রাজধানীতে কুকুর-বিড়ালের বিলাসবহুল হোটেল!
যত বিচিত্র মানুষ, ততই বিচিত্র তাদের শখ-আহ্লাদ। মানুষের এই বিচিত্র শখেরই যেন প্রতিনিধিত্ব করছে রাজধানী ঢাকার কিছু বিলাসবহুল হোটেল। তবে, হোটেলগুলো মানুষের থাকার জন্য নয়। পোষা কুকুর-বিড়াল থাকে সেখানে।
এমনই একটি হোটেল ফারিঘর। কী নেই মিরপুরের চিড়িয়াখানা এলাকায় অবস্থিত অভিজাত এই প্যাট হোটেলটিতে! আপনার শখের পোষা প্রাণীটার আরামের জন্য এসি আর হিটারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে হোটেলটিতে। প্রতিবেলায় তাদের সামনে হাজির করা হয় রুচি অনুযায়ী স্বাস্থসম্মত সব খাবার। প্রতিদিন নিয়ম করে গোসল করানো হয় শ্যাম্পু দিয়ে। আপনার পোষা প্রাণীটির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যও আছে সুব্যবস্থা।
এতসব সুবিধা থাকায় হোটেলটি পরিচিতি পেয়ে গেছে কুকুর-বিড়ালের ফাইভস্টার হোটেল হিসেবে। প্রায় এক বছর ধরে সেখানে থাকছে প্যান্ডা নামের একটি পোষা বিড়াল।
তার মালিক ডাক্তার মাইমুনা সিফা। বর্তমানে তিনি আছেন ইউরোপের কোনও একটি দেশে। বিদেশে যাওয়ার পর প্যান্ডার দেখভাল করতেন তার বাবা-মা। কিন্তু তাদের অসুস্থতার কারণে যত্নআত্মিতে ঘাটতি পড়ে যায় প্রিয় প্রাণীটির। এরপর বিড়ালটিকে হোটেলে পাঠায় সিফা।
প্যান্ডার প্রিয় খাবার মুরগির মাংস। প্রতিদিন ৩ বেলা সেদ্ধ করে দিতে হয় মাংস। মাসে ১২ কেজির মতো মাংস লাগে প্যান্ডার। ৪২০ টাকা কেজি দরে তার পেছনে খাবারে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো। বছরে ৬০ হাজার টাকার কিছু বেশি। তাছাড়া প্যান্ডার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় আরও কিছু টাকা।
প্রতিমাসে বিদেশ থেকে প্যান্ডার জন্য মাসিক হোটেল ভাড়া পাঠায় তার মালিক ডা. সিফা। হোটেলে বিড়াল রাখতে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গুণতে হয় ৭শ টাকা। কিন্তু প্যান্ডার জন্য ছাড় দিয়ে ভাড়া প্রতিদিন ৪০০ টাকা। সেই হিসেবে বিড়ালের জন্য বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা রুম ভাড়া পরিশোধ করেছেন ডাক্তার সিফা। নিয়মিত ফোন করে প্রিয় বেড়ালের খোঁজখবরও রাখেন তিনি। পশু হলেও হোটেলে আদর-সোহাগের কমতি নেই প্যান্ডার।
ফারিঘরের ম্যানেজার তোয়ানুর রাহা জানান, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এই প্যাট হোটেলে আছে প্যান্ডা। ও হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে পুরাতন গেস্ট এবং সবচেয়ে লম্বা সময়ের গেস্ট। এই হোটেলে বিড়াল রাখতে চাইলে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ৭শ টাকা । তবে প্যাকেজে ৭ দিনের বেশি রাখতে তার জন্য ছাড় দিয়ে রাখা হয় ৫৭০ টাকা করে। ১৫ দিনের বেশি সময় রাখলে তার জন্য ভাড়া ৫০০ টাকা করে। এক মাসের বেশি সময় কেউ রাখলে তার জন্য ৪শ টাকা হোটেল ভাড়া দিতে হয়। প্যান্ডা যেহেতু এক বছর ধরে আছে তার জন্য ৪০০ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন তার মালিক ডা. সিফা।
প্যান্ডার মতো আরও অন্তত ৩৬টি পোষা প্রাণী আছে ফারিঘর নামে মিরপুরের এই প্যাট হোটেলে। তাদের দেখাশোনা করেন হোটেল ম্যানেজার তোয়ানুর রাহা।
তিনি জানান, বিড়াল বা কুকুরকে বিদেশে নিতে দেশ ভেদে ভ্যাক্সিনেশনের পাশাপাশি লাগে বিশেষ পাসপোর্টও। সেই জটিলতা এড়াতেই অনেকে তার হোটেলে রেখে যান প্রিয় প্রাণীটি।
রাহা জানান, তাদের হোটেলে প্রতিটি বিড়ালের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পৃথক কেবিন। বিশেষ আদর আপ্যায়নের সঙ্গে আছে ক্যাট ট্রি, কুশন ও লিটারের ব্যবস্থা। কুকুরের জন্য বিছানা বালিশ তো আছেই, আবার প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
অবশ্য, এই হোটেলে শুধু থাকার ব্যবস্থা আছে বিড়াল বা কুকুরের জন্য। খাবার দিয়ে যেতে হয় প্রাণীটির মালিককে। কারণ প্রতিটি বিড়াল বা কুকুর আলাদা আলাদা খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত। কেউ প্যাকেট ফুড খায়, কেউ ড্রাই ক্যাট বা ডগ ফুড খায়। কেউ পাউচ খায়। কেউ মাছ খায় কেউ মাংস খায়। যে যে খাবারে অভ্যস্ত তাকে সেই খাবার দিতে হয়; না হয় তাদের ফুড পয়জনিং হতে পারে। বমি হতে পারে।
হোটেল কর্তৃপক্ষের মতে, যত্নের কুকুর-বিড়ালকে রাখার জায়গা না থাকায় এতদিন সমস্যায় পড়তে হতো প্রাণীপ্রেমীদের। তবে, ফারিঘরের মতো হোটেল গড়ে ওঠায় এখন স্বস্তি এসেছে কর্মব্যস্ত মানুষের। সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় নিজেদের পোষা প্রাণীকে হোটেলে রেখে যান অনেকে। মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠা এমন হোটেলের চাহিদাও দিনে দিনে বাড়ছে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩৭