• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
বায়ুদূষণ রোধে সরকারের ১২ নির্দেশনা  
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় রোববার (৩ মার্চ) আবারও প্রথম স্থানে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। এদিন সকালে আইকিউএয়ারের শহরটির বাতাসের মানসূচকে স্কোর ছিল ২১১, যা বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বায়ুর এ মান খুব অস্বাস্থ্যকর হিসাবে ধরা হয়। বায়ুদূষণের তালিকায় বারবার শীর্ষে আসায় তা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-১) মোহাম্মদ সামসুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এ-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে আদেশ জারির চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই আদেশে ইউটিলিটি লাইন মেরামত, দোকানপাটের ধুলা ঝাড়ু দিয়ে রাস্তায় না ফেলাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (নগর উন্নয়ন) নুরে আলম ছিদ্দীকী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে এগুলো বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এসব নির্দেশনার কোনো সুফল আসবে না। দূষণের দিক দিয়ে আমরা বারবার কেন শীর্ষে থাকি তা নিয়ে সরকার কমবেশি অবগত। দেশের মোট উন্নয়নকাজের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই সরকারিভাবে করা হয়। সেখানে সব প্রকল্পেই পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ উৎপাদন, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে নীতিমালা কেউ মানছে না। সিটি করপোরেশনগুলো তাদের তথ্যমতে, সংস্থাগুলো ৬০ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বাকি ৪০ শতাংশ বর্জ্য থাকে ব্যবস্থাপনার বাইরে। এ বিশাল পরিমাণ বর্জ্য পরিবেশদূষণ করে থাকে। এ ছাড়া জনগণ তার আঙিনা পরিষ্কারের বিষয়েও দায়বদ্ধ না। তারা নিজের জায়গাটুকু ঝাড়ু দিয়ে ময়লা রাস্তায় ফেলে দেয়। ফলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে কোনো সুফল আসবে না। পরিবেশমন্ত্রী স্থানীয় সরকার বিভাগে গত মাসের শুরুর দিকে একটি চিঠি দেন। চিঠি দিয়ে বলা হয় রাস্তার সংস্কারকাজ, ড্রেনের নর্দমার বর্জ্য এবং বিভিন্ন মার্কেট বা দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে রাস্তায় না ফেলার জন্য। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার আওতাধীন পরিচালিত নির্মাণকাজের সময় ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন ও মজুত করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ধূলিদূষণ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত বেষ্টনীর ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার পার্শ্ববর্তী ড্রেন বা ড্রেন থেকে বর্জ্য তুলে উন্মুক্তভাবে ফেলে না রেখে দ্রুত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তার উন্নয়নকাজ যথাসম্ভব রাত্রিকালীন সম্পন্ন করা ও নির্ধারিত স্থানটি বেষ্টিত রেখে দৈনিক একাধিকবার পানি ছিটানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়।    এদিকে ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে আছে বাইরে বের হলে মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাসার বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না। দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরের জানালা বন্ধ রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইকিউএয়ারের দেওয়া রোববারের তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। এদিন ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।
০৪ মার্চ ২০২৪, ১০:২৩
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়