• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
গরমে স্বস্তি পেতে কাঁচা আমের ললি
তীব্র গরমের মধ্যেই এবার রোজা। তাই দিন শেষে ইফতারের পর খাওয়ার জন্য অথবা প্রচন্ড গরমে আরামের জন্য বানিয়ে ফেলতে পারেন কাঁচা অমের ললি আইসক্রিম। টক-মিষ্টি এই আইসক্রিম স্বাদে হবে অনন্য আর পুষ্টিতে হবে সেরা। খুব সহজে কাঁচা আম দিয়ে বানিয়ে ফেলা যায় এই আইসক্রিম।  কাঁচা আমে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সাহায্য করে, ফলে হাড় হয় শক্তিশালী। তাছাড়া ভিটামিন সি শরীরকে ইনফ্লামেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে, নতুন রক্ত কণিকা সৃষ্টিতে সাহায্য করে, আয়রনের শোষণে এবং রক্তপাতের প্রবণতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।  চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বানাবেন এই ললি আইসক্রিম- যা যা লাগবে- কাঁচা আম- ১টা চিনি- আধা কাপ ব্ল্যাক সল্ট- ১ চা চামচ পানি- ৮ কাপ পুদিনা পাতা- আধা কাপ সবুজ ফুড কালার যেভাবে বানাবেন- প্রথমে একটি কাঁচা আম ছোট টুকরা করে কেটে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর ৪ কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে চুলায় অল্প আঁচে বসিয়ে দিন। এখন আমের রং স্বচ্ছ না হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে থাকুন। এরপর সেদ্ধ আমসহ পানি নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। তারপর পানিসহ আম ব্লেন্ডারে দিয়ে দিন। এখন যোগ করুন আধা কাপ পুদিনা পাতা, আধা কাপ চিনি, ১ চা চামচ ব্ল্যাক সল্ট। এবার মিশ্রণের সব উপকরণ দিয়ে মিহি ব্লেন্ড করে নিন।  সবশেষে আইসক্রিমের সুন্দর রঙের জন্য মেশান সবুজ ফুড কালার। মিশ্রণটি আইসক্রিম বসানোর ছাঁচে ঢেলে নিন। সারারাত রেখে পরদিন পরিবেশন করুন।
১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৪

জনজীবনে স্বস্তি নিয়ে হঠাৎ বৃষ্টি, ঝরবে আরও যতদিন
বাড়তে থাকা তাপমাত্রায় দুঃসহনীয় গরমে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বৃষ্টি। তবে, আগামী পাঁচ দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যেও স্বস্তির বার্তা পাওয়া গেছে আগামী ৭২ ঘণ্টার (তিন দিন) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে আগামী তিন দিন।  এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়ায়। সেইসঙ্গে ফেনীতে ২৮, মাদারীপুরে ২২, চাঁদপুরে ১৩, মাইজদীকোর্টে ১১ মিলিমিটার ছাড়াও ঢাকায় ৫, সন্দ্বীপে ৪, চট্টগ্রামে ২ ও সিলেটে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, আজ সন্ধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময় সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামীকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে এই সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরদিন শনিবার একই সময় পর্যন্ত খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আর এই সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে, রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এই সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আগামী ৫ দিনের প্রথমার্ধে দিনের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১৫ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৪

বেড়েছে ডিমের দাম, স্বস্তি নেই পেঁয়াজে
রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নতুন করে বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমছে না। এখনও অনেক পাড়া-মহল্লায় মুড়িকাটার কেজি ১শ’ টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৮০ টাকার আশপাশে। তবে সুযোগ পেলে বাড়তি দাম রাখতেও পিছপা হচ্ছেন না অনেক পাইকার। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকায়। সাদা রঙের ডিমের দাম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন। গত সপ্তাহের তুলনায় বাদামি ডিমের দাম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সাদা রঙের ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে মানভেদে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা তানভীর হাসান বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিম কম আসছে। ফলে ডিমের দাম বেড়েছে। মহাখালী কাঁচাবাজারের পাইকারি ও খুচরা ডিম বিক্রেতা মো. রাজিব মিয়া রাজু বলেন, বাজারে এখন ডিমের সরবরাহ খুব কম। এতে এক সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে কমেছে মুরগির দাম। ব্রয়লার ও সোনালি উভয় মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৯০ থেকে ২০০। আর গত সপ্তাহে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজির সোনালি মুরগির দাম এই সপ্তাহে নেমে এসেছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের দাম চাওয়া হয়েছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রায় অপরিবর্তিত আছে মাছের দাম। মাঝারি আকারের চাষের রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং আকারভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে নতুন রসুনের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে পুরনো দেশি রসুন কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে দেশি নতুন রসুন কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা ও খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, কিছুদিন আগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ ঠিকমতো তুলছিলেন না। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়। মূলত এ কারণেই দাম বেড়েছে। বাড়তি দামের আশায় কৃষকরা এখন আবার পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছেন। এতে দাম কিছুটা কমতির দিকে। সাধারণত বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেই দাম কম থাকে। মো. আব্দুল মাজেদ আরও বলেন, ভারতে এখন পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা। এখন আমদানি করা গেলে দেশের বাজারে ভোক্তারা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারত। দেশে যেহেতু চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে, তাই এখন থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। তাহলে বাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে। বাড্ডার একজন মুরগি বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি করা হয়।’ রামপুরা কাঁচাবাজারের জিহাদ ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা মো. বায়েজিদ বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম না বাড়লেও কমেনি। আগের বাড়তি দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, বাজারে এখনও সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও সব ধরনের শাক-সবজির দাম চড়া। রাজধানীর খুচরা বাজারে ভালো মানের বেগুন ৮০ টাকা কেজির নিচে কেনা যাচ্ছে না। মুলা ও পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, শিম মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, লম্বা লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও আলু কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। রাজধানীর শাহজাহানপুর বাজারে একজন ক্রেতা বলেন, অন্যান্য বছর শীতের সবজি দরদাম করে কেনা লাগত না। এবার তা করতে হচ্ছে।  
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫৫

বেড়েছে রোজার পণ্যের দাম, স্বস্তি নেই বাজারে
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ১৩ ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রোজা আসতে এখনও বাকি দেড় মাসের বেশি সময়। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাড়তে শুরু করেছে ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, চিনির দাম। হঠাৎ করেই ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়ছে। বেড়েছে গরুর মাংসের দাম।  চালের বাজারে সরকারি অভিযান, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, সবজির মৌসুমি সরবরাহ—প্রত্যাশা করা হয়েছিল, এসব কারণে বাজারে স্বস্তি আসবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না।  এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। এমন পরিস্থিতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদেক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ ক্রেতাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য যাদের নিয়মিত বাজারে যেতে হয় সেসব ক্রেতারা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরোনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাতে রমজানে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না। মালিবাগ বাজারে কথা হয় খালিদ হোসেন নামের এক ক্রেতা খালিদ বলেন, রমজানের সময় প্রশাসনের তোড়জোড় বেশি থাকে বাজারে। সেজন্য এরা (ব্যবসায়ীরা) এখন বাড়িয়ে রাখছেন, যেন ওই সময় আর না বাড়াতে হয়। তাতে এখনো লাভ, তখনো লাভ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাজিদুল আলম বলেন, বাজারে এখন কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে, দাম বাড়াচ্ছে। আর এতে কষ্ট পাচ্ছে কেবল আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বাজারঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম ৫৬ খেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা,  চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পেঁপে, মুলা ছাড়া অন্যান্য সবজি ৮০ টাকার ওপরেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং আদা ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ এখনো বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতবছর প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও একই দাম দেখা গেছে। ওই ছোলা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। একইভাবে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে অ্যাংকর ডালের দামও বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা বেশি। বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি। এ ছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা এ যাবৎকালের সবোর্চ্চ। রামপুরা বাজারের মুদি দোকানি জাহেদুল বলেন, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডালের মূল্য মোকাম পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। একেক পণ্যের দাম একেক অজুহাতে বেড়েছে। কিন্তু কোনোকিছুর দাম কমেনি। এদেশে আর কিছু কমে না, শুধু বাড়ে। এদিকে, কিছুদিন দাম একটু কমলেও ফের বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, হঠাৎ দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করলে কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। সারা দেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৬

দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি ফেরানো সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। এ সময়ে মানুষের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে স্বস্তি ফেরানোটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, অভ্যন্তরীণ সংকট কাটাতে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে অস্থিরতা থাকলে বাইরের সংকট কাটবে না। আর বাইরের সংকট না কাটলে ডলার সংকট কাটবে না। ডলার সংকট না কাটলে দেশি, বিদেশি কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে যাবে। ফলে আমাদের নিজেদের আগে ঠিক হতে হবে। সরকারের উচিত হবে এই ধরনের অস্থিরতা নিরসনে মনোযোগ দেওয়া। নির্বাচনের পর ভারত, চীন ও রাশিয়া সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি দাবি করে বিবৃতি দিলেও নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের কথা বলেছেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতও একই ধরনের আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর ফলে কূটনৈতিক সংকট কিছুটা হলেও কমে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করেন তারা। অর্থনৈতিক সংকটকে এত বড় করে দেখার কারণ জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত দুই বছর ধরে আমাদের অর্থনীতিটা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। মূল্যস্ফীতি কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। ডলার সংকট কিছুতেই কাটছে না। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সবখানেই এর প্রভাব পড়ছে। আর অর্থনীতি ভালো না থাকলে কোনো কিছুই ভালো থাকবে না। এইসব কারণে অর্থনীতিকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশের মানুষের অসন্তুষ্টি অনেক দিনের। যত দিন যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। আসন্ন রোজায় তিনি এর প্রভাব দেখতে চেয়েছেন। নির্বাচনের পরপরই চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় মিল মালিক ও কর্পোরেট কোম্পানিকে দায়ী করে আমদানির সুযোগ চেয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।  তাদের বক্তব্য শুনে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, সরকার বড় কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিয়েছিল কম দামে চাল প্রাপ্তির আশায়। কিন্তু এর সুফল মেলেনি। তারা সত্যিকারের ব্যবসায়িক আচরণ না করলে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর এই মত বিনিময়ের আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, দ্রব্যমূল্যটাই মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সামনে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সেগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে। বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলো যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই উদ্যোগ নিতে হবে নতুন সরকারকে। আমি মনে করি, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে অনেক কথা আছে। এই সেক্টরকে সঠিক পথে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এটা যদি করা যায়, তাহলে একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। যদিও কাজটা কঠিন। পাশাপাশি টাকা পাচার হয়েছে বলে আলোচনা হয়। এখানেও মনোযোগ দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই বলছেন, ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের পথে। টাকা পাচারের কারণে এখন অনেকগুলো ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। তারল্য সংকটে ভুগছে অনেক ব্যাংক। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতি নিয়ে মূলত উদ্বেগের প্রধান কারণ ছিল আমাদের রিজার্ভ এমনভাবে কমছিল, তাতে শঙ্কা জাগাটা স্বাভাবিক ছিল। আগে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলেছিলেন, নির্বাচন পর্যন্ত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকলে সংকট উত্তরণ সম্ভব হবে। রিজার্ভ তো এখন সেই পর্যায়েই আছে, তাহলে সমস্যা কী? জবাবে তিনি বলেন, এটা ভালো ইন্ডিকেটর। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ডলার সংকট না কাটলে জিনিসপত্রের দামও কমবে না। তবে এই কাটাতে কারো উপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। নিজেদের উপর আস্থা রাখতে হবে। নিজেদেরই সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, গার্মেন্টস সেক্টরে মাঝে মধ্যে যে অস্থিরতা দেখা যায়, সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখাও সরকারের আরেকটা চ্যালেঞ্জ হবে। তবে এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজনীতি। রাজনীতি ঠিক হলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। সেটা অর্থনীতি বলেন আর শ্রমনীতি বলেন। বিদেশিরা কী বলছে, সেটা নয়, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতিটা ঠিক করা প্রয়োজন।
২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:১৯

রেমিট্যান্সে সুবাতাস, অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরার আশা
একদিনে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই সূচকে সুখবর এসেছে। সূচক দুটি হচ্ছে—বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৮১ লাখ (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার সকালে রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। বিকেলে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। আর এই দুই সূচকে ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ আরও খানিকটা বেড়েছে। মঙ্গলবার দিন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক রিজার্ভের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের জোগান বেড়েছে; সংকট কেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ডলারের দর ১ টাকা কমেছে।’ সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে মনে করেন মেজবাউল হক। রেমিট্যান্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৯৮ কোটি ৯৯ লাখ (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের জুনে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিট্যান্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিট্যান্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর পর থেকে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। দুই বছর পর গত বছরের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স—সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। ২৯ নভেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানো হয়। দুই সপ্তাহ পর ১৩ ডিসেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানোর ঘোষণা দেয় বাফেদা ও এবিবি। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর ১ টাকা কমানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনছে ব্যাংকগুলো। আর আমদানি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সরকার রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। রপ্তানি আয় নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। অনেক দিন পর এক মাসে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩১ কোটি (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বর মাসে আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম আয় দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি কমার কারণ ওই বছরের ডিসেম্বরে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি (২৭.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। মোট আয়ের ৮৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।’ ‘এ অবস্থায় ডিসেম্বরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আমাদের আশান্বিত করেছে। প্রতি বছরই ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বাড়ে। এবারও তার ব্যতয় হয়নি। তবে আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না—চিন্তায় আছি আমরা।’ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।
০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৪
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়