• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
কাশ্মীরে জাফরান বাঁচাতে বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ
বিরিয়ানি-কোরমার মতো অনেক পদই জাফরানের ছোঁয়ায় বিশেষ রং ও গন্ধে বাড়তি মাত্রা পায়৷ অত্যন্ত দামী সেই উপকরণের ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে৷ কাশ্মীরের বিজ্ঞানীরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন৷ যতদূর চোখ যায়, উজ্জ্বল বেগুনি রংয়ের সম্ভার৷ কাশ্মীরের পাম্পোর গোটা বিশ্বে জাফরানের শহর হিসেবে পরিচিত৷ সেখানে জাফরান ক্রোকাস বা আঁশ প্রায় ৩০,০০০ পরিবারের আয়ের উৎস৷ বহু প্রজন্ম থেকে সেই ঐতিহ্য চলে আসছে৷ ফিরোজ আহমাদের পরিবারও সেই কাজ করে৷ শরৎকালে ক্রোকাস ফসল তোলার সময়ে তাঁর ছোট মেয়েও সাহায্য করে৷ ফিরোজও নিজের বাবা-মাকে সেই কাজে সাহায্য করতেন৷ কিন্তু তিনি কেসর নামে পরিচিত জাফরানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আজ উদ্বিগ্ন৷ ফিরোজ বলেন, ২০০৩, ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী এক কানাল বা শূন্য দশমিক এক দুই একর জমি থেকে এক কিলো কেসর পাওয়া যেতো৷ আর এখন এক কিলো পেতে ১৫ কানাল জমি লাগে৷ ফলে বুঝতে পারছেন, বিগত বছরগুলিতে কতটা অবনতি ঘটেছে৷ একই পরিমাণ জাফরান উৎপাদন করতে আরো বেশি জমির প্রয়োজন পড়ছে৷ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনেও সে বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে৷ গবেষক হিসেবে নাশিমান আশরফ কাশ্মীরে জাফরানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ সেই পাহাড়ি এলাকায় এই মশলা শুধু কোনো সাংস্কৃতিক সম্পদ নয়, মানুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে৷ ড. আশরফ বলেন, গত ১৩ বছর ধরে আমি স্যাফরন বায়োলজির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি৷ চাষিদের ফিডব্যাক অনুযায়ী জাফরান উৎপাদনের অবনতির তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে৷ প্রথমত উচ্চ মানের রোপণের উপাদানের অভাব রয়েছে৷ দ্বিতীয় কারণ কর্ম-রট রোগ৷ তৃতীয় কারণ সেচের ব্যবস্থার অভাব৷ দশ বছরেরও বেশি আগে তিনি এক বড় জিন তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি করেছিলেন৷ তাতে ৬০,০০০-এরও বেশি জাফরান ক্রোকাসের সিকুয়েন্স জমা রয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে, এমন গাছ সৃষ্টি করাই সেই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ ড. নাশিমান আশরফ জানান, আমরা জিনগুলি শনাক্ত করেছি৷ এখন আমরা উন্নত স্মার্ট জাফরান সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালাচ্ছি৷ খরা এবং অন্যান্য অ্যাবায়োটিক চাপ সামলাতে এবং কম রট রোগও প্রতিরোধ করতে পারবে সেই জাফরান৷ ইরানের পর ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান উৎপাদনকারী দেশ৷ ফুলের মধ্য থেকে জাফরানের উপকরণ বার করার জন্য অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন৷ এক কেজি খাঁটি জাফরান পেতে হলে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুলের প্রয়োজন হয়৷ সে কারণে জাফরানের আকাশছোঁয়া দাম৷ এক কিলোর দাম প্রায় দুই হাজার ইউরো হতে পারে৷  নাশিমান আশরফ কাশ্মীরের উত্তরে ইয়ারিখাহ তাংমার্গ অঞ্চল পরিদর্শন করছেন৷ তাঁর টিম সেখানকার খেতের জন্য ল্যাবে ক্রোকাস টিউবার চাষ করেছে৷ সেগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সক্ষম৷ এবার দীর্ঘ খরা বা আচমকা প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটলেও সেই গাছ টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে এই গাছ কুখ্যাত কর্ম রট প্রতিরোধ করতে পারবে৷ ড. আশরফ বলেন, আমরা দশটি জেলাতেই সফলভাবে জাফরান চাষ করতে পারি৷ তবে এবার আমরা সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারণের কথা ভেবেছি৷ আমরা এখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে জম্মুতে আমাদের স্থাপনায় সেগুলির মান বিশ্লেষণ করবো৷ এখানে উৎপাদিত জাফরানের মধ্যে খাঁটি জাফরানের সমান পরিমাণ কম্পাউন্ড আছে কিনা, তা পরীক্ষা করবো৷ এখানে বহুকাল কোনো জাফরান চাষ হয়নি৷ কিন্তু জলবায়ু-প্রতিরোধী নতুন ফুলগুলি কিন্তু ভালোভাবে বেড়ে উঠছে৷
২২ মার্চ ২০২৪, ১৬:০১
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়