বিদ্যালয়ের পুকুর পাড়ের মাটি ও গাছ কাটার অভিযোগ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে
রাতের আঁধারে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুর পাড়ের মাটি ও গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৪ জনের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল হক জানান, গত ২৪ জানুয়ারি ভোর রাতে আমরাইদ গ্রামের হান্নান সরকারের ছেলে রিপন সরকার, আনোয়ার হোসেন সরকারের ছেলে মাসুদ সরকার, মাহবুব সরকারের ছেলে সুজা সরকার, আক্কাছের ছেলে মোস্তফা বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ের ১০ ফুট গভীর ও ৪০ ফুট প্রস্থ’ করে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। একই সঙ্গে ১৫০টি আকাশি গাছ ও ১৮০টি বাঁশ কেটে নেয়। এতে বিদ্যালয়ের ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাপাসিয়ার লালচে রঙের এঁটেল মাটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ফসলি কৃষি জমিতে খননযন্ত্র (ভেক্যু) বসিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছে। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। এর ফলে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা জমিতে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। এতে কমে ফসল উৎপাদন। অবৈধভাবে মাটি কাটায় ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
উপজেলার লোহাদী গ্রামের মোস্তফা মিয়া বলেন, আমার বাড়ির পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্য আমাদের গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করেছে ভেক্যু ও ডাম্প ট্রাক। মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের বলেন, মাটি নিলে রাস্তা হবে। এতে চলাচলে সুবিধা হবে। এসব বলে রাস্তার পাশে কিছু গাছ কেটেছে মাটি ব্যবসায়ীরা।
আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জাহিদ হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের পুকুর পাড় থেকে মাটি ও গাছ গাছালি কেটে নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তাছাড়া আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাটি কেটে নেওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে থেকে ওই জায়গাটি বিদ্যালয়ের সম্পত্তি এবং ১৯৮০ সালে পুকুর নির্মাণ করেছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কাপাসিয়া উপজেলার গিয়াসপুর গ্রামের সেলিম মেম্বার এসব মাটি খরিদ করে কেটে নিয়েছে বলে জানতে পারি। পরে সেলিম মেম্বার নিজেই আমাকে বলেছে সে অভিযুক্তদের কাছ থেকে মাটি ক্রয় করেছে বলেও তিনি জানান।
আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজিং) কমিটির সভাপতি ইকবাল সরকার জানান, আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
মাটি ক্রেতা হাজী তাজ উদ্দীন মাস্টারের ছেলে সেলিম মিয়া বলেন, আমি কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রি করি। মাটি বিক্রেতারা অন্যায়ভাবে সরকারি স্কুলের মাটি বিক্রি করেছে তা আমার জানা ছিলো না। তিনি বলেন, মাটি এখনও আমার জিম্মায় রয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, যেকোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচল করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৪