• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে জাবিতে সংহতি সমাবেশ
ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসসহ পাঁচ দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সংহতি সমাবেশ করেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ।  শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।  এ সময় পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা। দাবিগুলো হলো- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র‌্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাবেশ থেকে রোববার সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।  সমাবেশে সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, এত সব ঘটনার পরও প্রশাসন কতটা নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে মাদকের ব্যবহার পুরোপুরি কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সেল গঠন করে বসে থাকলেই চলবে না। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জড়িত। এখনো বিভিন্ন হলে যাদের ছাত্রত্ব অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে তারা বহাল তবিয়তে আছেন। যারা রাজনৈতিকভাবে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, যাদের খুঁটির জোর কম তাদেরই কেবলমাত্র হলছাড়া করার মাধ্যমে আইওয়াশ করা হচ্ছে।  পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট একেবারে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য আসা শিক্ষার্থীদের আচরণ আমাদের ব্যথিত করে। এটা আমাদের সিস্টেমের সমস্যা। হলে হলে গণরুম শুধু শিক্ষার পরবেশ নষ্ট করেনি, বিকৃত মানুষ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির ওপর গ্রাফিতি অঙ্কন করে এ আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার নানা চেষ্টা চলছে। এই গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করার পরও প্রশাসনের বোধদয় হয় নাই। তারা ভাবছে কিছুদিন পর ভর্তি পরীক্ষার কারণে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। আপাতত তারা রুমগুলোতে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে। হল খালি করার নামে আমাদের আইওয়াশ করছে। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, এ সাধারণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কখনো তাদের স্বপক্ষে একবারও দাঁড়ায়নি। এ যাবতকালে ধর্ষক মানিক থেকে মোস্তাফিজ পর্যন্ত সব জায়গায় ছাত্রলীগের নাম এসেছে। যতই বলেন, মোস্তাফিজ আমাদের দলের কেউ না তাতে ছাত্রলীগ এ ধর্ষণের দায় এড়াতে পারে না। যারা ছাত্রজীবনে নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাই হলগুলোতে প্রভোস্টের দায়িত্ব পাচ্ছেন। তারা কিভাবে হলের নির্যাতন বন্ধ করবেন? অছাত্রদের হল থেকে বের করার নামে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন। প্রভোস্টদেরকেও এ ঘটনায় জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘৭ তারিখে সিন্ডিকেটে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, নিপীড়ক শিক্ষককে শাস্তি দিতে হবে। ভিসি বলেছিলেন, স্ট্রাকচারাল কমিটির তদন্ত শেষ হয়নি, পরবর্তী সিন্ডিকেটে করতে হবে। একজন নিপীড়ক শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখবার যে পাঁয়তারা চলছে, আমরা সেটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি—তাকে বাঁচানো যাবে না। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাঙ্গনে মাদক এবং ধর্ষণের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ৪২তম ব্যাচকে বগলদাবা করে ৪৫, ৪৬, ৪৭ ব্যাচকে বের করে দেওয়ার এ নাটক কি আমরা বুঝি না? আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এ ক্যাম্পাসকে আমরা অবৈধ ছাত্রমুক্ত, ধর্ষকমুক্ত ও মাদকমুক্ত করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল থেকে অছাত্রদের বের করার জন্য ৫ কর্মদিবসের সময় নিয়েছিল। সেই সময়ের ৪ কর্মদিবস অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাদের কাজ দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, তারা সেসব শিক্ষার্থীদেরকে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি করতে চান। আমরা আরও এক কর্মদিবস দেখব, আমাদের দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো। এ সময় অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৪৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়