• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
অজানা ভাইরাসে ২ বোনের মৃত্যু, বাবা-মাকে রাখা হলো আইসোলেশনে
রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। শিশু দুজনের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ দুবছর বয়স হতো মুনতাহা মারিশার। আর ৩০ মে পাঁচ বছর হতো মুফতাউল মাশিয়ার বয়স। এ দুই শিশুর বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।  কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুশিশুকে খেতে দিয়েছিলেন কাজের বুয়া। না ধুয়েই এ বরই খেয়েছিল দুবোন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকেরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।  আর বিকেলে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে। শনিবার রাত ৮টার দিকে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের সঙ্গে। পাশাপাশি শয্যায় বসে ছিলেন তারা। পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুমেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে। পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। শহরে ঢোকার আগে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মারিশা মারা যায়। সিএমএইচে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, সে আর নেই। এরপর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরে নিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়। তিনি জানান, শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। পরদিন শনিবার বিকালে মাশিয়াও মারা যায়। পলি খাতুন আরও জানান, ছোট মেয়ে মাশিয়ার মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠতে দেখা যায়। আর মারিশার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ তিনি আগে কখনও দেখেননি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুবোনই বার বার পানি খাচ্ছিল। রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা দুজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তখন জানতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে কেউ নিপাহ ভাইরাসে মারা গিয়েছেন, এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা সঠিক যে, বাচ্চা দুজন কোনো একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। অসুস্থ হওয়ার আগে এটা বোঝা যায়নি। আবার অসুস্থ হওয়ার পরে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা দুজনের বাবা-মাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫২

ঈশ্বরদীতে নিপাহ ভাইরাসে একজনের মৃত্যু
পাবনার ঈশ্বরদীতে খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে খোকন মালিথার (৪২) মৃত্যু হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১৮) দুপুরে পাবনার সিভিল সার্জন শহিদুল্লাহ দেওয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার রাতে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। খোকন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুর গ্রামের রোস্তম আলী মালিথার ছেলে। রোস্তম আলী মালিথা ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পাশের স্থানীয় একটি খেজুরের বাগান থেকে খেজুরের রস খেয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন খোকন। পরিবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যান খোকন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র নিহতের আপন চাচা ইসহাক আলী মালিথা বলেন, খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাতে মারা গেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আজকে দুপুর ১২টার দিকে জানাজা নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে ঈশ্বরদী পৌরসভাসহ সর্বস্তরের মানুষ শোকাহত।  ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসমা খানম বলেন, তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে গিয়ে ও এলাকাবাসীসহ সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাবনার সিভিল সার্জন শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টিমের রিপোর্ট ঢাকায় পাঠাতে হবে।  তিনি আরও বলেন, গতমাসের আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে খেজুরের রস না খাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও খুজুরের রস না খাওয়ার জন্য মাইকিং, লিফলেটসহ সতর্ককরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তারপরও কিভাবে তিনি রস খেয়েছেন সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৪
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়