• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
বইমেলায় খন্দকার আলী কাওসারের উপন্যাস ‘অন্তরের রূপান্তর’ 
‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এ প্রকাশিত হয়েছে ডা. খন্দকার আলী কাওসারের উপন্যাস ‘অন্তরের রূপান্তর।’ আগে লেখালেখি করলেও খন্দকার আলী কাওসারের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস এটি। বাংলার প্রকাশন থেকে থেকে প্রকাশিত এই বইটি মূলত ৯০ দশকে বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত পরিবারের এক কিশোরের জীবনকে নিয়ে এগিয়েছে এসেছে প্রেম আর তার সাথে টানাপোড়েন।  আছে ব্যর্থতার গল্প। সেটাকে অতিক্রম করে জীবন বিনির্মাণের গল্পও আছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ঘটনা বিস্তার লাভ করেছে বিদেশে। সময়ের পরিক্রমায় নতুন শতাব্দীতে প্রবেশ করেছে উপন্যাসটি। দুই সময়ের এক বর্ণনামূলক তুলনা উপন্যাসটিতে একটি ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে। সাফল্যের একটা পর্যায়ে গেলে আগে ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই ফিরে আসে। তখন কী করা উচিত? এসবের উত্তর দিতে গিয়েই এক দারুণ সামাজিক বার্তা দেয়া হয়েছে উপন্যাসটিতে। লেখকের বর্ণনাশৈলী আর ঘটনার গতিময়তা পাঠককে ধরে রাখবে বলেই আশা করা যায়। বাংলার প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ১৭৫ পৃষ্ঠার এ বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ৪৬০ টাকা, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে ২৫ শতাংশ ছাড়ে। প্রথম সংস্করণ প্রায় শেষ হওয়া বইটি পাওয়া যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ২০৭-২০৮ নাম্বার স্টলে। লেখক দেশে সার্জারি ও নিউরোসার্জারিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যের ডান্ডিতে নিউরোসার্জারিতে চাকরি শুরু করেন এডিনবরায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন নিউরোসার্জারি ও মেজর ট্রমা কনসালটেন্ট হিসেবে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০০

আরব নিউজের গবেষণা প্রবন্ধ  / শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে ‘অলৌকিক’ অর্থনৈতিক রূপান্তর
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এমন এক অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটেছে যা অলৌকিকের চেয়ে কম কিছু নয়। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান, ভারতের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত মিত্রতা এবং চীন ও আরব বিশ্ব উভয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের দ্বারা তা প্রমাণিত। দেশটি তৈরি পোশাক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক হিসাবে তার অবস্থানকে দৃঢ় করছে। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আরব নিউজের গবেষণাধর্মী এক বিশ্লেষণে একথা বলা হয়েছে। পেন্টাগনের সাবেক বিশ্লেষক ওবাই শাহবন্দর এবং বৈদেশিক নীতি এবং মিডিয়া বিশ্লেষক আদেলে নাজারিয়ান প্রবন্ধটি লিখেছেন।   এতে বলা হয়, স্বাধীন অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার যে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি তকমা দিয়েছিলেন’ গত ১৫ বছরে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র নারী নেত্রী হিসেবে গর্জে উঠেছেন হাসিনা। তিনি একটি বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেছেন যা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে যে- উন্নয়নশীল দেশগুলো কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে টেকসই ভাবে দারিদ্র্য থেকে উত্তোলন করতে পারে তার মডেল হিসাবে। বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করেছেন। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ এবং অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশের নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের মূল প্রতিশ্রুতির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য শেখ হাসিনার প্রশাসন ১০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তৃত ইশতেহার প্রকাশ করেছিল যা ‘সাংস্কৃতিক মুক্তির’ লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ এর দিকে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড স্থাপন করে।   শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পররাষ্ট্রনীতি প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা দ্বারা পরিচালিত এবং এটি তার প্রয়াত পিতার ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই উক্তিটির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই মতবাদ বৈশ্বিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, জাপান এবং কানাডাসহ মূল আন্তর্জাতিক মোড়লদের সাথে সম্পর্ক গভীর করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে, দেশটি এখনও প্রকৃত নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারেনি এবং বাংলাদেশ সম্প্রতি বলেছে যে, এটি ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাস বিরোধী সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করে। কৌশলগত ভারসাম্যের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি বৈদেশিক নীতি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করতে সক্ষম হয়েছে।  পশ্চিমের প্রধান রফতানি বাজার, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৩টি বিনিয়োগ বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেছে এবং চীনা নির্মাণ সংস্থাগুলোকে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি প্রদান করেছে যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা। হাসিনার সংস্কারগুলো নারীর ক্ষমতায়নে দুর্দান্ত কাজ করেছে এবং কার্যত দুর্ভিক্ষ নির্মূল করেছে, যেখানে উল্লেখযোগ্য ভাবে দারিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন একটি অনন্য ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমুন্নত রাখতে এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাসানচর দ্বীপে একটি নতুন খোলা সুবিধায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে তারা পরিষ্কার আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছে, নারীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এটি এমন এক সময়ে একটি বিশাল মানবিক উদ্যোগ যখন মিয়ানমার ধীরে ধীরে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক গোষ্ঠীগুলো উপমহাদেশের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা পরিণতির হুমকি দিচ্ছে।  এদিকে, দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করা বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদরা বলছেন যে, দেশের ভবিষ্যৎ বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর সাথে যুক্ত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এসডিজির মূল মানদণ্ড পূরণে বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন আরও সম্প্রসারণ করা হাসিনার রূপকল্প ২০৪১-এ বর্ণিত একটি মূল লক্ষ্য। ভারতের অশান্ত উত্তর-পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তার জন্যও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাবে এবং হাসিনা তার শাসনকে দৃঢ় করার সাথে সাথে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা কেবল বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত রয়েছেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই, বরং খুবই খোলা মনের এবং উদার। বরং এটা ভালো, আমি সমালোচনা থেকে শুনতে পারি এবং শিখতে পারি।  তিনি আরও বলেন, তার পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং তিনি কৌতুক করে বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে যখন বাইডেনের সঙ্গে তার দেখা হয়, তখন তিনি বাইডেন ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে সেলফি তোলেন। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যপন্থী রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটি একটি অপ্রয়োজনীয় বাধা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, যারা সমৃদ্ধির জন্য একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয় এবং এই অঞ্চলে চরমপন্থার বিস্তারের বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ হিসাবে দাঁড়ায়।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩০

শরিয়ার দৃষ্টিতে লিঙ্গ রূপান্তর কি জায়েজ?
ট্রান্সজেন্ডার ইদানীং আলোচিত এক বিষয়। ট্রান্সজেন্ডারবাদ বা রূপান্তরকামীতা নামে একটি মতবাদ রয়েছে। অনেকে একে জেন্ডার আইডেন্টিটি বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলে থাকেন। এই মতবাদ বলে- কোনো পুরুষের যদি ‘নিজেকে নারী বলে মনে হয়’ তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন তাকে নারী হিসেবে বিবেচনা করবে, নারী হিসেবে সব অধিকার নিশ্চিত করবে। এমনকি সে দুই তিন বাচ্চার বাবা হলেও তাকে নারী হিসেবেই দেখতে হবে, এটা তার অধিকার। একইভাবে কোনো নারীর যদি ‘নিজেকে পুরুষ মনে হয়’ তাহলে সে একজন পুরুষ। সমাজ ও আইন তাকে পুরুষ বিবেচনা করে সব অধিকার নিশ্চিত করবে। শারীরিকভাবে নারী হওয়া কিংবা কয়েক বাচ্চার মা হওয়াও ট্রান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ নয়। বরং ট্রান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, একজন পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে। এই মতবাদে বিশ্বাসীদের দাবী- মানুষ ইচ্ছেমতো পোশাক পরবে, ইচ্ছেমতো ওষুধ আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বদলে নেবে নিজের দেহকে। আর কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের দাবী করে, তা-ও মেনে নিতে হবে। এটা তার অধিকার। ট্রান্সজেন্ডারবাদে বিশ্বাসীদের বিভিন্ন লেখায় দেখা যায়, কোনো ছেলের অনুভূতি যদি মেয়ের মতো হয় এবং তার যদি মেয়ে হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে হয় তাহলে বুঝতে হবে শরীরটা আসলে তার নয়।  বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্যতম হো চিন মিন ইসলাম। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরির দাবিও জানিয়ে আসছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে নারী ভাবতাম। অবশেষে অস্ত্রোপচার করে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই। এখন আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন নারী। হো চিন মিন ইসলামের কথা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, ট্রান্সজেন্ডারবাদের সঙ্গে শারীরিক সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি লিঙ্গ পরিবর্তন অপারেশন করেছেন ২০২৩ সালে। কিন্তু এর তিন বছর আগে থেকেই সামাজিক ও আইনিভাবে তাকে এবং তার মতো অন্যদের নারী হিসেবে মেনে নেওয়ার দাবি করে আসছেন তিনি। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার হোক বা না হোক, যখন থেকে কেউ নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করা শুরু করবে, তখন থেকেই সামাজিক ও আইনিভাবে এ দাবি মেনে নিতে হবে। বিশ্বজুড়ে এই মতবাদের প্রচার-প্রসার চলছে। বিচিত্র এই মতাদর্শকে উপস্থাপন করা হচ্ছে নাগরিক ও মানবাধিকারের প্রশ্ন হিসেবে। প্রশ্ন হলো, একজন মুসলিম কি চাইলে লিঙ্গ রূপান্তর করতে পারে? অথবা পুরুষ শরীর নিয়ে নিজেকে নারী কিংবা নারী শরীর নিয়ে নিজেকে পুরুষ দাবি করতে পারে? কিংবা তাদের দাবি পূরণ করার অনুমতি আছে ইসলামে?   এর উত্তর হলো- না। মুসলমানের লিঙ্গ পরিবর্তনের অনুমতি নেই। পুরুষ শরীর নিয়ে নারী দাবি করা বা নারী শরীর নিয়ে নিজেকে পুরুষ দাবি করার অনুমতি কোরআন-হাদিসের কোথাও নেই। বরং বিপরীত লিঙ্গের সাজ-সজ্জাকেও কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা ত্বিন: ৪) হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে (তিরমিজি: ২৭৮২) পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির পরিবর্তন-পরিবর্ধনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব। আমি তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণোচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। (আল্লাহ বলেন) আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ (সুরা নিসা: ১১৬-১১৯) উপরুক্ত আয়াতে দেখা যাচ্ছে, অভিশপ্ত শয়তান মহান আল্লাহকে বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’ বোঝা গেল অহেতুক নিজের শরীরে বিকৃত সৃষ্টি করা মহান আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করার শামিল। সুতরাং ট্রান্সজেন্ডার ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি পূরণ করা ইসলাম পরিপন্থী কাজ। ইসলামে স্বাভাবিক দেহাবয়বই মানুষের জন্য উৎকৃষ্ট নেয়ামত। সেই অনুযায়ী সামাজিক ও আইনিভাবে তার অধিকার বা উত্তরাধিকার নিশ্চিত হবে। অনেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদকে গুলিয়ে ফেলেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার নিশ্চিতে ইসলামে সুন্দর বিধান রয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নয়। বরং তারা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি অথবা লিঙ্গ পরিবর্তন ছাড়াই মানসিক দিক থেকে সৃষ্টিগত লিঙ্গের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আসক্ত ব্যক্তি।  পশ্চিমা অনেক দেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ মতাদর্শ বাস্তবায়নের ফলে সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত নানা সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় এদের মধ্যে ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যার আশংকা থাকে। আরও নানাধরণের সমস্যার কথা বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। বিশ্বের বিখ্যাত টেক বিলিওনিয়ার ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে পিতামাতাকে সচেতন রাখেন। এই বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করাতে সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি (what is a woman) শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩) স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি মতাদর্শ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩) সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে।  পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে। সব ধরনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের উচিত, এ ধরনের মতবাদ যারা লালন করে, এ মতবাদ বিস্তারে যারা সক্রিয় ভূমিকায় আছে তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এমনসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যার সমাধান বের করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আসলে ইসলামে পুরুষলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ছাড়া অন্যকোনো লিঙ্গ নেই। এমনকি তৃতীয় লিঙ্গ যাদের বলা হয়, তাদেরও পুরুষ বা স্ত্রী নির্ধারণ করা হয় কোন দিক দিয়ে সে প্রস্রাব করছে তার ভিত্তিতে। উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির প্রস্রাব যদি পুরুষাঙ্গ নিয়ে নির্গত হয় তাহলে সে পুরুষ এবং সে সমাজ ও আইনের চোখে পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবে। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ (স.) দৈহিক বৈশিষ্ট্য পুরুষের কাছাকাছি এমন ‘হিজড়াদের’ পুরুষ ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য নারীদের কাছাকাছি এমন ‘হিজড়াদের’ নারী হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে বাইহাকি কুবরা: ১২৯৪) তবে হ্যাঁ সৃষ্টিগতভাবে কিছু মানুষের এ সংক্রান্ত বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। যেমন- কোনো ব্যক্তির প্রজননব্যবস্থা পুরুষের, অর্থাৎ তার দেহ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য তৈরি, কিন্তু যৌন বিকাশের ত্রুটির কারণে বাহ্যিকভাবে তার মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের কিছু বৈশিষ্ট্য (যেমন স্তনের মতো অঙ্গ) আছে- এমন ক্ষেত্রে সেই ত্রুটি দূর করার জন্য শর্তসাপেক্ষে অস্ত্রোপচারের বৈধতা আধুনিক আলিমগণ দিয়েছেন। একই কথা নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক কন্যাশিশুর জন্মের সময় যোনিপথ বন্ধ থাকে, যা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব, এ ধরনের চিকিৎসা গ্রহণকে ইসলাম নিষিদ্ধ বলে না। এ ধরনের অস্ত্রোপচার সীমিত পরিসরে জায়েজ এবং এর উদ্দেশ্য হলো- একজন মানুষের শরীরকে তার দেহের প্রজননন ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। বিকলাঙ্গতা দূর করা। ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের লিঙ্গ পরিবর্তন সার্জারি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ জাতীয় কোনো অস্ত্রোপচার ইসলামি শরিয়তে বৈধ না।  রাসুলুল্লাহ (স.) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, মেশকাত: ৪৪২৯) রাসুলুল্লাহ (স.) আরো বলেছেন, আল্লাহ সেসব মানুষদের উপর অভিসম্পাত করেছেন যারা তাঁর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনে। (বুখারি: ৪৮৮৬) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ ও প্রচারণা থেকে থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়