• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নাগেশ্বরীতে প্রাথমিকে উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেক টাকা ঘুষ দিতে হয় কর্মকর্তাদের!

  ২৬ আগস্ট ২০২০, ১৯:৩৮
Officials have to pay half of the development allocation to Nageshwari Primary!
নাগেশ্বরীতে প্রাথমিকে উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেক টাকা ঘুষ দিতে হয় কর্মকর্তাদের!

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত এবং বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক ঘুষ দিতে হয় উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ শিক্ষক নেতাদের। অভিযোগ ওঠে ঘুষের এসব টাকা যাচ্ছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, শিক্ষক নেতার পকেটে।

আরও অভিযোগ আছে এসব টাকা ভাগ-বাটোয়ারার দায়িত্বে খোদ উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা। ঘুষের বিলিবন্টন শেষে নামমাত্র কাজ করে বাকি টাকার আরেক দফা পকেটে তোলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। ফলে বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন না হয়ে উন্নয়ন হচ্ছে এসব অসাধু ব্যক্তিদের।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য উপজেলার ৭০টি বিদ্যালয়ের জন্য ০১ লাখ ৫০ হাজার করে মোট ০১ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পিডিপি-৪ এর অধীনে ৫৬টি বিদ্যালয়ে ২ লাখ করে মোট ০১ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

এছাড়াও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ ফেরত আনা হয়। বরাদ্দের ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৩৯টি বিদ্যালয়ে এক লাখ ৫০ হাজার করে দেয়া হয়। পিইডিপি-৪ এর আওতায় ৪২টি বিদ্যালয়ের জন্য দুই লাখ করে মোট ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর সঙ্গে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্লিপ ফান্ডের জন্য ১৩৫টি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার করে মোট ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এ কয়েক ধাপের বরাদ্দের টাকা মোট চার কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ে দুই থেকে তিনটি করে প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কোথাও কাজ করা হয়নি। অথচ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা তুলে নেবার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে উপজেলার কেদার, কচাকাটা, বল্লভেরখাষ, রায়গঞ্জ, ণারায়নপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে তালা ঝুলছে। করোনার সময়কাল থেকে এসব বিদ্যালয় বন্ধ পড়ে আছে। ময়লা আর আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে বিদ্যালয়গুলো। এক বছরের মধ্যে কোনও প্রকার উন্নয়ন কাজ হয়নি এসব বিদ্যালয়ে অভিযোগ স্থানীয়দের।
কেদার ইউনিয়নের শোভারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার সবুর মিয়া, শাহালম, কাটাজেলাস সরকারি বিদ্যালয় এলাকার আবু হানিফ, বিঞ্চুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার আব্দুল বাতেন, প্রভাষক আজাদ হোসেন, ভাটিকেদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার নূরন্নবী মিয়া জানান, বিগত এক বছর থেকে বিদ্যালয়গুলোতে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। তাদের অভিযোগ এর আগে উন্নয়নের নামে যা এসেছে প্রধান শিক্ষক কমিটির লোকজন তা ভাগবাটোয়ারা করে খেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের বরাদ্দে সমস্ত টাকা ৩০ জুনের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখিয়ে ভাউচার দিয়ে ট্রেজারি থেকে তুলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার অফিসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে চলছে ঘুষের দেন দরবার। যাদের সঙ্গে দেনদরবারে বনছে তাদের টাকা এক এক করে ছাড় দিচ্ছেন। এই দেন দরবারে উঠে এসেছে ঘুষের বিবরণ।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রকৌশলী, শিক্ষক নেতাসহ অনেক ধাপে ভাগবাটোয়ারা হয় এই টাকা। খোদ শিক্ষা অফিস থেকে বলা হয়েছে বরাদ্দের অর্ধেক টাকার কাজ করে বাকি টাকা ঘুষ দিতে হবে ঘাটে ঘাটে।

এবিষয়ে শোভারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, বিল-ভাউচার সব তৈরি হয়েছে দেন দরবার চলছে। বরাদ্দের ফিফটি পার্সেন্ট টাকা বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে যাবে অফিস থেকে এমন কথা বলা হচ্ছে। তবে চাকরি আর হয়রানির ভয়ে সব কিছু খুলে বলেননি তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রত্যয়ন নিতে উপজেলা প্রকৌশলীর নামে ৭ হাজার, এস্টিমেট প্রস্তুতের নামে ৩ হাজার, বিলভাউচার তৈরির নামে ২ হাজার, উপজেলা পরিষদের নামে ২০ হাজার টাকা নিচ্ছেন উপজেলা সহকারি শিক্ষক কর্মকর্তা ইছাহাক আলী।

তিনি আরও জানান, এছাড়া শতকরা ১৫ ভাগ টাকা ঘুষ দিতে হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ইছাহাক আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে সরেজমিন কাজ দেখে প্রত্যায়ন দেয়া হয়। উৎকোচ নেবার বিষয়ে নিজের সাফাই গেয়ে বললেন বিষয়টি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারীর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত অফিস না এসেই লালমনিরহাটে নিজ বাড়িতে বসে অফিস করছেন। ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহমেদ মাছুম জানান, অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে শিক্ষাকর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে রেখেছেন। বিদ্যালয়গুলোর কাজ করার পর এসব টাকা দেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, বরাদ্দের অর্ধেক টাকা ঘুষ এবং ভাগ-বাটোয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি। কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এনএম/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পানছড়িতে উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল
X
Fresh