• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo
রোজা রেখে যেসব কাজ করা সুন্নত
ইবাদতের সবচেয়ে বড় মৌসুম হলো রমজান। এ মাসে প্রতিটি আমলের প্রতিদান যেমন হাজার গুণ বেড়ে যায়, তেমনি একজন মুমিনের জন্য সব পাপ থেকে বেঁচে নিজেকে একজন মুত্তাকি হিসাবে গড়ে তোলারও সুবর্ণ সুযোগ হয়। এ মাসের রোজার অন্যতম ফজিলত হলো আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর প্রতিদান দেবেন। রোজার মাসে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামিদের মুক্ত করে জান্নাতে প্রবেশ করান। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে দেন। (মুসানদে আহমাদ, হাদিস, ২১৬৯৮) রমজানের ফরজ ইবাদত রোজার পূর্ণতার জন্য বেশকিছু সুন্নত আমল রোজাদারের জন্য জরুরি। এখানে এমন কিছু সুন্নত আমলের বিবরণ তুলে ধরা হলো— রোজা রেখে অন্যের সঙ্গে ভালো ও উত্তম আচরণ করা উচিত। রোজাদারের পক্ষ থেকে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ কখনো কাম্য নয়। উল্টো যদি কেউ রোজাদারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বা গালি দেয় কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসে তাহলে রোজাদাররা তার দুর্ব্যবহারের প্রতি-জবাবে ভাল ব্যবহার করবেন এবং বলবেন। ‘আমি রোজাদার’।  এক হাদিসে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ। অতএব, কেউ যেন মন্দ কথা না বলে, মূর্খ আচরণ না করে। যদি কোনো লোক তার সঙ্গে ঝগড়া করে কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। (বুখারি, মুসলিম) সেহরি খাওয়া রোজাদারের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত। হজরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও; কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারি, হাদিস, ১৯২৩ মুসলিম, হাদিস, ১০৯৫) বিলম্বে সেহরি খাওয়া বিলম্বে সেহরি খাওয়া সুন্নত। হজরত আনাস রা. যায়েদ বিন সাবেত রা. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহরি খেলাম। এরপর তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। আমি বললাম, আযান ও সেহরির মাঝে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সমান সময়। (বুখারি, হাদিস, ৯২১) তাড়াতাড়ি ইফতার করা সময় হয়ে যাওয়ার পর দ্রুত ইফতার করা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণে থাকবে, যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করে। (বুখারি, হাদিস, ১৯৫৭, মুসলিম, হাদিস, ১০৯৮) কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি কাঁচা খেজুর না পাওয়া যায় তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকে তাহলে পানি দিয়ে।  হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ২৩৫৬, সুনানে তিরমিজি, হাদিস, ৬৯৬) ইফতারের দোয়া পড়া ইফতার শুরুর আগে হাদিসে বর্ণিত ইফতারের দোয়া পড়া সুন্নত। ইফতারের সময় এ দোয়াটি পড়া যেতে পারে— بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিজের মাধ্যমে ইফতার করেছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮) তারাবি পড়া রোজাদারের জন্য তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস, ১৮৭৯) দান-সদকা করা রোজা রেখে বেশি বেশি দান-সদকা করা সুন্নত। কার, রাসূল সা. রমজানে অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি দান করতেন।
২৫ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৩

রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত কী?
রোজার আভিধানিক অর্থ সিয়াম। এটি ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক বা ভোরের সূক্ষ্ম আলো থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে সমহিমায় হাজির হয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়। এই মাস কল্যাণময় মাস। এ মাসে পবিত্র আল-কোরআন নাজিল হয়েছিল। এ মাস তাকওয়া ও সংযম প্রশিক্ষণের মাস। এ মাস সবরের মাস। এ মাস জীবনকে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়। কোরআনে আছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন। এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে-কেউ এ-মাস পাবে, সে যেন এ-মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে রোগী বা মুসাফির তাকে অন্য দিনে এ-সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পার ও তোমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে পার, আর তোমরা কৃতজ্ঞ হলেও হতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি বিশেষ তোরণ আছে। এ তোরণ দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। তাঁদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে, তাঁরা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ রমজান মাসে বিশেষ ফরজ হলো  ১ মাস রোজা পালন করা। স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, সাবালক, রোজা পালনে সক্ষম এমন সব বিশ্বাসী মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ। ঋতুমতী নারী, প্রসূতি মা (স্রাব চলাকালীন) এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি, যিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা নেই, তাঁরা প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ফিদিয়া গরিব-মিসকিনকে প্রদান করবেন এ মাসে ফরজে কিফায়া দুটি- ১.শাবানের চাঁদের হিসাব রাখা, ২.রমজানের তারিখের হিসাব রাখা। রমজান মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব দুটি- ১.সদকাতুল ফিতর প্রদান করা, ২. ঈদের জামাতে শামিল হওয়া। রমজানের সুন্নত : রজব ও শাবান মাসে বরকতের জন্য এবং রমজান মাস প্রাপ্তির দোয়া করা; রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও বেশি পরিমাণে নফল রোজা পালন করা ও নফল নামাজ আদায় করা। রমজান মাসে প্রতি রাতে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া এবং তারাবি নামাজে খতমে কোরআন বা পূর্ণ কোরআন করিম পড়ার বা শোনার ব্যবস্থা করা। রোজার জন্য সাহ্‌রি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা এবং ইফতার করানো। অত্যধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করা; জাকাত প্রদান করা। কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করা। রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা (সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া); রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করা।
১৫ মার্চ ২০২৪, ২২:১৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়