• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

চাকরি ছেড়ে এখন আমি নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করি: শামস চৌধুরী

  ১৯ জুলাই ২০২১, ২০:০৮
চাকরি ছেড়ে এখন আমি নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করি: শামস চৌধুরী
ছবি: ফেসবুক থেকে

বর্তমান সময়ে দেশে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শামস আফরোজ চৌধুরী। যিনি মানুষের কাছে ‘থটস অব শামস’নামে অধিক পরিচিত। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে হতাশ না হয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। ফলে তিনি সবার কাছে এখন এক জনপ্রিয় মুখ। কীভাবে তিনি কনটেন্ট নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, অন্য পেশা থাকতে তিনি কেন এ পেশায় এলেন, মাসিক কত টাকা আয় করছেন এসব নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে।

দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তার জীবনের নানান ঘটনা জানিয়েছেন আরটিভি নিউজের সহ-সম্পাদক জাহিদ হাসানকে। সাক্ষাৎকারটি আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

আরটিভি: প্রথমেই আপনার কাছে শুরুর গল্পটা জানতে চাচ্ছি। কীভাবে এই কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত হলেন?

শামস আফরোজ: ২০১৮ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন প্রাইভেট চাকরি করার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এমবিএ) অধ্যয়নরত ছিলাম। একই সঙ্গে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সব মিলিয়ে আমার উপর দিয়ে খুবই চাপ যাচ্ছিল। এত চাপের মাঝখানে থেকেও সুযোগ পেলে কনটেন্ট তৈরি করতাম। মূলত শখের বসেই আমি কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি।

আরটিভি নিউজ: কনটেন্ট তৈরির আগে আপনি কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

শামস আফরোজ: আমি একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২০ সালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেতন অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার কারণে আমাকে শিক্ষকতা পেশাটি ছাড়তে হয়েছে। এরপর আমি হাতে অনেক সময় পাওয়ার পর নিয়মিত ভিডিও বানাতে শুরু করি। ভিডিওগুলো একের পর এক ভাইরাল হতে থাকে। যদিও এর আগে আমি কনটেন্ট তৈরির কাজে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু তখন লম্বা সময় পর পর ভিডিও আপলোড করতাম। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিয়ে এটিকে নিয়মিত করি। এক সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর পাওয়া সহ আমার ফেসবুক ও ইউটিউবে মনিটাইজেশন চলে আসে। ফলে আমি নতুন চাকরির সন্ধান না করে কনটেন্ট তৈরির কাজে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যাই। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষকতা পেশায় আর ফিরবো না। কারণ কনটেন্ট তৈরি করে যে অর্থ উপার্জন হয়, তা কোনো চাকরির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব নয়। এজন্যই কনটেন্ট তৈরির কাজ করত চাই।

আরটিভি নিউজ: আপনার কনটেন্ট তৈরির মূল উদ্দেশ্য কি? মানুষকে আপনি এই ভিডিও’র মাধ্যমে কী বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন?

শামস আফরোজ: আমি আমার কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীরা পারিবারিক সম্পর্ক থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এছাড়া একটি পরিবারে একজন ছেলেকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় মেয়েকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমি আমার ভিডিও বার্তায় সেই বিয়ষগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। যেন পরিবারে ছেলে-মেয়েদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে যেন কোনো বৈষম্য তৈরি করা না হয়।

আরটিভি নিউজ: নতুন যারা কনটেন্ট ক্রিয়েটর আছে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী, কীভাবে তারা আপনার সহযোগিতা পেতে পারে?

শামস আফরোজ: প্রথমত যারা কনটেন্ট তৈরির কাজে যুক্ত হচ্ছেন তারা যেন শুরুতেই নিজের যোগ্যতাকে বিবেচনায় নেন। কারণ কনটেন্ট তৈরির কাজটি অনেক সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। মানুষ এটাকে যত সহজ হিসেবে দেখে আসলে এটা তত সহজ কাজ নয়। এছাড়া এ মার্কেটে টিকে থাকার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের মধ্যে সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়, কিন্তু দেখা যায় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা অনেকের থাকে না। তারপরও সে সময় নষ্ট করে ক্যাডার হওয়ার পেছনে দৌড়াতে থাকে। ঠিক কনটেন্ট তৈরির বিষয়টিও একই রকম। কনটেন্টে নতুনত্ব কিছু না থাকলে সে এই মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না। অনেকেই আমার কনটেন্ট হুবহু নকল করে। আমি তাদের অনুরোধ করব, আমাকে হুবহু নকল না করে, আমার কনটেন্ট থেকে আইডিয়া নিয়ে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করুন। তাহলে যারা নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আছেন তারা ভালো কিছু করতে পারবেন।

আরটিভি নিউজ: এই কনটেন্ট তৈরি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত কোনো পরিকল্পনা আছে কি? নাকি শুধু মজার ছলে আপনি ভিডিও বানাচ্ছেন?

শামস আফরোজ: অনেকে নাটক-সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ইউটিউবে কনটেন্ট ক্রিয়েট করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে আমি নাটক ও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছি না। যদিও ২০২০ সালের দিকে নাটকে অভিনয় করার জন্য অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু আমি তা গ্রহণ করিনি। এছাড়া টেলিভিশনে প্রচারিত বাণিজ্যিক কোনো বিজ্ঞাপনেও আমাকে দেখা যাবে না। আমি শুধু আমার চ্যানেল ‘থটস অব শামস’ (Thoughts of Shams) নিয়েই থাকতে চাই।

আরটিভি নিউজ: অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে দেখেছি এই মার্কেট থেকে হারিয়ে যেতে, আপনিও তো হারিয়ে যেতে পারেন, হারিয়ে না যাওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

শামস আফরোজ: মার্কেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড না করা। অনেকে আছেন একটি ভিডিও আপলোড করার পর আর কোনো ভিডিও দিচ্ছেন না। এজন্য অডিয়েন্স (দর্শক) ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড করতে হবে। অনেক সময় দেখা যাবে কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে গিয়ে কোনোটা খুব ভালো হয়েছে, আবার কোনোটা খারাপ হয়েছে। যাই হোক না কেন অডিয়েন্স (দর্শক) ধরে রাখার জন্য প্রতিমাসে তিন থেকে চারটা ভিডিও আপলোড করে যেতে হবে। আমি সব সময়ই সর্বোচ্চ ভালোটা দেওয়ার চেষ্টা করি।

আরটিভি নিউজ: অনেক সময় আপনার অনেক ফলোয়ারকে কমেন্ট করতে দেখি আপনার মাসিক আয় কত, আপনি কত টাকা মাসিক আয় করে থাকেন?

শামস আফরোজ: কনটেন্ট ক্রিয়েট করে যারা পরিচিতি লাভ করেছেন, এদের মাসিক আয় অনেক টাকা। কেউ আছে মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। কারণ এখানে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে অ্যাডসেন্স থেকে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া স্পন্সর থেকে বিশাল একটা অর্থ আয় হয়। তবে আমি সব মিলিয়ে মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করে থাকি।

বিভিন্ন চরিত্রে শামস

আরটিভি নিউজ: এই পর্যন্ত পৌঁছাতে আপনি কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

শামস আফরোজ: কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে গিয়ে আমাকে তেমন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমার ফ্যান-ফলোয়ারসরা আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। কারণ তারা সব সময়ই পজেটিভ (ইতিবাচক) কমেন্ট করেছে। তেমন একটা খারাপ কমেন্ট আসেনি। এছাড়া আমার মা ও স্বামী আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন। সব মিলিয়ে পরিবারের বিশাল একটা সহযোগিতা পাওয়ায় আমাকে তেমন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি।

আরটিভি নিউজ: কনটেন্ট ক্রিয়েটের ক্ষেত্রে কেউ কি আপনাকে নির্দেশনা দেয়? নাকি আপনি নিজেই এগুলো ঠিক করে নেন। ক্যামেরার পিছনের ব্যক্তিটিই বা কে?

শামস আফরোজ: ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে আমার মা গুরুদায়িত্ব পালন করেন। যখন আমি ভিডিও তৈরি করি তখন আমার মা দেখে থাকেন। তার চোখে কোনো চরিত্র অসঙ্গিত মনে হলে তিনি সেটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে করার নির্দেশনা দেন এবং ভিডিও এডিট করার পর প্রথমেই আমি মাকে দেখাই। তার চোখে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে আমি তা সংশোধন করে নিই। এছাড়া স্ক্রিপ্ট লেখা, ভিডিও এডিটিং এবং ভিডিওচিত্র ধারণ সব কিছুই আমি একা করে থাকি।

আরটিভি নিউজ: ‘থটস অব শামস’এই নামটি আপনি কেন নির্বাচন করেছেন, বর্তমানে বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

শামস আফরোজ: এক সময় আমি ফেসবুকে প্রচুর লেখালিখি করেছি। সেই লেখা থেকেই আমি ভিডিও বানানো শুরু করি। মূলত আমি যা চিন্তা করছি সেটাই মানুষকে জানাচ্ছি। এই চিন্তার জায়গা থেকেই থটস অব শামস নামটি নির্বাচন করা। আর এখন আমি মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করায় শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। যারা কখনও যোগাযোগ করেনি, তারাও এখন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

আরটিভি: আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ

শামস আফরোজ: আরটিভিকেও ধন্যবাদ

জেএইচ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • সোশ্যাল মিডিয়া এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh