• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
জেলিফিশে বেকায়দায় জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে ভাসছে অসংখ্য জেলিফিশ। চরম বেকায়দায় পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। জেলিফিশের কারণে ঠিক মতো সমুদ্রে জাল ফেলতে পারছেন না মৎস্য শিকারীরা। জালে আটকে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মেরুদণ্ডহীন এ জলজপ্রাণী। ছিঁড়ে যাচ্ছে জেলেদের জাল। তাই বাধ্য হয়ে জাল তুলতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন উপকূলের শত শত সমুদ্রগামী জেলে। গত ১৫ দিন যাবৎ এসব জেলিফিশ জেলেদের জালে জড়াচ্ছে।         সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের আন্ধারমানিক মোহনার লেম্বুরচর থেকে পূর্ব দিকে কাউয়ারচর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত জেলিফিশ। জেলেরা জানিয়েছেন, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চরবিজয়ের বালুতে শত শত জেলিফিশ আটকে আছে। জেলেদের জালে জড়িয়ে মারা যাওয়া জেলিফিশগুলো স্রোতে ভেসে সৈকতের যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে। এগুলো পচে এক ধরনের পোকার জন্ম নিয়েছে। পচা দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অতিরিক্ত জেলিফিশের কারণে বেকার মৎস্য শ্রমিকরা ছেঁড়া জাল বুনছেন। কেউ কেউ সমুদ্রে থেকে জাল তুলে তীরে নিয়ে আসছেন। কেউ আবার শ্যাওলা ধরা জাল ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। খুঁটা জালের মাছ ধরা ট্রলারগুলো সৈকতে নিরাপদে রাখছেন।  সৈকতের পূর্ব দিকের ঝাউবাগান পয়েন্টে মম্বিপাড়া গ্রামের জেলে রবিউল হাসান বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে নোনার (জেলিফিশ স্থানীয় জেলেদের ভাষায় ‘নোনা’) জন্য ঠিকমত মাছ ধরতে পারছি না। সব জাল ছিঁড়ে গেছে। এখন ছেঁড়া জাল বুনছি’।  লেম্বরবন এলাকার প্রবীণ জেলে ইউনুচ দালাল বলেন, এ বছর সাগরে অনেক বেশি জেলিফিশ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। পানিতে ভাসা অবস্থায় এগুলো কোনোটা চাঁদের মতো আবার কোনোটা অক্টোপাসের মতো দেখা যায়। চর গঙ্গামতি এলাকার জেলে হারুন প্যাদা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব জেলিফিশ সাগরে ভাসতে দেখছি। আমাদের জালে এগুলো আটকে যায়। তবে জালে আটকা পড়লে আমরা ছাড়িয়ে দিলে সেগুলো আর বাঁচে না। গভীর সমুদ্রের মৎস্য শিকারী জেলে ইউনুচ আলী বলেন, প্রতি বছরই নোনা (জেলিফিশ) আসে। কিন্তু এ বছর পরিমাণে অনেক বেশি। অতিরিক্ত জড়ানোর কারণে স্রোতে জাল ছিঁড়ে যায়। সব জাল কূলে আনা হয়েছে। এখনও ছিঁড়া জাল মেরামত করছি।  হোসেনপাড়া গ্রামের জেলে মো. সোহরাফ হোসেন জানান, জালে জড়ানো জেলিফিশগুলো তারা সমুদ্রে ফেলে দেন। কিছু বেঁচে গেলেও বেশিরভাগ মারা যায়। কারণ এগুলো জালে জড়ালে কেটে ভাগ ভাগ হয়ে যায়। মারা যাওয়া নোনাগুলো (জেলিফিশ) জোয়ারের স্রোতে কূলে ভেসে আসে। এখনও এগুলো পচে পোকা হয়েছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।      মম্বিপাড়া রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকার জেলে মো. ইদ্রিস গাজী বলেন, গত ১৫ দিন ধরে হঠাৎ নোনা (জেলিফিশ) জালে জড়াচ্ছে। শুরুর দিকে কম থাকলেও এখন পরিমাণে অনেক বেশি। যার কারণে মাছ ধরতে পারছি না। জালপালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই জাল তুলে এনেছি। নোনা না কমা পর্যন্ত সাগরে জাল ফেলবো না। ইকোফিশ-২ প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার সহকারী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, এ জেলিফিশগুলো জোয়ারের স্রোতে ভেসে এসে সৈকতের বালুতে আটকে মারা যায়। এরা সাঁতার কাটতে পারদর্শী না বিধায় ভাটার স্রোতে নেমে যেতে পারে না। তবে হঠাৎ করে জেলিফিশের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে, সমুদ্রের স্বাস্থ্য ঠিক নেই। আবার এও হতে পারে জেলিফিশ যেসব মাছের খাবার সেসব মাছ কমে গেছে। যার ফলে আধিক্য বেড়ে গেছে তাদের।  তিনি আরও বলেন, জেলিফিশের শরীর খুবই বিষাক্ত তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মাছের পোনাও মারা যাচ্ছে। গবেষণা করলে হয়তো সঠিক কারণ শনাক্ত হবে।  কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সমুদ্রে জেলিফিশগুলো মূলত আওরেলিয়া ও আওরেটা প্রজাতির জেলিফিশ। মেরুদণ্ডহীন এসব প্রাণী চাঁদের মতো দেখতে বলে এদেরকে মুন জেলিফিশও বলা হয়। এগুলো মূলত সাঁতারে তেমন পারদর্শী নয়। অনেক সময় খাদ্য অন্বেষণ কিংবা বাতাসের টানে ওপরের দিকে চলে আসে জেলিফিশ। পরে বালুতে আটকা পরে মারা যায়। প্রতি বছরের এ মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় জেলিফিশের দেখা মেলে। এগুলো বেশি দিন স্থায়ীভাবে থাকে না। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে কমে যাবে।  
২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৯

ঘুড়ি-ফানুসেই বেকায়দায় মেট্রোরেল
মেট্রোরেলের উভয় পাশের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ঘুড়ি, ফানুস বা গ্যাস বেলুন উড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই তা মানছেন না। এর ফলে এসব ঘুড়ি ও ফানুস ইলেকট্রিক তারের ওপর পড়ে বারবার ব্যাহত হচ্ছে মেট্রোরেল চলাচল। এতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরাও। সবশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কাজীপাড়ায় ইলেকট্রিক তারের ওপর ঘুড়ি পড়ে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ডিএমটিসিএলের ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকায় ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানো হয়। এর ফলে মেট্রোরেল পরিচালনা ব্যাঘাত ঘটছে। এটি খুবই দুঃখজনক। মেট্রোরেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের সবার উচিত এর প্রতি যত্নবান হওয়া। এদিকে মেট্রোরেলের পার্শ্ববর্তী ১ কিলোমিটারের মধ্যে কেউ যেন ঘুড়ি, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ইত্যাদি ওড়াতে না পারে, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পাঠানো চিঠিতে ডিএমটিসিএল-এর সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ মেট্রোরেলের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইনে এ ধরনের বস্তুর কারণে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। চিঠিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুটি ঘুড়ি ও ঘুড়ির সুতা পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত অংশের বৈদ্যুতিক লাইনে আটকে থাকায় নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী মেট্রো ট্রেনের চলাচল ব্যাহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে, গত থার্টি ফার্স্ট নাইটে মেট্রোরেলের বিভিন্ন অংশে ফানুস পড়ে চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মীরা সেসব ফানুস অপসারণ করে মেট্রোর চলাচল স্বাভাবিক করে। তারও আগে ২০২২ সালে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরপরই থার্টি ফার্স্ট নাইটে আগারগাঁও-উত্তরা রুটে ফানুস পড়ে প্রায় ১০টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেবারও ডিএমটিসিএল কর্মীরা রাত জেগে এসব ফানুস অপসারণ করেছিলেন। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য মেট্রোরেলের উভয় পাশের ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসরতদের ঘুড়ি, ফানুস, গ্যাস বেলুন বা এ ধরনের যেকোনো বিনোদনসামগ্রী না ওড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে প্রতিদিন ঢাকা মেট্রোরেল চলাচল করছে। এ বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর ঘুড়ি, ফানুস, গ্যাস বেলুন ইত্যাদি আটকানোর ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে এবং ঘুড়ি, ফানুস, গ্যাস বেলুন ইত্যাদি অপসারণের জন্য সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২০
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়