• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
শ্যালিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বলি ব্যবসায়ী নিজাম
ফরিদপুরের মধুখালীতে শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের হামলায় নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি।  বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের হাটঘাটা গ্রামে নিজাম উদ্দিন শেখের বসতঘরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নিজাম উদ্দিন শেখ (৩৫) রায়পুর ইউনিয়নের হাটঘাটা গ্রামের মৃত মানিক শেখের ছেলে। তিনি একটি খাবার হোটেলের ব্যবসায়ী। এলাকাবাসী ও মধুখালী থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার শ্যালিকাকে (১৯) নিয়ে অসুস্থ শ্বশুরকে দেখার জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান নিজাম। ওইদিন ফেরার পথে তিনি শ্যালিকাকে তার বাবার বাড়ি মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নের দিঘুলিয়াতে পৌঁছে না দিয়ে হাটঘাটা গ্রামে নিজ বাড়িতে এনে রাখেন। নিজামের সঙ্গে তার শ্যালিকার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এর আগে ওই মেয়ের বিয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে নিজামের হস্তক্ষেপে সেই বিয়ে হয়নি। এজন্য নিজামের শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিজামের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েটিকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে তা উপেক্ষা করে তাকে নিজের বাড়িতে রাখেন নিজাম। এজন্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিজামের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বাড়িতে এসে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন। তারা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নিজামের ডান হাত, দুই পা এবং মাথায় গুরুতর জখম করেন। এক পর্যায়ে তারা নিজামের দুই চোখে চুন ঢেলে দেন। পরবর্তীতে নিজামের বড় ভাই আজিমুদ্দিন শেখ গুরুতর আহত নিজামকে উদ্ধার করে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানে করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজামকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে স্থানান্তর করেন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ফরিদপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পথে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে নিজাম মারা যান। মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
২২ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৯

১৬৯ শিশুর ভর্তি বাতিল  / মাউশি-ভিকারুননিসার ভুলের বলি কোমলমতিরা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ম শ্রেণিতে অনিয়মে ভর্তি হওয়া ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করে শুন্য আসনে ৭ দিনের মধ্যে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ছাত্রী ভর্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুইদিন আগে হাইকোর্ট এই রায় দেন। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা মেনে ১৬৯ শিশুর ভর্তি বাতিল করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে অনেক অভিভাবক তার সন্তানের ভর্তি বাতিলের নোটিশ পেয়েছেন। দুই মাস ক্লাস করার পর সন্তানের ভর্তি বাতিলের এমন খবরে মাথায় যেন বাজ পড়েছে তাদের। অভিভাবকদের দাবি, তারা কোনো ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেননি। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেও সন্তানকে ভর্তি করাননি। মাউশি ও ভিকারুননিসার ভুলে কেন তাদের শিশুসন্তানদের ভবিষ্যৎ এভাবে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের এই প্রশ্নের জবাব নেই ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মাউশি কর্মকর্তাদের কাছেও। তারা বলছেন, ত্রুটি হয়েছিল, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছিল। অন্য দুজন অভিভাবক রিট করেছিলেন। উচ্চ আদালত সেটার সুরাহা করেছেন। তারা এখন আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি স্কুলের ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করে। নীতিমালার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স কমপক্ষে ৬ বছরের বেশি হতে হবে। সেই হিসাবে সর্বনিম্ন জন্ম তারিখ হবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। তবে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ, সর্বোচ্চ বয়সসীমা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। এরপর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভিকারুননিসা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম শ্রেণির জন্য ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুরা যোগ্য বিবেচিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে। পরে ২৮ নভেম্বর ঘটা করে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে লটারির আয়োজন করে মাউশি। লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেওয়া হয়। এরপর যে শিক্ষার্থী যে প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, তারা সেখানে নির্ধারিত দিনে কাগজপত্র নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হয়। তখন ভিকারুননিসা জানতে পারে মাউশি থেকে লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের নামও রয়েছে। বিষয়টি মাউশিকে অবগত করে চিঠি দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাউশির পরামর্শে গত ২ ডিসেম্বর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, সব সদস্য, শিক্ষক ও ভর্তি কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। সেখানে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণ করা যেসব শিশু লটারিতে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে ২০১৫ সালের ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া ১৫৯ জন ছাত্রী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। তবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া পাঁচজনকে ভর্তির অযোগ্য বলে বিবেচনা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন। এরপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক–২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী আদালতে হাজির হন। তিনি ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আদালতে। তারপর মাউশি থেকে ভিকারুননিসাকে চিঠি দিয়ে ভর্তি বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ভর্তি বাতিলের ফলে শূন্য হওয়া আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আগামী সাতদিনের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুইদিন আগে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে আমি মাধ্যমিকে নেই। কলেজ বিভাগে দায়িত্বে আছি। তবে আমার সময়েই এটা ঘটেছে, তা সত্য। নীতিমালা অনুযায়ী ৬ বছরের বেশি বয়সীরা প্রথম শ্রেণির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া শিশুর ভর্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু ভিকারুননিসা ভুল করে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া শিশুদের যোগ্য বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেটা আমরা পরে সংশোধনও করেছি চিঠি দিয়ে।’ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ভর্তি গভর্নিং বডি ও ভর্তি কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে হয়েছে। মাউশির পরামর্শে আমরা এটা (গভর্নিং বডির সভা) করেছিলাম। উচ্চ আদালত যেহেতু এ নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, এখন মন্তব্য করাটা আইনের লঙ্ঘন।  এদিকে ভর্তি বাতিলের খবরে শিশুরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা কিছুতেই সন্তানের ভর্তি বাতিল মানতে পারছেন না। দুই মাস ক্লাস করার পর এখন সন্তানদের অন্য কোথাও ভর্তি করানোর চিন্তাও করতে পারছেন না বাবা-মা। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের ভর্তি বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে আইনি লড়াইয়েও নেমেছেন অভিভাবকরা। তবে, মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলছেন, ‘কার দোষ, কার ভুল এগুলো জিজ্ঞেস করে তো আর লাভ নেই। উচ্চ আদালত এটার বিহিত করে দিয়েছেন। এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না। ভবিষ্যতে বিষয়টি (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বয়স) নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রাখা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
০৮ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৪
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়