• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo
তিস্তাপাড়ের বর্গাচাষী মফিজুলের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
তিস্তা নদীর তীর ঘেষা গ্রাম খোলাহাটির বর্গাচাষী মফিজুল। বয়স তার ৩৬ বছর। নিজের জমিজমা না থাকায় কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনও বা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সংসার চলে তার। তার ফাঁকে যেটুকু টাকা জমানো যায় তাই দিয়ে প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের কাছ থেকে সামান্য জমি বন্ধক নিয়ে চাষবাস করেন। এসব করে যতটুকু আয় রোজগার হয় তা দিয়েই ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে হয়। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ধরে জেলা শহর থেকে কিলোমিটার চারেক যাওয়ার পরেই মিলবে সাপ্টিবাড়ি-কালমাটি ইউনিয়ন সড়ক। সেই সড়কের আরও দুই কিলোমিটার এগোনোর পর রাস্তার একপাশে দেখা মেলে বেশ কিছু নিচু জমি। স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় দোলা। সেই দোলা থেকে তিন ৪০০ মিটার দূরেই তিস্তা নদী। জমিগুলোর কোনোটিতে তামাক, আলু কোনোটিতে সদ্য রোপণ করা হয়েছে বোরো ধানের চারা। চারপাশে কৃষকরা ব্যস্ত ফসলি জমির পরিচর্যায়। সেই ‘দোলা’র কর্দমাক্ত এক খণ্ড জমিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা মই ধরে টানছেন মাঝ বয়সি মফিজুল। মেদহীন শরীরে পেশীগুলো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। মফিজুলের মইটানাকে সহজ করতে কোদাল হাতে সহায়তা করছেন তার সহধর্মিণী তানজু বেগম। আত্মীয়ের কাছ থেকে দেড়'শ টাকায় এক শতক জমি ভাড়া নিয়ে বোরো বীজ বুনেছিলেন। সেই চারা এনে বন্ধকি জমিতে রোপণ করতে চলছে কাদা করার কাজ। মফিজুল জানান, দুই ভাই পাঁচ বোনের সবার ছোট সে। বাবা মোস্তাব আলী ছিলেন একজন প্রান্তিক কৃষক বা ক্ষুদ্র চাষী। বছর খানেক হলো তিনি মারা গেছেন। বাবার কাছ থেকে ভাগে পেয়েছেন সাত শতাংশ জমি। সেই সামান্য জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন। গত বছর জমানো এক লাখ দশ হাজার টাকা দিয়ে এক প্রতিবেশীর বিশ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়েছেন। নিজের আবাদ করার খরচ না থাকায় কিছু ধার আর বাকিতে সার কীটনাশক নিয়ে সেই জমিতে লাগিয়েছিলেন আমন ধান। যে ধান পেয়েছিলেন তার কিছু বিক্রি করে মহাজনের (সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী) বাকির টাকা শোধ করেছেন হালখাতায়। বাদবাকি রেখেছেন নিজের পরিবারের ছয়মাসের খাবার জন্য।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৬
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়