• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo
রজতজয়ন্তী মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ
প্রিয় প্রাঙ্গণ কুমিল্লার মুরাদনগরের প্রত্যন্ত গ্রাম রামচন্দ্রপুরের অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ ক্যাম্পাস। স্মৃতি কারো কাছে ২৯ বছর আগের। কারোর আবার ২০ কিংবা ১০ কিংবা তারও কম। ১৯৯৫ সালে শিক্ষার আলো জ্বালাতে নিজ শ্বশুর বাড়ি  এলাকায় গিয়ে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পপি গাইডের রচয়িতা অধ্যক্ষ মো. আবদুল মজিদ। যে প্রতিষ্ঠান ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে আলোকিত করেছে বাংলাদেশকে। সেই প্রতিষ্ঠান হাটি হাটি পা পা করে শৈশব, কৈশর পেরিয়ে এখন যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে আন্দোলিত হচ্ছে। ২৮ পেরিয়ে ২৯ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজের।  ২৫ বছর পূর্তিকে বলা হয় রজতজয়ন্তী। অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ সেই সময়টা পেরিয়ে এসেছে আরও চার বছর আগে। করোনা মহামারি, জাতীয় নির্বাচন ইত্যাদি নানা কারণে উৎসবটা আর হয়ে উঠেনি। অবশেষে আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামীকাল শনিবার অর্থাৎ ২০ এপ্রিল অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে হাজার হাজার মজিদিয়ানের। পুরনো সেই দিনের কথা বলতে এক হচ্ছে সখি-সখারা।  রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন প্রথম ব্যাচের (১৯৯৭-পরীক্ষার্থী) শিক্ষার্থী ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) ও উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।  তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে এই মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এমন আয়োজন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শিক্ষার্থীসহ পুরো মুরাদনগর উপজেলাতেই এই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা যে কলেজকে ভালোবাসে, রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন প্রথম ব্যাচের (১৯৯৭-পরীক্ষার্থী) শিক্ষার্থী ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) ও উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে এই মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এমন আয়োজন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শিক্ষার্থীসহ পুরো মুরাদনগর উপজেলাতেই এই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা যে কলেজকে ভালোবাসে, বিশেষ করে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল মজিদকে ভালোবাসে এই অনুষ্ঠান তারই বহিঃপ্রকাশ। অনুষ্ঠান সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। প্রাক্তনদের কথা...  ২০০২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ঢাকা মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, ২৯ বছর পর হলেও রজতজয়ন্তী উদযাপন করতে পারার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। ভালো লাগার অন্যতম কারণ সবার সঙ্গে সবার দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ার সুযোগ। গ্র্যান্ড মিলনমেলায় রূপ নেবে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান। ৫ হাজারের বেশি প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সমাগম ঘটবে। এতে আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। এক সপ্তাহ ধরে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি সুন্দর ও সফলভাবে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। ২০০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ঢাকা মেট্রোপলিটনের সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি গল্পেরই আলাদা একটা সত্ত্বা রয়েছে। ২৯ বছরে মজিদ কলেজ এমন শতশত গল্প রচনা করেছে। সব গল্প মিলেই রজতজয়ন্তীতে একটি গল্পসমগ্র হবে। রূপক অর্থে যার সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মজিদ। আমরা প্রত্যেকে গল্পের একেকটা চরিত্র।   ২০০৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সিলেটের সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সগির আহমেদ টুটুল বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর অনেকের সাথে দেখা হবে। বিষয়টি ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠছে। মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আশা করছি রজতজয়ন্তী উৎসবের মাধ্যমে নতুন কিছু স্মৃতি নিয়ে যেতে পারবো, যেগুলো সারাজীবন বয়ে বেড়ানো যাবে।  ২০০৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজধানীর মুগদা থানার সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ বলেন, কত শত স্মৃতি আবদুল মজিদ কলেজকে ঘিরে। নদীতে গোসল করা, লঞ্চ ঘাটে ঘন্টার পর ঘণ্টা চুটিয়ে আড্ডা দেয়া, আশুলিয়ায় বসে বিকেলের হিমেল হাওয়ায় সিক্ত হওয়া, মাওলার দোকানে একসাথে সিনেমা দেখা আরও কত কি! সবকিছু যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। রজতজয়ন্তী সেই স্মৃতিগুলো ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।  ২০১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ঢাকার ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ একটি আবেগের নাম। অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মজিদ ভালোবাসার আশ্রয়স্থল। আবেগ আর ভালোবাসার সম্মিলন ঘটাতেই আমাদের রজতজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন। এর মাধ্যম নতুন আর পুরাতনের বন্ধন অঁটুট হবে। আমরা স্মৃতির ভেলায় চড়ে ফিরে যাবো এইচএসসির সেই দুটি বছরে। কারা থাকছেন অতিথি হিসেবে?  প্রথম ব্যাচের ছাত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সভাপতিত্বে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল মজিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব (সচিব) মো. জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু: মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো: নিজামুল করিম, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও হোমনা উপজেলা চেয়ারম্যান, অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল মজিদের সহধর্মীনি রেহানা বেগম, মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন ও কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী।  অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন মুরাদনগরের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গণিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল হাকিম খান।  যা যা থাকছে বর্ণাঢ্য আয়োজনে?  রজতজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুটা হবে বর্ণাঢ্য র‍্যালি দিয়ে। সকাল সোয়া নয়টায় কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিদের অংশগ্রহণে কলেজ ক্যাম্পাসে এই র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ১০টা ৪০ মিনিটে অতিথিদের উত্তরীয় পরিধান ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে। তারপরই সমবেত জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন অতিথিরা। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল মজিদ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণার পর কলেজের যেসব শিক্ষার্থী এরইমাঝে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হবে। পৌনে ১২টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখবেন এবং কলেজের সার্বিক বিষয়ে একটি উপস্থাপনা করবেন। তারপরই রজতজয়ন্তী উপলক্ষে যে স্যুভেনির প্রকাশ করা হচ্ছে তার মোড়ক উন্মোচন করবেন অতিথিরা।  এবার বক্তব্যের পর্ব শুরু। শুরুতেই প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন কয়েকজন। বেলা ১২ টায় বিশেষ অতিথিরা তাদের বক্তব্য দেবেন। তারপর অনুষ্ঠানের উদ্বোধক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল মজিদ ও প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার বক্তব্য রাখবেন। পরে অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান শেষে দুপুর ১টায় অনুষ্ঠানের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। মধ্যাহ্নভোজন ও নামাজের বিরতির আগে অতিথিদের সঙ্গে ব্যাচ ভিত্তিক ফটোসেশনে অংশ নেবেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে রজতজয়ন্তী উদযাপনের প্রথম পর্ব।  মধ্যাহ্নভোজন শেষে বেলা আড়াইটায় বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণায় মুখর হয়ে উঠবে অনুষ্ঠান স্থল। স্মৃতিচারণ শেষে শিক্ষকদের সাথে ব্যাচ ভিত্তিক ফটো সেশনে অংশ নেবেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে চারটায় র‌্যাফেল ড্র ও পুরষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব।  সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। এর মধ্য দিয়েই পর্দা নামবে রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের। ভাঙবে কোলাহল। ক্রমেই নেমে আসবে নীরবতা। যে নীরবতা ভাঙতে অপেক্ষা করতে আরও ২১ বছর। ৫০ বছর পূর্তিতে হয়তবা কলেজ প্রাঙ্গণে বসবে সুবর্ণজয়ন্তীর বিশাল মহাযজ্ঞ। তখন শোক প্রস্তাবের তালিকাটা অনেক দীর্ঘ হবে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া অনেকেই সেদিন সাদা চুল আর সাদা দাঁড়ি নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বেড়াবে কলেজ ক্যাম্পাসে। এইতো আর ক’দিন! ২০৪৫...  
১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়