• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
ভাইকে বলেছিলাম আমি একুশে পদক নেব না!
না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক সাদি মহম্মদ। বুধবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার মোহাম্মদপুরের নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার ছোট ভাই প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ। শিবলী নিজেই প্রথমে ঘরের দরজা ভেঙে ভাইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। যে মুহূর্ত কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি। বড় ভাই সাদি মহম্মদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে শিবলী মহম্মদ বলেন, আমার ভাই মনে কষ্ট নিয়ে চলে গেছে। সে মনে করত, তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। কত মানুষ কত পদক পাচ্ছে, এসব তাকে খুব ভাবাতো। সে বড্ড অভিমানী ছিল। আমরা তাকে বোঝাতাম, আমাদেরকে মানুষ ভালোবাসে। পদক দিয়ে কী হবে? কিন্তু তার মনে চাপা কষ্ট ছিল। সেই কষ্ট নিয়েই চলে গেল। ইফতার করে ভাই নিজের রুমে গিয়ে গানের রিহার্সেল করছিল। এরপর তার সহকারীকে বলেছে, তুমি বাইরে যাও আমি রিহার্সেল শেষ করে ফোন করলে এসো। তখন আমি তার রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। যেটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কারণ, তিনি কখনোই রুমের দরজা বন্ধ করেন না রিহার্সেলের সময়। এরপর কড়া নাড়লেও ভেতর থেকে কোনো শব্দ মেলে না। পরে আমি বলি দরজা ভাঙো। দরজা ভেঙে ভেতরে যে দৃশ্য আমি দেখলাম....। আমার জীবনে কেন এই দৃশ্য দেখতে হলো! আমার ভাই রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পেলে একটু তৃপ্তি পেত। সাদি মহম্মদ তো আমার বড়, তার সামনে যখন আমি একুশে পদক পাই সেটা ছিল আমার জন্য বিব্রতকর। আমি ভাইকে বলি, একুশে পদক নেব না। কিন্তু সে আমাকে বলে, কেন নিবি না? তুই তো নাচের জন্য বাংলাদেশে কম কিছু করিস নি। পরে তাকে যখন একুশে পদক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য কার্ড দিলাম, সে বললো, না থাক রে। তুই যা। আমি সেখানে যাব না। গেলে অনেকেই প্রশ্ন করবে, আমি কেনো পদক পাই না। এগুলো আমাদেরকে বিব্রত করবে।
১৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:৪৬

বুয়েটে ভর্তি হয়েও গানের টানে শান্তিনিকেতনে চলে যান সাদি মহম্মদ
দেশের প্রয়াত কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। তার গানের সুরে বুঁদ হয়ে থাকতেন শ্রোতা-দর্শকরা।  হঠাৎ করেই বুধবার (১৩ মার্চ) পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী। নিজ বাসার একটি কক্ষ থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় তার।   গেল বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকেই নাকি নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। মানসিকভাবে ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না সাদি মহম্মদ। এভাবেই চলছিল। এদিন রোজা রাখেন, ইফতারও করেন।  এমনকি সন্ধ্যার পর নিজের রুমে গিয়ে তানপুরা নিয়ে সংগীত চর্চাও করেন সাদি মহম্মদ। এরপরই হয়তো না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন সবাই।  ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন সাদি মহম্মদ। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। মায়ের নাম জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। ১৯৭৩ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি এই সংগীতশিল্পী।  ১৯৭৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালে গানের টানে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে গানের জগতে পথচলা শুরু সাদি মহম্মদের।    বর্ষা ও বসন্তের গান ভীষণ পছন্দ করতেন সাদি মহম্মদ। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সিনেমা ছাড়াও হলিউডের ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’, ‘রোমান হলিডে’ ছিল তার পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া বই পড়তে ভালোবাসতেন। তার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।     রবীন্দ্রসংগীতে সাদি মহম্মদের মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক  গানও। এ ছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।  ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মধ্যদিয়ে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদি মহম্মদ। এছাড়া ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারাসহ বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।  ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ। পতাকাটি সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।  মূলত সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের পুরো বাড়ি। পাশাপাশি গুলি করে হত্যা করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে। পরবর্তীতে তার বাবার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।   ২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী।   
১৪ মার্চ ২০২৪, ১৩:১৬

শুক্রবার থেকে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন
রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুরু হচ্ছে শুক্রবার (৮ মার্চ)। এবার উদ্বোধনী অধিবেশনে গাজায় ইজরায়েলি হামলা ও তাদের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মনুষ্যত্বের জয়গান করা হবে। এ ছাড়া আরও বৈচিত্র্যময় সব আয়োজন থাকবে এবারের উৎসবে।    শুক্রবার (৮ মার্চ) ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’— বোধন সংগীত হিসেবে কবিগুরুর এই গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।  শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় তিন দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।  বুধবার (৬ মার্চ) ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মিলন পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।  এসময় সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ৪২তম অধিবেশনে ঢাকাসহ সারা দেশের সম্মিলন পরিষদের ৮২টি শাখার ৭ শতাধিক শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী অংশ নেবেন।   সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজনের সাংগঠনিক বিষয়, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন পরিষদের তিন সহসভাপতি। তাদের মধ্যে লিলি ইসলাম বলেন, এই আয়োজন সারা দেশের শিল্পী, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এবার অনুষ্ঠানের গান, গীতি ও নৃত্যালেখ্য পরিকল্পনা করা হয়েছে বিভিন্ন সমকালীন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। তিনি আরও বলেন, গানে থাকবে প্রেম ও বসন্ত, নারী দিবসে গীতি-আলেখ্য করা হয়েছে কবিগুরুর নারীদের লেখা গান নিয়ে। এর পাশাপাশি গাজায় ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে আবৃত্তির একটি বিশেষ পরিবেশনাও থাকবে। সব মিলিয়ে এবারের প্রতিটি পরিবেশনা বৈচিত্র্যময় ও উপভোগ্য হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দুই দিনব্যাপী হবে নজরুল উৎসব— শুক্রবার থেকে ঢাকার গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে দুই দিনব্যাপী তৃতীয় নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবটির আয়োজন করছে— বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা, গুলশান সোসাইটি ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার।  এটি উদ্বোধন করবেন সমাজ কল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি।   এই অনুষ্ঠানে থাকবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, কবিতার আবৃত্তি ও রচনার ভিত্তিতে নৃত্য। খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াসমিন মুশতারী, নাশিদ কামাল, ফেরদৌস আরাসহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নজরুলসংগীতের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।  জানা গেছে, ভারত থেকে মনোময় ভট্টাচার্য, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত তুষার দত্ত, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, পায়েল কর, দেবারতি চক্রবর্তী আসবেন। এ ছাড়া সারা বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পীরাও সংগীত পরিবেশন করবেন এই উৎসবে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এসব তথ্য জানানো হয়।    সংবাদ সম্মেলনে এই উৎসবের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলসংগীত প্রচারের জন্য সাংবাৎসরিক ও চলমান যে বিশাল কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি, তার সঙ্গে বৃহত্তর জনসমাজের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিবছর নজরুল উৎসবের আয়োজন করি। আমাদের প্রিয় কবির আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রসারিত ও বিকশিত করাই হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্।   প্রসঙ্গত, প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবে শুদ্ধ সুর ও বাণীতে গীত ১২৫টি নজরুলের গান আনুষ্ঠানিকভাবে ইউটিউবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
০৭ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৯
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়