'শরীফার গল্প' নিয়ে শিক্ষাবিদদের ভাবনা / বিতর্ক না বাড়িয়ে ধারণাগত ত্রুটির দিকে নজর দিতে পরামর্শ
পাঠ্যপুস্তক ছেড়ে মানববন্ধন ও ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্প। তৃতীয় লিঙ্গ নাকি রূপান্তরিত- কোন শ্রণির প্রতিনিধিত্ব করছে গল্পটি, একরকম ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে। দুই মেরুতে অবস্থানরতদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পাশাপাশি চলছে পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক। তবে, নেতিবাচক বিতর্ক না বাড়িয়ে গল্পটিতে ধারণাগত ত্রুটির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।
শিক্ষা গবেষকদের মতে, ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গকে পরিচয় করাতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডারের অবতারণা করাটা ধারণাগত ত্রুটি। আর সমাজকল্যাণ গবেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি উচ্চশ্রেণির পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা কার্যকরী হতে পারতো হয়তো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হাফিজউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ক্লাসের পাঠ্যসূচিতে যদি অন্তর্ভুক্ত করতে তা হলে আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়কে ফোকাস করা জরুরি এবং এটা প্রয়োজনে সপ্তম শ্রেণি থেকে আরও ওপরের ক্লাসে নেওয়া যেতে পারে, যাতে করে তারা বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পে মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রের যে শারীরিক পরিবর্তন দেখানো হয়েছে সেটা ট্রান্সজেন্ডারের ধারণা দেয়। আবার একইসঙ্গে পরবর্তীতে ফোকাস করা হয়েছে হিজড়ার বিষয়ে। সুতরাং এটা তথ্যগত ভ্রান্তি, যেটা সংশোধন করা যেতে পারে।
শিক্ষা গবেষকদের মতে, যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে যে উপায়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে তা কাঙ্খিত নয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদের ভাষা এমন হওয়া উচিত নয়।
পাঠ্যপুস্তকের এই একটি গল্প আবারও বিভেদের রেখা টেনেছে ধর্মীয় চিন্তাবিদ ও প্রগতিশীলদের মাঝে। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতেই অবস্থান ধর্মীয় চিন্তাবিদ ও প্রগতিশীলদের।
এ বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো প্রকার পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা চলবে না। অর্থাৎ মৌলিক কোনো পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।
মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর জানান, সংবিধান সব নাগরিককে সমান অধিকার দিয়েছে। তাই ভিন্নতা আমাদের মেনে নিতে হবে। তিনি মনে করেন, এ বিষয়টা সরকারকে আরও স্পষ্ট করা উচিত।
থার্ডজেন্ডার রাখি শেখ জানান, চাইলেই তো আর মেয়ে হওয়া যায় না। আমি নিজেকে মেয়ে দাবি করলাম আর মেয়ে হয়ে গেলাম, এমন হয় না। থার্ডজেন্ডার আর ট্রান্সজেন্ডার এক না।
প্রসঙ্গত, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সংযোজিত ‘শরীফার গল্পে’র সমাধান টানতে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৫