• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo
সাবধান চোর ভাই, বাজারে আসছে ‘গণধোলাই’
বাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও বিরক্ত। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। না করে উপায় কী? প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় বাজারের যেসব অদ্ভুত চিত্র আসছে, তাতে কারোরই প্রতিক্রিয়াহীন থাকার সুযোগ নেই। আর তিনি তো প্রধানমন্ত্রী। দেশের অভিভাবক। তিনি নিশ্চয়ই জানেন, দেশের প্রতিটি মানুষ বাজার চিত্র বোঝে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে। কারণ, সরকার দাম ঘোষণা করে দিচ্ছে কোন পণ্যের। কিন্তু বাজারে গিয়ে সেই দামের সঙ্গে পণ্যেরে দামের কোন মিল পায় না মানুষ। বিক্রেতার কাছে ক্রেতা হয়তো বলেছে সরকারি দামের কথা। কিন্তু আমি নিজে বিক্রেতাকে বলতে শুনেছি সরকারের কাছে গিয়ে কেনেন প্রতিদিন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা কখনও কখনও হাতাহাতি পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এই তথ্য নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর অজানা নয়।  আমি দু-একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেন বেশি দামে কিনতে হয়। বেশি দামে বিক্রি না করে উপায় কী? সব পণ্যের দামেরই একই অবস্থা। ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে মাংস পর্যন্ত। অথচ সরকার বলছে, প্রতিটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স আছে। যদিও অতীতেও সবসময় এসব ছিল। কিন্ত বাজারের স্বেচ্ছাচার যায়নি। তাই কোন সন্দেহ নেই আমাদের সবচেয়ে বড় অস্বস্তির নাম বাজার। খোদ প্রধানমন্ত্রীই এই অস্বস্তির উদাহরণ দেন। বলেন, ‘একবার পেঁয়াজের খুব অভাব দেখা দিল। পরে দেখা গেলো, বস্তার পর বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এদের কী করা উচিত, আপনারাই বলুন। তাদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। পণ্য লুকিয়ে রেখে পঁচিয়ে ফেলে দেবে, আরেক দিক দিয়ে দাম বাড়াবে।’ তিনি নিশ্চয়ই এও জানেন জানেন যে, বাজারে কোন পণ্যের দাম সরকার যদি কমায়, বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে অন্তত তিন মাস। আর দাম বাড়ার সময় সরকারের ঘোষণা আসার আগেই দাম বেড়ে যায়। এর জন্যে খুচরা বিক্রেতা দোষ দেন পাইকারি বিক্রেতাকে, আর পাইকারি বিক্রেতা দোষ দেন খুচরা বিক্রেতাকে। আর ক্রেতা দোষ দেন সরকারের। বাজার থেকে বাসায় ফেরেন শাপ-শাপন্ত করতে করতে। আসলে দোষ কার? কৃষক কী অস্বাভাবিক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারেন? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, আসলে কৃষকের পণ্য মজুদ করে করে রাখার সুযোগ নেই। কারণ তার ওপর বীজ, সার, পানি বিক্রেতার চাপ থাকে। তিনি ফসল ঘরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। কোন কোন কৃষকের ফসল ক্ষেতে থাকতেই কিনে নেয় ফড়িয়া। আসলে মজুদটা হয় ফড়িয়ার ঘরে। বাজার কারসাজি করলে ফড়িয়া করে। মোদ্দা কথা বাজার থেকে পণ্যের উৎপাদকও স্বস্তি পান না, ক্রেতাও স্বস্তি পান না।  উৎপাদক এবং ভোক্তার অস্বস্তির বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিস্কার। তিনি বললেন, “দরকার দাম বাড়ালে ভোক্তার ক্ষতি আর দাম কমালে কৃষকের ক্ষতি” আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের হাতে থাকলে কারোরই ক্ষতি নয়। কারণ আমজনতার সবাই ক্রেতা অথবা বিক্রেতা। মাছ ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করে সবজির ওয়ালার কাছে যান। সবজি ব্যবসায়ী যান একটু আগে তার দোকান থেকে ঘুরে যাওয়া চাল ব্যবসায়ীর কাছে। সমস্যাটা করে তারা যাদের আম জনতার কাছে যাওয়ার দরকার নেই। অর্থাৎ যে শ্রেণি উৎপাদকও নয় আবার প্রকৃত ভোক্তাও নয়। কেউ কেউ তাদের বলে মধ্যস্বত্বভোগী।  আমার হিসাবে এদের শুধু মধ্যস্বত্বভোগী বললে দোষী সবাইকে চিহ্নিত করা হবে না। কারণ আমাদের বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগী হওয়াটা দোষের নয়। সৎ ভাবেও মধ্যসত্ব ভোগ করা যেতে পারে। আসলে এই দায়টা যাদের তারা আসলে এক শ্রেণির অসৎ মধ্যসত্বভোগী। যে কারণে এদের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। কিন্তু এদের টাকা আছে পেশিশক্তিও আছে। এরাই আসলে কৌশলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না কেন? এই সহজ কিন্তু দামী কেনর উত্তর কিছু দিন আগ পর্যন্ত মন্ত্রীরা দিতেন। এখন খোদ প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন। গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন লেখে। এই লেখায় আমি আর সেই বিস্তারে গেলাম না। মোদ্দা কথা যারাই বাজার অস্থির করুক না কেন , তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। সে সরকারের সঙ্গে থাক বা বিরোধী দলে থাক সেটা তার কৌশল। তার মুল লক্ষ্য বাজার থেকে মুহূর্তেই টাকা তুলে নেয়া।       মুহূর্তেই যারা বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে চায়, তারা বাজার অস্থির করার সুযোগ খোঁজে। রোজার মাস তেমনই সময়। প্রতিবছর এই সময় বাজোরের অস্থিরতার চূড়ান্ত হয়। একেবারে প্রকাশ্যে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম নিয়ে কারসাজি হয়। কারও কিছু বলার থাকে না। কারসাজিটা শুরু হয় সরবরাহ দিয়ে। বছরের অন্যান্য সময় টের পাওয়া না গেলেও এই সময়ই বোঝা যায় বাজার অস্থিরতার মূল সূত্র পণ্যের সরবরাহ লাইনে। এই লাইনেই সারা বছর ঘাপটি মেরে বসে থাকে ওই দুর্বৃত্ত মধ্যসত্বভোগী। এখানে আবারও একটি কথা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে সরবরাহ লাইনের সবাই দুর্বৃত্ত নয়। কিন্তু দুর্বৃত্তরা শক্তিশালী। যে কারণে চাইলেও অনেকে সৎ থাকতে পারেন না। কিছু দিন আগে একজন মাংস বিক্রেতা সরকারি দামে মাংস বিক্রি করতে চেয়ে জীবন দেয়াটা এর উদাহরণ।  গত সংসদের একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলে ফেলেছিলেন সে কথা। এবারও বলা শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রমজান সামনে রেখে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই, বাজারে কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অবৈধভাবে নিত্যপণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে, এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই। অবৈধভাবে যারা নিত্যপণ্য মজুত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নিরাপত্তা বাহিনী সেই অনুযায়ী কাজ করছে। আর সব শেষ বললেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রমজানে কোনো জিনিসের অভাব হবে না। সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে” বলতে দ্বীধা নেই বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতীতের যেকোন সময়ের সরকার এখন তৎপর মনে হচ্ছে। সেই নির্বাচনী ইশতেহার থেকে সবখানেই এই তৎপরতার ছাপ দেখা যাচ্ছে। এখন দরকার ঠিকঠাক মনিটরিং। সেটা যে নেই তাও বলা যাবে না। কিন্তু সেটা ঠিকঠাক হওয়া দরকার। ঠিকঠাক শব্দটি ব্যবহার করলাম কারণ, প্রতিবার বাজার মনিটরিং এর উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রত্যেক বাজারে একটি পণ্যের দাম ঝোলানো বোর্ড রাখা হয়। সপ্তাহ খানেক সজিবও থাকে এই ব্যবস্থা। কিন্তু এর পরপরই সব কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। মনিটরিং এর কাজটি ঠিকঠাক হয় না।  কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এবার বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে। কারণ খোদ প্রধানমন্ত্রী এবার বাজার কারসাজিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গণধোলাই এর কথা বলে তিনি সাধারণ ক্রেতাদেরও সতর্ক হতে বলেছেন। এখন দরকার মানুষের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা। আজকের অনলাইনের যুগে যেকোন মানুষ তার পরিচয় নিশ্চিত করে একটি বাজারের যেকোন অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। চাইলে তিনি ছবিও যুক্ত করতে পারেন এই অভিযোগের সঙ্গে। এর পর ঘোষণা অনুযায়ী প্রকাশ্যে শাস্তি শুরু হলে, জানা যাবে কে কেন বাজার অস্থির করতে চায়। সবচয়ে বড় কথা এতে বাজারে স্বস্তি ফিরবে।  লেখক : গণমাধ্যম কর্মী
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৬
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়