• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীরা যা খাবেন
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। খাবার খাওয়া ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে সুগার ফল করতে পারে। আবার ইফতারের পর অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রমজানে কী খাবেন, আর কী খাবেন না, তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এ রোগের সঙ্গে যদি আরও কোনো জটিলতা থাকে তাহলে শারীরিক অবস্থা বুঝে পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করা জরুরি। রমজানে সঠিক খাবার ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন, পুষ্টিবিদ, ঠাকুরগাঁও ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে প্রথমত, ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখতে হলে তার তিন মাসে আগে থেকে সুগার কন্ট্রোল থাকা উচিত। নইলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাদের সুগার কন্ট্রোল থাকে তারা নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারবেন। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে ছয় বেলা খাবার গ্রহণ করতে বলা থাকলেও রমজানে খাওয়ার সময় পাওয়া যাবে তিন বেলা। তাই এখানে একটি বেলার খাবার বেশি খাবেন আর একটি বেলার খাবার খাবেন না রমজানে তা ভুলেও করা যাবে না। এতে সুগার লেবেল ইমব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে। এ জন্য প্রতি বেলার খাবার সময়মতো অল্প অল্প করে খেতে হবে। সাধারণত সারা দিন রোজা রাখার পর শরীরে পানিশূন্যতা থাকে বেশি। এ জন্য একেবারে বেশি পরিমাণে পানি পান করা যাবে না, বিশেষ করে শরবতজাতীয় ঘন পানীয়। এটি শরীরে শোষিত হতে বেশি সময় লাগে যা হজমে বিঘ্ন ঘটায়। এ জন্য পাতলা করে শরবত খেতে হবে। এ ছাড়া ইফতারে পানিশূন্যতা এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসির শরবত, তোকমা, টক দইয়ের লাচ্ছি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত, কাঁচা আমের জুস ইত্যাদি। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তারা প্রথমে টকজাতীয় শরবত না খেয়ে সবজির স্যুপ বা সবজির জুস করে খেতে পারেন। এ ছাড়া ইফতারের খাবার হতে হবে সকালের নাশতার সমান, যা সারা দিনের মোট খাবারের ৩ ভাগের ১ ভাগ। এ জন্য কয়েকটি স্বাস্থ্যকর খাবার হলো কাঁচা ছোলা সেদ্ধ সঙ্গে আদা, টমেটো, পুদিনা ও অল্প লবণ মিশিয়ে মুড়ি মাখানো। আরও খেতে পারেন দই-চিড়া, দই–বড়া, নরম খিচুড়ি, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, শসার রায়তা, ডিম সেদ্ধ, সাবুদানা মেশানো স্যুপ, মিক্সড ফল বা ফলের সালাদ যেকোনো একটি। তবে অবশ্যই ডালের তৈরি খাবার একের অধিক খাবেন না। যেমন ডালের বড়া, ঘুগনি, খিচুড়ি, হালিম, চটপটি এগুলোর যেকোনো একটি খাবার খেতে হবে। কলা, আপেল, খেজুর, কমলা, আম, আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি মিষ্টি ফলের মধ্যে যেকোনো একটি ফল খেতে পারবেন। তবে টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে। পাশাপাশি ইফতারে ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও মসলাদার খাবার বর্জন করতে হবে। কারণ, এতে অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। রাতের খাবার ইফতারের পরেই রাতের সময়কাল খুব অল্প। অনেকে ইফতারে বেশি খাবার খেয়ে রাতের খাবার বাদ দেন। এটি একেবারে ঠিক নয়। রাতের খাবারে হালকা কিছু খেতে পারেন। হালকা মসলায় রান্না করা ছোট মাছ, মুরগি, মাংস, সবজি, ডাল, শিমের বিচি, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এ ছাড়া লাল আটার রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, যেকোনো একটি পরিমাণমতো খেতে পারেন। অবশ্যই ভুনা করা খাবার থেকে বিরত থাকবেন। সাহ্‌রির খাবার সাহ্‌রির খাবারটি খাওয়া হয় রাতের শেষ প্রহরের দিকে। এ জন্য অনেকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার সময় পান না। এ জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম বেছে নিতে পারেন। গরুর মাংস, ডাল না খাওয়াই ভালো। কারণ, এগুলো পানির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া যাদের আগে থেকে হজমজনিত সমস্যা আছে তারা ডাল, মাংস এ সময় এড়িয়ে চলবেন। আবার এ সময় দুধ খেলে ডাল খাওয়ার প্রয়োজন নেই। যা করবেন অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবারগুলো পরিহার করা। এক দিনে সব আইটেম না খেয়ে এক দিন পরপর একটি করে আইটেম রান্না করুন। এক খাবার ফ্রিজে রেখে অনেক দিন ধরে খাবেন না। সারা দিন রোজা রাখলে এমনিতেই পানিশূন্যতা থাকে বেশি। এ জন্য বেশি করে চা–কফি খাবেন না। এতে আরও শরীর পানিশূন্যতায় ভুগবে। ভুনা খাবার পরিহার করে তরল বা পানিজাতীয় খাবার বেশি খান। যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড বা বাতজনিত সমস্যা আছে তাঁদের বেসন ও ডালের তৈরি খাবার কম খেতে হবে কিংবা কারও ক্ষেত্রে বন্ধ করতে হতে পারে। এ জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো। যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে প্রেশার আছে তাঁরা বাইরের কেনা সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার, মুড়ি, সামুদ্রিক মাছ, গরুর মাংস বা চপ খাবেন না। যাদের ওজন বেশি ও হৃদ্‌রোগ আছে তাঁরা ইফতার ও সাহ্‌রিতে ডুবো তেলে ভাজা খাবার ও ছাঁকা তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলবেন। যেমন আলুর চপ, বেগুনি, আলুর পুরি, ডালের বড়া ইত্যাদি। এসব খাবারে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ কম থাকে। এ ছাড়া ছাঁকা তেল পরে ট্রান্সফ্যাট হয়, যা অ্যালডিহাইড নামে জৈব রাসায়নিক প্রভাবে বিভিন্ন জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন। এসব খাবার অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
১০ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৮

হাসপাতাল রেখে বনভোজনে ৩৫ চিকিৎসক, ভোগান্তিতে রোগীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের মৃত্যুর দুদিন না যেতেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা গেলেন পিকনিকে। হাসপাতালের ৩৫ জন চিকিৎসক ও তাদের পরিবার পরিজন সরকারি অফিস খোলার দিন চিকিৎসা কার্যক্রম অনেকটা অচল করে পিকনিকের জন্য হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি পাহাড়ে পাঁচতারকা মানের দ্য প্যালেস রিসোর্টে যান।  ডা. ওয়াহিদুজ্জামানের মৃত্যুর দুদিন না যেতেই তাদের এ আনন্দ ভ্রমণ জনমনে ও সাধারণ রোগীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।  এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা বলছেন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অফিস চলাকালীন সময়ে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। দুদিন না যেতেই চিকিৎসকরা জেলা আধুনিক হাসপাতালের কার্যক্রম অনেকটা অচল করে পিকনিকের আয়োজন করায় সাধারণ মানুষ তাদের সমালোচনা করছেন। নাম প্রকাশে  অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধায়ক স্যারের মৃত্যুর দুদিন না যেতেই চিকিৎসকদের এ ধরনের পিকনিক আয়োজন কোনো অবস্থাতেই ঠিক হয়নি। এতে মানবতা আর কোথায় রইল?  তিনি বলেন, সদর হাসপাতাল খোলার দিন ২৫ সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং বিকেলে আরো ১০ জন চিকিৎসক সেখানে অংশ নেন। সব মিলিয়ে তাদের পরিবার পরিজনসহ প্রায় ২ শতাধিক লোক পিকনিকে অংশ নেন এবং সেখানে খাবার দাবার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সবকিছুর আয়োজন করা হয়। গতকাল যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ছিল তাই অনেকটা নিরবেই পিকনিকে চলে যান চিকিৎসকরা।  এ দিকে হাসপাতালের একজন স্টাফ জানান, অন্যান্যবার এ ধরনের পিকনিক আয়োজন করা হলেও আমরা জানতাম কিন্তু এবার অনেকটা লুকিয়ে পিকনিকে চলে যান চিকিৎসকরা।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, তত্ত্বাধায়ক স্যার যেদিন মারা যান সেদিনও ওই চিকিৎসকরা স্যারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা করেছিলেন। কিন্তু তিনি নীতিতে অটল ছিলেন। কোনো প্রকার আপস করেননি। তার মতো একজন চিকিৎসকের অকালে বিদায় নেওয়া বর্তমানে শুধু চিকিৎসক সমাজ নয় দেশেরও অপরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি এ হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে কখনো ছাড় দেননি। এ কারণেই কিছু সংখ্যক চিকিৎসক তা মেনে নিতে পারেননি।  এ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত হাসপাতালের আরএমও রানা নূরুস সামস ও ডা. ফায়েজুর রহমানকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।  এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও ফাইজুর রহমান বলেন, আমি ও ডা. নূরুস সামস বদলির আদেশ পেয়েছি। আমরা এখন ঢাকায় আছি। পিকনিকের বিষয়টি আমার জানা নেই।   এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর বলেন, অফিস খোলার দিন এত চিকিৎসক পিকনিকে যাওয়ায় সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পিকনিকে যাওয়া সঠিক হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে না উঠতেই দুদিনের মাথায় এ ধরনের পিকনিকের আয়োজন নিঃসন্দেহে অমানবিক। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক একজন ভালো মানুষ এবং সদর হাসপাতালে তিনি এক আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তার এ অবদানের জন্য রোগীসহ সাধারণ মানুষ আজ শোকাহত। তবে চিকিৎসক সমাজের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মৃত্যুর রেশ না কাটতেই এ ধরনের আনন্দফুর্তির আয়োজন করে সাধারণ মানুষ আশা করেননি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা পুটিজুরি পাহাড়ে পাঁচতারকা মানের দ্য প্যালেস রিসোর্টের সুপারভাইজার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হোটেলটি ৩ বেলা খাবারসহ একদিনের ভাড়া ২১ হাজার টাকা। হল আগেই বুকিং দিতে হয়।  ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিকিৎসকদের পিকনিকের জন্য এ হোটেল বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।  তবে এর বেশি আর কোনো তথ্য জানাতে পারবেন না বলে অপরাগতা প্রকাশ করেন রিসোর্টের সুপারভাইজার।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৪
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়