• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo
বাইরের জীবন এত কঠিন জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম : জল্লাদ শাহজাহান
আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান বলেছেন, ৪৪ বছর কারাবন্দি থেকে বাইরে এসে নানা প্রতারণায় পড়ে মনে হচ্ছে কারাগারেই ভালো ছিলাম। কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। সোমবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শাহজাহান বলেন, ৪৪ বছর পর জেল থেকে ফিরে এক অন্যরকম দেশ দেখছি। এ সমাজে চলতে গিয়ে প্রতারণার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাকে। আমি কল্পনাও করতে পারিনি। বাইরের লোকের সম্পর্কে আমার এমন ধারণা ছিল না, তারা এতটুকু নির্দয় হতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি জানতাম না এত প্রতারক বাংলাদেশে রয়েছে।  তিনি বলেন, জেল থেকে বের হয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছি। সাথী আক্তার নামের ২৩ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে করে প্রতারিত হয়েছি। মেয়েটি আমার সব টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো আমার নামে মামলা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দরকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনোটিই আমি পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবানদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমাকে থাকার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বলেন, আমার কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের জোগানদাতা নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই। আমি চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছি।  ৪৪ বছর কারাভোগ শেষ করে এসে আমি এখন বাইরের মানুষদের বুঝতে পারছি না।  জল্লাদ শাহজাহান বলেন, আমি প্রতি জায়গায় প্রতারণার খপ্পরে পড়ছি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করে সেখানেও সর্বস্বান্ত হয়েছি। বিয়ের কাবিন ৫ লাখ টাকা হলেও আমার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে আমার স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা ৫৩ দিনের মাথায় পালিয়ে গেল। পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিলো। আমি থানায় মামলা দিতে গেলেও বউয়ের নামে মামলা করা যায় না বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে আইনজীবীর সহযোগিতায় রোববার (৩১ মার্চ) আদালতে আমার স্ত্রী, শাশুড়িসহ ৬ জনের নামে মামলা করেছি। তিনি বলেন, জেল থেকে বের হওয়ার পর আমার ভাগনে নজরুল আমাকে অটোরিকশা কিনে দেবে বলে আমার টাকা মেরে দেয়। এরপর চায়ের দোকান দিই, আমার সঙ্গে থাকা ছেলেটি ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, একজন নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অথচ আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার সময় স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে, যার সব প্রমাণ আমার হাতে রয়েছে। শাহজাহান বলেন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়া টাকাসহ মোট ১৮ লাখ টাকা আমি সাহায্য হিসেবে পাই। সেই টাকা দিয়েই মূলত আমি বিয়ে করে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব, আমার জীবন কীভাবে চলবে, কোথায় থাকব কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন খেয়ে না খেয়ে অনাহারে আমার জীবন চলছে। এই জল্লাদ বলেন, আমি এখন দুই অথবা তিন দিন পর ভাত খাই। আমি আমার উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপির কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ কাজ দেয়নি, সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। এভাবে চলতে থাকলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। জল্লাদ শাহজাহান বলেন, শেখের বেটির কাছে আমার চাওয়া, ঘৃণ্য অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে আমাকে একটি আবাসন ও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন চলতে পারি সেজন্য সহজ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। সমাজের বিত্তবানদের কাছেও আমার একই দাবি। আমার এ অসহায়ত্বের অবসান চাই। দয়া করে আমাকে বাঁচান।
০১ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়