• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
দেশে জ্বালানি ও ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা চাচ্ছে এক্সিট
সুদহার বাড়ছে, ডলার রেটও বাড়ছে। রপ্তানি পণ্যের দর পাচ্ছি না। অপরদিকে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। এতে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা সেফ এক্সিট পলিসি চাইছে সরকারের কাছে। আক্ষেপ করে তারা বলেন, দিনশেষে আমরা ডলার দেশে আনার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমরা যদি এত প্রতিবন্ধকতার জন্য ব্যবসা করতে না পারি, তাহলে সরকারের ডলার আসবে কোত্থেকে? ব্যাংকগুলোর জন্য সরকার সহজ এক্সিট পলিসি করেছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ টাকা পাবে। এর বেশি পাবে না। অথচ শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সহজ এক্সিট পলিসি নেই। অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে তারা বলেন, আপনি আমাদের গ্যাস দেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের কারখানা চালানোর ব্যবস্থা করেন। এলপিজি দিয়ে এই কারখানা চালানো আর সম্ভব নয়। রেভিনিউ যা চান, আমরা দিতে রাজি আছি। ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং ব্যবসা না করে ডলার ব্যবসায় নেমেছে বলে অভিযোগ করে শিল্পোদ্যোক্তারা। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির সভায় এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন শিল্পোদ্যোক্তারা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং এনবিআরের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সভায় এমন নানা সংকটের সমাধান চাওয়া হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীমের সভাপতিত্বে সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ডলার সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে ব্যবসা এখন নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য এক্সিট পলিসি দিন। দিনশেষে আমরা ডলার দেশে আনার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমরা যদি এত প্রতিবন্ধকতার জন্য ব্যবসা করতে না পারি, তাহলে সরকারের ডলার আসবে কোত্থেকে? সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানি খাতের সংকট তুলে ধরে বলেন, সুদহার বাড়ছে, ডলার রেট বাড়ছে। ব্যাংক আমাদের সাথে ব্যবসা না করে ডলার ব্যবসায় নেমেছে। রপ্তানি পণ্যের দর পাচ্ছি না। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দরে অর্ডার নিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় এবার বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের জন্য সেফ এক্সিট পলিসি দরকার। ব্যাংকগুলোর জন্য সরকার সহজ এক্সিট পলিসি করেছে দাবি করে তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ টাকা পাবে। অথচ শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সহজ এক্সিট পলিসি নেই। ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায়ী মাসুদুল আলম মাসুদ বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। গ্যাসের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। গ্যাসের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না বলে হুঁশিয়ার করেন সরকারকে। দেশের সব শিল্পই গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য সবার খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে দাবি করে উত্তরা মোটর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে বলেন, আপনি আমাদের গ্যাস দেন। রেভিনিউ যা চান, আমরা দিতে রাজি আছি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের কারখানা চালানোর ব্যবস্থা করেন। এলপিজি দিয়ে এই কারখানা চালানো আর সম্ভব নয়। এ সময় কর ব্যবস্থায় হয়রানি ও জটিলতা দূর করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এ জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে বিশেষত ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগসহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ কমানো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। অপরদিকে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিপন্থী উল্লেখ করে বিকেএমইএর মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অস্বাভাবিকভাবে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে, যা এখন অসহনীয় হয়ে গেছে। এর মূল কারণ কর্মকর্তাদের প্রণোদনা। এর কারণে তারা অন্যায়ভাবে রপ্তানি আটকে রেখে জরিমানা আদায় করছেন। সবাইকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বলেন, সবার সুচিন্তিত মতামত বিবেচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সবার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করতে চান।
০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:১০

নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে লুটপাটে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা (ভিডিও)
বছর ঘুরে আবারও এসেছে মাহে রমজান। পবিত্র এই মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে লুটপাটে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা। যেকোনো ধর্মীয় উৎসবে বিশ্বের সব দেশে মূল্য ছাড় চললেও একমাত্র বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর কাছে ধর্মীয় মূল্যবোধ নয়, মুনাফাই মূল উদ্দেশ্য। তবে সরকার কঠোর হলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে রোজার আগেই হাজারও পণ্যের দাম কমিয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই খাদ্যপণ্য। আর রোজার অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুরের দাম কমিয়েছে ৪০ শতাংশ। ৯ শতাধিক পণ্যের দাম কমিয়েছে কাতার। গেল মঙ্গলবার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতেই নেওয়া হয়েছে এ উদ্যোগ। বিশ্বের অন্য মুসলিম দেশগুলোর উল্টো চিত্র শুধু বাংলাদেশেই। কমার পরিবর্তে সব পণ্যের দাম বাড়তি। যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের রোজার বাজার অনেকটাই বেসামাল। ক্রেতারা বলছে, বাজারে সবকিছুর দাম ভয়াবহ। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রোজায় সব দেশে পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে শুধু বাড়ে আর বাড়ে। সরকার চেষ্টা করেও সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না।  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র গবেষক ড. মাহফুজ কবির বলছেন, ব্যবসায়ীদের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে। তারা সে জায়গায় টাকাও খরচ করে না। তারমধ্যে রমজানে অতিরিক্ত লাভ করে। সেটা থেকেও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অতিরিক্ত লোভ থেকে দূরে থাকতে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে মুক্তবাজার অর্থনীতির অজুহাতে কেউ যেন লাগামহীন মুনাফা করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, এবার শুধু সতর্ক বার্তা নয়, রমজানে কারসাজি করলে শাস্তি পেতে হবে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়তি চাহিদার অজুহাতে প্রতিবছর রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লোটে ব্যবসায়ীরা। ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় সংস্থার হুঁশিয়ারি, কোন কিছুই যেন কাজে আসে না।
১৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:০৯

পাকিস্তান ছাড়ছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা
দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে তারা এখন দুবাইয়ে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রসারিত করছেন। গত ২০ মাস ধরে দুবাইয়ের আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছেন পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও ধনীরা। এছাড়া খুলেছেন আমদানি–রপ্তানির ব্যবসাও। খবর ডনের। আনোয়ার খাজা। করাচিতে তার অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা দুবাইয়ের আবাসন খাতে বিনিয়োগ করছেন এটা আশ্চর্যের বিষয় না। আশ্চর্যের বিষয় হলো পাকিস্তানিরা এখন সেখানে গিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য শুরু করেছেন। আনোয়ার খাজা নিজেও তার ব্যবসায়ের অধিকাংশ দুবাইয়ে সরিয়ে নিয়েছেন। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে পাকিস্তান। কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিচ্ছে দেশটিতে। অস্থিরতার এ সময়ে ধনীদের এভাবে দেশত্যাগ দুঃখজনক হলেও এ পথে পা বাড়ানোর পেছনে তাদের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে পাকিস্তানে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই পরিস্থিতি দেশটির ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করে তুলেছে। করাচির অনেক ব্যবসায়ী কোনো না কোনো গোষ্ঠীকে নিয়মিত চাঁদা দেন। আনোয়ার খাজা বলেন, ‘দুবাই থেকে ব্যবসা করা খুবই সহজ, কারণ আমদানি বা রপ্তানি করার জন্য সেখানে হিসাব খুলতে কোনো সমস্যা হয় না। তাই টাকা বানানোর জন্য দুবাইয়ের আবাসন খাত সত্যিই স্বর্গ।’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৫

রপ্তানিমুখী ৪৩ খাতে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’ বলছেন ব্যবসায়ীরা
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে রপ্তানিমুখী ৪৩টি খাতে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের মধ্যে শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত খুঁজে পাচ্ছেন শিল্প মালিকরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ৩০ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে চূড়ান্তভাবে বের হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে রপ্তানিমুখী ৪৩টি খাতে নগদ প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে বলা হয়, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩টি খাতে রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দিয়েছে। ডব্লিউটিওর বিধিবিধান অনুসারে বিষয়টি রপ্তানিনির্ভর সাবসিডি (সাবসিডি কন্টিনজেন্ট আপন এক্সপোর্ট পারফরমেন্স) হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেইলিং মেজার্স (এএসসিএম) অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোন ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে উল্লেখ করে সার্কুলারে বলা হয়, উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে একত্রে প্রত্যাহার করা হলে রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। তাই এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে কমিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।   সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে জাহাজিকরণ করা পণ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪৩টি খাতে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার জন্য নতুন প্রণোদনার হার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে আক্ষেপ প্রকাশ করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, 'এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কোনো স্টেকহোল্ডারকে ডাকা হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন তিনি কিছু জানেন না। কেউ এ বিষয়ে জানে না। কেন এই ধরনের সার্কুলার হঠাৎ করে দেয়া হলো? এর সিদ্ধান্তের পেছনে কারা?'   এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে - এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বিশ্লেষণ বলছে, নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান ৫টি পণ্যে (টি-শার্ট, সোয়েটার, নিটেড শার্ট, পুরুষদের আন্ডার গার্মেন্ট এবং ওভেন ট্রাউজার ও জ্যাকেট) দেওয়া নগদ সহায়তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অথচ গত অর্থবছর এ খাতের মোট রপ্তানি আয়ের ৫৫.৫২ শতাংশই এসেছিল এই ৫টি পণ্যের উপর ভর করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান এই পাঁচ পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার।   একইভাবে রপ্তানি প্রণোদনার বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে নতুন বাজার খ্যাত জাপান, ভারত আর অস্ট্রেলিয়াকে। গত অর্থবছরে পোশাক খাতের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮ শতাংশ বা ৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার এ তিন দেশ থেকেই এসেছিল। প্রণোদনা কমানোর নামে পোশাক খাতে বিদ্যমান প্রণোদনার প্রায় ৭০ ভাগই তুলে নেওয়া হয়েছে।   এর আগে গত ২৪ আগস্ট দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে প্রণোদনা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেভাবেই ক্রয়াদেশ নিয়ে উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু মাঝপথে এভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন তারা।   রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের আকস্মিক সিদ্ধান্তে শুধু পোশাক খাতই নয়, চামড়া খাতের উপরও বড় চাপ পড়েছে। চামড়া খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ৭০ শতাংশ ক্রাস্ট লেদার রপ্তানি করা হয়। এখনও আমরা সেভাবে পণ্য বহুমুখীকরণে যেতে পারিনি। এমন পরিস্থিতিতে এভাবে প্রণোদনা বন্ধ করে দিলে তা খাতের জন্য একটি বিপর্যয় বয়ে আনবে। চাপ পড়েছে রপ্তানি বাজারে সম্ভাবনার আলো ছড়ানো পাট-প্লাস্টিকসহ সব খাতেই। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রপ্তানিতে দেয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়ে শিল্প মালিকরাও এক মত। তবে তা সহনশীল উপায়ে করার দাবি তাদের। বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিজ্ঞপ্তি প্রয়োগ হয়। এখনও সময় আছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করা হোক। আমাদের সঙ্গে বসে তারপর এমন কিছু ধীরে ধীরে করা হোক। আমি বলছি না, আমাদের সারাজীবন প্রণোদনা দিতে হবে।   বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে রপ্তানিকারকদের যতটা সম্ভব ছাড় দেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবিরের। তিনি বলেন, রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই প্রণোদনা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের সময় না দিয়ে হঠাৎ করেই নেওয়া এ সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে খুব একটা ভালো ফল নিয়ে আসবে না। সরকার হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে এক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।  
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২০
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়