• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo
জাবিতে প্রতিবাদী গণ-ইফতারের আয়োজন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রতিবাদ জানিয়ে গণ-ইফতারের আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৪৯ ব্যাচের উদ্যোগে এ গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। ইফতারে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল থেকেই আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ইফতারের উদ্দেশ্যে আসতে থাকে। ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী তাদের কেউ প্লেট বিছিয়ে দিচ্ছেন। কেউ তাতে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু সাজিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ ব্যস্ত শরবত বানাতে। অন্যদিকে একদল শিক্ষার্থী আবাসিক হলগুলো থেকে আসা ছাত্রদের সারি সারি বসিয়ে দিচ্ছেন। আরেকদল ব্যস্ত বসে থাকা শিক্ষার্থীদের ইফতার সরবরাহে। এ সময় কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ-নাত পরিবেশন করতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এক পর্যায়ে সময় ঘনিয়ে এলে সম্মিলিত মোনাজাত করেন শিক্ষার্থীরা। শেষে মসজিদের মাইকে আজানের পর ইফতার শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আয়োজকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে প্রতিবাদস্বরূপ এই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই এর অর্থায়ন করেছেন। প্রাথমিকভাবে ৫০০ জনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু উপস্থিত ছিল প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীরা কেউ নিজ খরচে ইফতার কিনে এনেছেন আবার কেউ তাদের বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে ইফতার করেছেন। ইফতার করতে এসে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি নীরব প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদে শামিল হতে এখানে এসেছি।’ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাঙালি মুসলমানের ঐতিহ্য ইফতার মাহফিল। নোবিপ্রবি ও শাবিপ্রবিতে ইফতার পার্টি নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই গণইফতার কর্মসূচি পালন করেছি। ইফতার মাহফিল বন্ধ করলে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি এই আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান করছি।’ আয়োজকদের পক্ষে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর বলেন, ‘দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞায় এখান থেকে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতার আয়োজন করায় কতিপয় দুষ্কৃতিকারী আলোচনা চলাকালে আয়োজকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা জাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয় ও এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যারা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় এবং ইসলামের নামে কটূক্তি করে আমরা তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।’ উল্লেখ্য, গত সোমবার শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবি প্রশাসন ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ জারি করে। এতে দেশব্যাপী শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসনের এমন নির্দেশের নিন্দা জানান।
১৪ মার্চ ২০২৪, ০২:২৮

জাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ
ধর্ষণের বিচারসহ ৫ দফা দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে ধ্বনির দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তির সঞ্চালনায় এ প্রতিবাদী  সাংস্কৃতিক সমাবেশ পালন করা হয়। প্রতিবাদী সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী বলেন, এ ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড নয়। আমরা দেখেছি এ ধরনের অভিযোগ বারংবার আসার পরেও সে অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয় না। সাংস্কৃতিক জোট বলতে চায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে বিদ্যমান সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে ও আশু সুরাহা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে প্রশাসন চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসার পরেও চুপ করে বসে থাকে, শিক্ষার্থীরা সেই প্রশাসনকে মান্য করে না। ধর্ষণকাণ্ডের পর থেকে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব থেকে যে পিছনগুটিয়ে চলে এসেছে তার দায় এই প্রশাসনকে নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল জনসাধারণের জন্য নিরাপদ করতে হবে। প্রশাসন যদি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের নিরসনে কাজ না করে তবে আমরা আরও কঠোর ভূমিকা নিতে বাধ্য হবো। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, যারা ধর্ষক তারা একদিনে ধর্ষক হয়ে উঠেনি। তাদের পেছনে আছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদদ, তার পাশাপাশি  রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আস্থার ছায়াতল। এই আন্দোলন শুধু ধর্ষকের বিরুদ্ধে নয়, এই আন্দোলন সেসব অছাত্র, মাদক চোরাচালানকারী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যারা মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে এ ক্যাম্পাসে। এ আন্দোলন সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রশাসন যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনিকে তাদের ছায়তলে রেখে সুরক্ষা দেয়। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, আমরা জানতাম এ ক্যাম্পাসে রাতে-দিনে নারীরা সবসময় নিরাপদ। এই যে মোস্তাফিজ ও মুরাদ তারা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং ও গণরুম বন্ধ হয়নি এখনো। যে গণরুম বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটি মোস্তাফিজ ও মুরাদ তৈরি করছে সেই গণরুমকে বন্ধ করতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার হয়নি। যদি মোস্তাফিজ জানতো এই জনির বিচার হয়েছে তাহলে সে ধর্ষণের মতো এরকম কাজ করার সাহস পেত না। ধর্ষণকাণ্ডে শুধু মোস্তাফিজ ও মুরাদরা জড়িত নয়। এর পেছনে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান বলেন, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মূলত জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের উৎপত্তি। আমরা সবসময়ই আন্দোলন করার চেষ্টা করেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। দেশের প্রচলিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে সেই মামলাটি যেন দ্রুত কার্যকর হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনের মূল যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে হলগুলো থেকে অছাত্রদের বিতাড়িত করা। এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যারা হলে অনেকগুলো সিট একসঙ্গে দখলে রেখেছেন এবং পলিটিকাল ব্লক তৈরি করে থাকেন তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরন এহসান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং তার প্রেক্ষিতে মুহূর্মুহু যেসব তথ্য উঠে আসছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে, মাদক, চোরাকারবারি এবং অভারল ক্যাম্পাসের শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা যারা সংস্কৃতি কর্মী, আমরা জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সংস্কৃতি কর্মী রয়েছি, আমরা শিল্পের মাধ্যমেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরতে সর্বদা চেষ্টা করি। এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট তাদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে। দফাগুলো হলো - চলমান ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা এবং জড়িত সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে পূর্বের সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার পূর্বক দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, হল থেকে অছাত্রদের বের করে সিট সংকট নিরসন করতে হবে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়