• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: বিচার মেলেনি ১১ বছরেও
দেশের ইতিহাসে বড় হৃদয় বিদারক ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ধস। এই ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন দুই হাজারের বেশি মানুষ। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এই শিল্প দুর্ঘটনা।  কিন্তু  দীর্ঘ ১১ বছরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা।  এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। হত্যা মামলার ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এত দিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে শ্রমিক মৃত্যুর এই মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অপরদিকে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটিও হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। ফলে, আইনি জটিলতার কারণে এগোচ্ছে না এই মামলার কার্যক্রম।  শ্রমিক মৃত্যুর হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিপক্ষ। হাইকোর্টে পাঁচ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত এক বছর তিন মাসে এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমদ্দার মামলাটি সম্পর্কে জানান, মামলাটিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে। এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিলে আসামিরা সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান। শুরু থেকে মামলাটি বিভিন্নভাবে সময় নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য আইনগত বাধা পেরিয়ে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু সাক্ষীরা ঠিকমতো হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।  মামলায় কারাগারে থাকা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে জামিন স্থগিতের আবেদন জানায়। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ বছরের ১৫ জানুয়ারি সোহেল রানার জামিন স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ।  আইন না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ওই সময় সোহেল রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৎকালীন (রাজউক) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার সাক্ষী করা হয় ১৩০ জনকে।  জানতে চাইলে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত বিচারিক ক্ষমতা বলে হত্যা মামলার পাশাপাশি ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটিও নিয়ে যান। যাতে একইসঙ্গে দ্রুত এই দুই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। তবে উচ্চ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যায়নি। মামলাটির এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। এই মামলায় ১৬  আসামির মধ্যে সবাই জামিনে আছেন।  রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় আট বছর আগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি বলেন,  মামলা দুইটির বিচার শেষ না হওয়ায় আসামি সোহেল রানা কারামুক্ত হতে পারছেন না। তার মতে আসামি সোহেল রানা বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন।  অনুসন্ধানে দেখা যায়, রানা প্লাজা নির্মাণে ছয় তলার অনুমোদন থাকলেও আট তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এ কারণে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ এস এম জিয়াউর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। এ মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত। সর্বশেষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক এম এ মফিদুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। তবে তার জেরা শেষ না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। রানা প্লাজা ধসের মামলাকে একটি দুর্ঘটনার মামলা উল্লেখ করে এ বিষয়ে আসামি রানার আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন,  এই মামলায় রানা গত ১১ বছর ধরে জেলহাজতে রয়েছে। বাকি সবাই জামিনে পেলেও রানা জামিন পাচ্ছেন না। মামলার রায়ে যা হওয়ার তাই হবে। এভাবে বিনা বিচারের ১১ বছর জেলে থাকা মানবিক দিক থেকে অন্যায়। তাই আদালতের উচিত হয়তো মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করা, নয়তো আসামিকে জামিন দেয়া। আশা করছি এ মামলার রায়ে রানাসহ অন্যান্য আসামিরা খালাস পাবেন। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম শেষে মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি। এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র রেফায়েত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আমিনুল ইসলাম, নিউওয়েব স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার এবং রেজাউল ইসলাম। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তিন মামলার বাইরে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলাটিই কেবল নিষ্পত্তি হয়েছে।  ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এ মামলার রায় ঘোষণা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর তৎকালীন বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় তার মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় আজও কাঁদছেন তাদের স্বজনরা। পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অসংখ্য শ্রমিক। এ ঘটনার ১১ বছরেও ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। রানা প্লাজার সামনে অঝরে কাঁদছিলেন ৭০ বছর বয়সী সাফিয়া বেওয়া। রানা প্লাজা ধসে মেজ ছেলে লাল মিয়াকে হারিয়েছেন তিনি। লাল মিয়া কাজ করতেন ভবনটির তৃতীয় তলায়। এ ঘটনায় বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে নেতারা বলছেন 'রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই আমরা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে আসছি। গত ১১ বছরেও আমাদের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। এত বছর পর আমরা একই দাবি জানাচ্ছি।' গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা একটি হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা সবার দাবি।' এ ঘটনায় আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ‘১১ বছরেও আমাদের কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সুদৃষ্টি আশা করছি।   
৮ ঘণ্টা আগে

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর, মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের স্মরণ
আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক, আহত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিক। মোমবাতি জ্বালিয়ে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করলেন তাদের স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সাভারের রানা প্লাজার সামনে অবস্থিত অস্থায়ী বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় নিহতদের স্মরণে কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। পক্ষ থেকে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের পাশাপাশি রানা প্লাজার ট্রাজেডির সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায় শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের পরিবার। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর এই দিনে নিহতদের স্বরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। প্রতি বছরই বিভিন্ন দাবি তুলে ধরি। দাবিগুলো হচ্ছে, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা, রানা প্লাজার সামনে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হতাহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে হবে। রানাপ্লাজা ধ্বসে নিহত শ্রমিক আখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়ের লাশটাও পাইনি। ঘটনার ছয় মাস পর ডিএনএ সেম্পলের মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত হয়। যাদের গাফিলতিতে মেয়েকে হারালাম তাদের আজও বিচার হলো না। আমরা বিচার চাই। ভবন ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় তখন চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় মামলা করে রাজউক। পাশাপাশি ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুদক। চারটি মামলার মধ্যে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা নিষ্পত্তি হলেও দীর্ঘ এগারো বছরে বাকি তিনটি মামলা নিষ্পত্তির মুখ দেখছে না। এর মধ্যে হত্যা মামলা ও ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য শুরু হলেও, অন্য মামলায় রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ। আসামিপক্ষ বলছে, মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন ভবন মালিক সোহেল রানা। অন্যদিকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
১৭ ঘণ্টা আগে

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে সোহেল রানা
ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের দাপুটে অভিনেতা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। অভিনেতার পাশপাশি তিনি একজন প্রযোজক ও পরিচালকও। রোবাবার (২৪ মার্চ) রাতের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর গেছেন তিনি। রুটিন চেক-আপের পাশাপাশি সেখানে চোখের চিকিৎসা করাবেন। যাওয়ার আগে গণমাধ্যমকে সোহেল রানা বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। একদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপর চিকিৎসকের কাছে যাব। খুব একটা সমস্যা নেই। আশা করছি এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে পারব। দীর্ঘদিন ধরে চোখের নানা সমস্যায় ভুগছেন সোহেল রানা। এর আগেও সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন চোখের চিকিৎসার জন্য। ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে চিত্রজগতে প্রবেশ করেন সোহেল রানা। চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন তিনি। তিনি অভিনয় শুরু করেন ১৯৭৩ সালে। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। ওই সিনেমার মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।
২৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৪

ইলিয়াস কাঞ্চন নেতৃত্বাধীন কমিটি দুই বছরে পিকনিক ছাড়া কিছু করেনি : সোহেল রানা
ভারতীয় সিনেমা দেশে এসে সয়লাব করে দিচ্ছে। দুই দিনের মধ্যে সেন্সর হয়ে যাচ্ছে। এগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই না। যতদূর শুনেছি, শিল্পী সমিতি ও অন্য একটি সমিতি এর সঙ্গে জড়িত। ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দিতে হলে তাদের (সমিতিকে) টাকা দিতে হয়। এটা চরম অন্যায়। এভাবে সমিতি টাকা নিয়ে বিদেশি কালচার আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা মানা যায় না। ভিনদেশি সিনেমা দেশের প্রেক্ষাগৃহে আমদানি প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অন্যতম অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। রূপালি পর্দার এক সময়ের সাড়া জাগানো এই নায়ক আরও বলেন, ভারতীয় সিনেমা আমাদের দেশে আসুক। আমরা আটকে থাকতে চাই না। আমাদের সিনেমাও ভারতে যাক। তবে যেসব সিনেমা সেখানে পাঠানো হয় যেগুলো আমাদের দেশেই চলে না। সেখানেও সেটি বস্তার মধ্যে পড়ে থাকে। আমাদের দেশে ১০ বছরে কি ভালো সিনেমা তৈরি হয়নি? শাকিবের ভালো-ভালো সিনেমা বাংলাদেশে নেই? যেগুলো ভারতে গিয়ে কাঁপিয়ে দিতে পারে। সেগুলো তো পাঠানো হয় না। পাঠায় কারা সেখানে তো কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। সেখানে সমিতির কিছু করণীয় থেকে যাচ্ছে। সেগুলো তাদের করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে প্রতিটি সমিতির পাশে দাঁড়াতে হবে। সম্প্রতি শিল্পী সমিতি থেকে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখলে এই অভিনেতা বলেন, কি অপরাধে পরপর তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত জায়েদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে জানি না। তার ভুল থাকতে পারে কিন্তু তাকে শোকজ করা হয়েছে কিনা, নিয়ম অনুযায়ী সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে কিনা বলতে পারছি না। আমার জানা মতে, কারো সদস্যপদ স্থগিত করতে হলে তিনবার শোকজ করতে হয়। তার উত্তর যদি সন্তোষজনক না হয়ে থাকে তাহলে সবাই মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এভাবে হয়েছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। সঠিকভাবে হয়ে থাকলে ঠিক আছে। আর যদি সঠিক নিয়মে না হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচনের আগে তাকে বের করে দেওয়া ভালো হয়নি। তাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল সেটা মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল সেটাকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। একসময় শিল্পীদের দাওয়াত দিতেন জায়েদ খান। সেই তিনিই দুই বছর ধরে সমিতির দাওয়াত পাচ্ছেন না। সম্প্রতি পিকনিকে দাওয়াত পায়নি এই অভিনেতা। এক প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা বলেন, এটা সাধারণ একটা অভদ্রতা। জায়েদের সদস্যপদ যদি নাও থাকে পূর্বে সমিতির জন্য কয়েক বছর কাজ করেছে সে জন্য হলেও ওরে দাওয়াত দেওয়া ছিল ভদ্রতা। জায়েদ তো বড় অন্যায়কারী কিংবা ক্রিমিনাল না যে, দাওয়াত দেওয়া যাবে না। শিল্পী না তারপরও অনেককেই তো দাওয়াত করা হয়েছে। নিজের সহকর্মীর প্রতি পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। সেখানে দাওয়াত না দেওয়া শোভনীয় মনে হয়নি। জায়েদকে আটকে দেওয়ার জন্যই সদস্যপদ স্থগিত করেছে। ওরাই বেশি কাজ করেছে। সবার নাম আসে না। জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক যার কারণে বার বার নাম আসে।  জায়েদ খানকে ঘিরে শিল্পী সমিতিতে কাদা ছোড়াছুড়ি চলমান। এ নিয়েও কথা বলেছেন এই অভিনেতা। বললেন, আমার জানা মতে জায়েদের পক্ষ থেকে কোনও কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে না। জায়েদকে নিয়ে যদি কেউ কেউ বলে সেটা হয়ত বিশেষ কয়েকজন লোক বলতে পারে। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের কাছে প্রচার যন্ত্র একটু বেশিই থাকে। তারা যদি ইচ্ছে করে অনেক কে লাগিয়ে দিয়ে বলতে পারে তাদেরকে ছোট করো। এটা তো আমাদের স্বভাব চরিত্রের মধ্যেই আছে। যোগ করে বলেন, আগে কখনো এই পদটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। শেষ দুই বছর এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে কখনো জায়েদ বেশি কথা বলেনি। যখনই বলেছে সম্মান রেখেই বলেছে। আর নিপুণকে নিয়ে যেটা বলেছে আইনের কথা টেনে বলেছে। এটা বলতেই পারে। উভয়ের মধ্যে যে ভেদাভেদ রয়েছে সেটা থাকা ভালো না। আগামী নির্বাচনে সেটা দূর হবে বলে আশা করি। রাজনীতিতে যেমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই এবার শিল্পী সমিতিতেও সেটাই চাই। ইলিয়াস কাঞ্চন নেতৃত্বাধীন কমিটি দুই বছরে পিকনিক ছাড়া কিছু করেনি সে কথা উল্লেখ করে সোহেল রানা বলেন, শিল্পী সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আসলে ইলিয়াস কাঞ্চন এই দুই বছরে কিছুই করতে পারেনি। কারণ, পুরো কমিটি নিয়ে একটা মিটিংই করতে পারেনি। এক দল কখনো মিটিংয়ে আসেনি। একা তো ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। ওর জীবনের এই একটা পার্ট সেটা ভুলে যেতে চাইবে। এই সময়ে শিল্পী সমিতি একটা পিকনিক ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। আগে মিশা-জায়েদ যেভাবে কাজ করত এ কমিটি আসার পর সেরকম কিছুই দেখিনি আমি। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলে কখনোই ভালো কিছু করা সম্ভব না। ভালো কিছু করতে হলে সবাইকে এক হয়ে করতে হবে। সে দিক থেকে মিশা-জায়েদ কমিটি অনেক ভালো ছিল। মানুষ জানত একটি কমিটি আছে বিপদে পাশে পাওয়া যায়। সবসময় ঈদে দু-তিনশো মানুষের বাসায় উপহার যেত। -বললেন এই অভিনেতা। অনেকে সমিতির এ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কি বলবেন? উত্তরে সোহেল রানা বলেন, তাহলে সমিতির কাজ কি? তাদের কাজ ডাকাতি-চুরি করা? সমিতির কাজই হচ্ছে শিল্পীদের সাহায্য করা। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো। পাশে দাঁড়িয়েছে কিনা সেটাই বড় কথা। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার বাতিল করেছিল শিল্পী সমিতির সর্বশেষ সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কমিটি। এ নিয়ে বেশ চর্চা হয়েছিল। ইলিয়াস কাঞ্চন কমিটিতে এসে তাদের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন। তবে এই সদস্যপদ বাতিলের দায় জায়েদের কাঁধে আসে বরাবরই। যদিও দফায় দফায় উত্তর দিয়েছেন এই নায়ক। জানিয়েছেন তিনি এক নয়, পুরো কমিটির সিদ্ধান্তে সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল। এবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সে সময়ের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সোহেল রানা। তিনি বলেন, সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল সবার সিদ্ধান্তেই। এখানে একা জায়েদের দোষ হবে কেন? এখানে দায়ী হলে পুরো কমিটি হবে। আমি, ইলিয়াস, আলমগীর, ফারুক, উজ্জ্বল ছিল। তাহলে তো আমরা পাঁচ জনই দায়ী। আমরা ৪৬ জনের সদস্যপদ স্থগিত করেছিলাম। পরবর্তীতে ওরা আরো কিছু এড করেছিল। সেটা কমিটি করতে পারে। আমরা যে ৪৬ জন বাতিল করেছিলাম তার মধ্যে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না কেন তাদের বাতিল করেছি। এটা নিয়ে নয়, শেষ নির্বাচন থেকে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। নিজেদের মধ্যে এটা থাকা ঠিক না। এবার চাচ্ছি সবাই মিলে কাজ করবে। আর যেন ভাগ না হয়। সবাই মিলে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করবে। 
০৯ মার্চ ২০২৪, ১৮:০১

মাসুদ রানা হয়ে আসছেন অনন্ত জলিল
এ প্রজন্মের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। এবার বড় পর্দায় মাসুদ রানা হয়ে আসছেন এই অভিনেতা। সিনেমার নাম অপারেশন চিতা।  জানা গেছে, দেশ বরেণ্য লেখক প্রয়াত কাজি আনোয়ার হোসেনের ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ‘অপারেশন চিতা’ এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। সিনেমাটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আব্দুল আজিজ নিজেই।  বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে ‘অপারেশন চিতা’র আনুষ্ঠানিক মহরত। বরাবরের মতোই এই সিনেমাতেও জুটি বাঁধছেন অনন্ত-বর্ষা। মহরতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সিনেমার প্রধান এই দুই অভিনয়শিল্পী। মূলত মিয়ানমারের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হবে সিনেমাটি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে শুটিং করা সম্ভব নয়। তাই শুটিংয়ের জন্য থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগামী মে থেকে শুরু হবে সিনেমার শুটিং। ৩০ টিরও বেশি দেশে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় মুক্তি পাবে অনন্ত-বর্ষার ‘অপারেশন চিতা’। 
৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:০৩

রানা প্লাজা ট্রাজেডি  / ৬ মাসে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ, স্থগিত থাকবে রানার জামিন
সাভারে রানা প্লাজা ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই সময় পর্যন্ত ভবনটির মালিক সোহেল রানার জামিন স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৫ জানুয়ারি)  প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আরও পড়ুন : ইভ্যালির রাসেল দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা   এদিন আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার। রানা প্লাজা ধসে পড়ে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০২২ সালের মার্চে সোহেল  রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছরের ৬ এপ্রিল তাকে জামিন দিয়েছিলেন আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করলে গত বছরের ৯ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী দুপক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ওই বছরের ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একইসঙ্গে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। আরও পড়ুন : কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতির মৃত্যু   এরপর ৮ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রানার জামিন ১০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন। ১০ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানি ৬ মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন আপিল বিভাগ। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ১৩শ মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের প্রায় সবাই ছিলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ভবনের মালিক সোহেল রানাকে।  
১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৯
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়