• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
নির্বাচন বর্জন সংস্কৃতি বিএনপির জন্য বুমেরাং হবে
গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন যেকোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হাতিয়ার। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তারা জনগণের একেবারে কাছাকাছি যায়, নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে এবং নেতৃত্ব বিচার করে। শুধু যেসব রাজনৈতিক দল বা তাদের নেতৃত্ব বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা বদলের চিন্তা করে, তারাই নির্বাচন অপছন্দ করে কিংবা নির্বাচনের ধার ধারে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপাতত সেরকম পরিস্থিতি নেই। সহজ করে বললে সেরকম, বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নেই, যারা বিপ্লব করে সরকার পরিবর্তন করতে পারবে বা ক্ষমতায় যেতে পারবে।  বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করে ক্ষমতার পালা বদলের চিন্তায় বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সে রকমই একটি রাজনৈতিক দল। যদিও তাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে। যারা তিন দফায় বেশ কয়েক বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দলটি প্রথমে ক্ষমতায় বসে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতা দখলের অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছিল। এতে জিয়াউর রহমানের মদদ ছিলো বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতাগ্রহণের পর একাধিক ক্যু হয়। এরমধ্যে ৭ নভেম্বরের ক্যু পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।  জিয়া নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হ্যাঁ-না ভোট চালু করেন। অর্থাৎ তিনি এটা ভালো ভাবেই বুঝেছিলেন যে, এদেশের মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখতে হলে এবং তাদের মন জয় করতে হলে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। ১৯৮২ সালে সামরিক শাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করলেন, তিনিও একই কায়দায় নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখলেন। তার বিরুদ্ধে বার বার আন্দোলনের পরও তিনিও নির্বাচনের উপর আস্থা রেখেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয় গণঅভ্যুত্থানের মুখে।  ১৯৯০-এর পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। দেশে সূচনা হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের। তারপর থেকে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে। যদিও বিএনপি ১৯৯৫ সালে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে জনআন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করতে বাধ্য হয়।  ১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের মেয়াদের শেষ দিকে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার পাঁয়তারা করলে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি করলে দেশে এক-এগারো পরিস্থিতির তৈরি হয়। প্রায় আড়াই বছর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনার পর ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।   এরপর আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু হয়। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই। তিনটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। পরে আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করতে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। কিন্তু তাদের আন্দোলন আমলে না নিয়েই সরকার সংবিধান অনুযায়ী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে।   ২০১৮ সালেও একইভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রথমে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলের নিবন্ধন রক্ষা করতে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন যায়। এই নির্বাচন নিয়েও নানান বিতর্ক আছে। নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা সরকার পতনের আন্দোলন করে। শেষদিকে এসে ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিএনপি দেশজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ায়। দলটি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করে। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণ ফিরে আসে। দল চাঙ্গা হতে থাকে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু শেষ দিকে এসে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শক্ত অবস্থান নেয় এবং নির্বাচন বর্জন করে।     নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেই মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাহস, শক্তি সবই হারিয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বের একাংশ এখনও বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। আরেক অংশ এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন সংগঠন টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।  রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে এই অবস্থান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদলাতে হবে। কারণ দলীয় নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে হলে ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো বিকল্প বিএনপির সামনে থাকবে না। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন হচ্ছে মোক্ষম হাতিয়ার। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব সংকট এবং সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে নাজিল হওয়া নির্বাচন বিরোধী নির্দেশের কারণে বিএনপি নির্বাচনী রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যাচ্ছে। আর নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে দলের নেতাকর্মীদের হতাশা ক্রমশ বাড়ছে।   বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বশেষ মামলায় জামিন পেয়েছেন বুধবার। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও জামিন পেয়েছেন একই মামলায়। তাদের দুই জনের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১১ ও ১০টি মামলা ছিলো। এখন সবগুলো মামলায় তারা জামিন পেলেন। তাদের কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকলো না। এতদিন ধরে বিএনপি যে নেতৃত্ব শূন্যতায় ছিলো সেই সংকট দূর হবে বলে ধারণা করা যায়। আগামী উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যদি ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত না নিতে পারে তাহলে তাদেরকে সেই ভুলের খেসারত দিতে হবে।  শেষ করতে চাই পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলাফলের প্রসঙ্গ দিয়ে। পিটিআই সভাপতি ইমরান খানকে জেলে পুরে, একাধিক মামলায় সাজা দিয়ে সরকার কোণঠাসা করে রেখেছিল। এমনকি পিটিআই এর নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ১০১টি আসনে জয় পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্ব যদি এখান থেকে কিছু রাজনৈতিক শিক্ষা নিতে পারে তাহলে তাদের দলের জন্য এবং তাদের অনুসারীদের জন্য ভবিষ্যতে হয়তো ইতিবাচক ফল আসবে। লেখক : সাংবাদিক 
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৬

‘প্রথমবার এমপি প্রথমবার পিতা হওয়ার মতো অনুভূতি’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (হাতঘড়ি)। শপথ নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রথমবার এমপি হওয়া প্রথমবার পিতা হওয়ার মতো ভালো লাগছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে শপথ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত সংক্ষেপে তাড়াহুড়ো করে বলার প্রয়োজন নেই। পরে বলবো ইনশাল্লাহ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। তার প্রাপ্ত ভোট ৮১ হাজার ৯৫৫। পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক গাড়ি)। তার প্রাপ্ত ভোট ৫২ হাজার ৯৮৬। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি আসন, এছাড়া অন্যান্য দল থেকে পেয়েছেন ৩টি আসন। রোববার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়। নির্বাচন হয় ২৯৯ আসনে। ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ছিলেন ১৯৭১ জন। ভোট নেওয়া হয় ব্যালট পেপারে।  
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৬
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়