• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে চলছে দখলের মহোৎসব

  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:২৭
Occupy festival is going on in Kaptai lake of Rangamati
কাপ্তাই হ্রদে এভাবেই প্রতিনিয়ত চলছে অবৈধ দখল, ছবি: প্রতিনিধি

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে প্রতিনিয়তই চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে দখলের মহোৎসব চললেও বর্তমানে সরকারি অর্থায়নেও হ্রদে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনও কাপ্তাই হ্রদে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ বন্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাশাপাশি কাজও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক ভবনের। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে গত আড়াই বছরে প্রায় ৬০ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে কাপ্তাই হ্রদ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে ‘ফ্রেন্ডস ক্লাব’নামে একটি বনেদি ক্লাব। পাশে নিজেদের ভূমি থাকলেও হ্রদেই ভবন নির্মাণ করছে ক্লাবটি। এদিকে হ্রদের ভেতর নির্মাণ করা এই ভবনটি অপসারণে জাতীয় নদী কমিশন ও ভূমি অফিস থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুধু ফ্রেন্ডস ক্লাবই নয়, এভাবেই কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন জায়গায় চলছে হ্রদ দখলের মহোৎসব। শুধু এটিই নয়, জেলা পরিষদের অর্থায়নে হ্রদ দখল করে শহরে নির্মাণ হচ্ছে আরো একটি ভবন। অথচ হ্রদের ১২০ ফুটের মধ্যে স্থাপনা তৈরির কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এসব নিয়ম মানছে না কেউই। হ্রদ দখল করে একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।

এদিকে হ্রদ দখল করে ফ্রেন্ডস ক্লাবের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় নদী কমিশন। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটির পক্ষে সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. আশরাফুল হক এর পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘জরুরিভিত্তিতে রাঙামাটির ফ্রেন্ডস ক্লাব ভবন নির্মাণ বন্ধকরণ এবং অবৈধদখল উচ্ছেদ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধযোগ্য মামলা রুজুসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন সাতদিনের মধ্যে কমিশনে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জাতীয় নদী কমিশনের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্নস্থানে হ্রদ দখল করে বসতিও গড়ে উঠেছে। এমনই একটি এলাকা পৌর এলাকার শান্তিনগর। ওই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি অবৈধভাবে বসবাসের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, হেডম্যান কার্বারীর মাধ্যমে কিছু মানুষ একশোনা বন্দোবস্ত নিয়ে আছেন আবার কেউ দীর্ঘদিন ক্রয়সূত্রে বসবাস করছেন।

এদিকে শহরের হোটেল সুফিয়ার মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা হোটেল করেছি ১৯৮৪-৮৫ সালে। কিন্তু অনুমোদন নেয়ার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন আমিও অনুমোদনের জন্য আবেদন করি। আর পৌরসভা অনুমোদন দিয়েছে ৯৪ সালে। যদি আমি অবৈধভাবে হোটেল নির্মাণ করে থাকি তখন কেন আমাকে অনুমোদন দিল? শহরের প্রতিনিয়ত হ্রদ তীরবর্তী স্থান দখল করে বসতি স্থাপন হচ্ছে। সবার যা হবে আমরাও তাই হবে।

ফ্রেন্ডস ক্লাবের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা বলেন, এসিল্যান্ড থেকে চিঠি পাওয়ার পর আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এবিষয়ে আমরা ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখেছি।

কাজটির দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এরশাদুল হক বলেন, যে টাকা টেন্ডার হয়েছে তা দিয়ে ক্লাবের পুরো নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আরও বরাদ্দ প্রয়োজন হবে। এই অর্থবছরে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা দিয়ে খুব বেশি কাজ আগানো যাবে না। আবার হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজও দ্রুত করতে হয়েছে। হ্রদের ওপর নির্মিত হওয়ায় খুব একটা সমস্যা হবে না।

রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস গড়ে উঠেছে। তখন থেকে এটি বন্ধ করা গেলে আজ এই পর্যায়ে যেত না। কাপ্তাই হ্রদে তীরবর্তী স্থানে বসবাসরতদের উপশহরে স্থানান্তরের মাধ্যমে এর সমাধান করা যেতে পারে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতিমা সুলতানা বলেন, পার্বত্য এলাকায় ভূমি বিষয়ে কিছু জটিলতার কারণে জরিপ কাজ এখনও শুরু হয়নি। হ্রদ দখল করে কেউ নতুন বসতি তৈরির খবর পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করে থাকি। বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্বে থাকাকালীন নতুন করে কোনো অবৈধ স্থাপনা তৈরি হতে দেয়নি। অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে নোটিশ করলে তারা উল্টো কোর্টে মামলা করে দেয়। মামলার জটিলতার কারণে অনেক সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

তিনি আরও বলেন, এদিকে হ্রদ দখল করে ফ্রেন্ডস ক্লাবের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও কাজ বন্ধ রাখার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। তারাও তাদের জমিতে স্থাপনা করছে বলে আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছে। আমরা তাদের চিঠি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করছি।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, হ্রদ দখল করে স্থাপনার বিষয়টি আমার নজরে আসার পর এসি ল্যান্ডের মাধ্যমে তাদেরকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। ভবনটি নির্মাণে যেহেতু জেলা পরিষদ অর্থায়ন করছে, তাই তাদেরকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এছাড়া নদী কমিশনও এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা পরিষদকে।

রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে জেলা পরিষদ অর্থায়ন করে। হ্রদ দখলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। তারা যেখানে জায়গা দিয়েছে সেখানে কাজ শুরু হয়েছে।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ
ছাত্রলীগ দখলদারিত্বে বিশ্বাসী নয় : কাদের
বরগুনা প্রেস ক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে
ময়মনসিংহে বালু বিক্রিকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ, নারী নিহত
X
Fresh