাকা দেখে প্রবেশ না করে মনে কষ্ট নিয়েই বাড়িতে চলে যান। অনেক দর্শনার্থী পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে বাধ্য হয়েই একশ টাকা খরচ করে পরিবারের সদস্যদের ‘বড় সরদার বাড়ি’ প্রবেশ করান। বাইরে থেকে সরদার বাড়ি সাজসজ্জা মনে হলেও প্রবেশের পর দর্শনার্থী হতাশায় পড়েন। কারণ বড় সরদার বাড়িতে ঐতিহাসিক সংগৃহীত দর্শনীয় কিছু নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ও সোনারগাঁও জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘বড় সরদার বাড়ি’ এটি ছোট একটি ভবন। যা পরিদর্শনে প্রতিজনকে একশ টাকায় টিকেট করতে হচ্ছে, এটি অনৈতিক ও দর্শনার্থীদের মনে চাপ সৃষ্টি করা। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আগামীতে যখন বোর্ডের মিটিং হবে তখন বিষয়টি নজরে নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সরদার বাড়ি প্রবেশ মূল্য একশ টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেন, বড় সরদার বাড়ি দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখানে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। ঐতিহাসিক ‘বড় সরদার বাড়ি’ যেন দীর্ঘদিন টিকে থাকে সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই প্রবেশ মূল্য বেশি করা হয়েছে। যাতে স্বল্প সংখ্যক দর্শনার্থী প্রবেশ করেন এবং ঐতিহাসিক বাড়ি টিকে থাকে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, জাদুঘরে ঘুরতে এসেছে দর্শনার্থীরা বরাবরই বলছেন ‘বড় সরদার বাড়ি’ প্রবেশ মূল্য বেশি হয়েছে। বিষয়টি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কয়েক দফায় জানানো হয়েছে কিন্তু কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা নিজেরাও জানি এই প্রবেশ মূল্য দর্শনার্থীদের সাধ্যের বাইরে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যেন দর্শনার্থী কম প্রবেশ করেন এবং দীর্ঘদিন সরকার বাড়ির ঐতিহ্য টিকে থাকে।

এফএ/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh