• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
সেলুন পাঠাগার, বইপ্রেমী জামালের প্রশংসা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে
লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত এলাকার তরুণ জামাল হোসেন। যার 'সেলুন লাইব্রেরি' করার অনন্য উদ্যোগের প্রশংসা ছড়িয়ে গেছে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। যার হাত ধরে সারাদেশে ৫০ টি স্থায়ী পাঠাগার এবং দেশের ৬৪ টি জেলায় গড়ে উঠেছে ১ হাজার ২৩৪ টি সেলুন লাইব্রেরি। স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন দেশি-বিদেশি সম্মাননা, পুরস্কার। জামাল হোসেনের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের এক অজপাড়াগাঁয়ে। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কবি নজরুল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষে। শৈশব থেকে বইয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তার। স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে সেই টাকা দিয়ে বই কিনে নিজ বাড়িতে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেন গ্রামে গ্রামে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার কাজ। জামাল হোসেনের মতে, জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বই পড়ার বিকল্প কিছু নেই। তাছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে এবং সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগের জন্য বই পড়াই হতে পারে মোক্ষম হাতিয়ার। সেই চিন্তা থেকে ২০১৬ সালে নিজ গ্রামের বাইরে প্রথম তিনি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। ২০১৬ সালে খারুভাজ গ্রামে আরেকটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি জামাল। একে একে সারাদেশের ১৮ টি জেলায় গড়ে তোলেন ৫০ টি লাইব্রেরি। যার ২৭ টি নিজ জেলা লালমনিরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে। এসব লাইব্রেরির প্রতিটিতে রয়েছে সাত শত থেকে সাড়ে তিন হাজার বই। জামাল আরও জানান, প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরাতন বই সংগ্রহ করে, এরপর যেসব প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে বই পাওয়া যায় সেসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এসব বই তিনি সংগ্রহ করেছেন। পাঠকের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় জামাল ছুটে যান বিভিন্ন শিক্ষক, লেখক, গবেষকদের কাছে। জামালের হাতে প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড় যুব নেটওয়ার্ক 'যুব ফোরাম', যেখানে প্রায় দশ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী সদস্য বই সংগ্রহের কাজ করছেন; সেইসব স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একের পর এক এসব লাইব্রেরি। ২০১৬ সালে জামালের আসে প্রথম সেলুন লাইব্রেরির ধারণা। কথা বলেন সেলুন মালিকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। তারাও রাজি হন সেলুনে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। এরপর গোটা জেলার ৫০ টি সেলুনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অস্থায়ী পাঠাগার। সেলুনে বই পড়ার সুযোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে পাঠকদের মাঝে। সেলুন পাঠাগার গড়ার মহতী উদ্যোগের বিষয়টি সেসময়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন, মুজিবশতবর্ষে সারা দেশে সেলুন লাইব্রেরী স্থাপনের। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সারা দেশে ৫০০টি সেলুন লাইব্রেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে লালমনিরহাটসহ ১৮ জেলায় ১০০ সেলুন লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে। বাকিগুলো চালুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিটি সেলুন লাইব্রেরীতে ১৭টি করে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ওপর বই পেয়ে পাঠক সমাজ খুবই খুশি। বর্তমানে জামালের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় সারা দেশের ৬৪টি জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি সেলুন লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। জামাল নিজে দেশের ৫৬ টি জেলায় ভ্রমণ করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন সেলুন লাইব্রেরী গড়ে তোলার ব্যাপারে। তার পরিচালনায় সারা দেশে বর্তমানে ৭৫৬টি স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক সংগঠনে প্রায় দশ লাখ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জেলা শহরের সেলুন ব্যবসায়ী নরসুন্দর বিপুল শীল বলেন, চুল-দাড়ি কাটাতে লম্বা সিরিয়াল দেখে অনেক কাস্টমার চলে যেতেন। এখন দোকানে লাইব্রেরি স্থাপন করায় কাস্টমার বই পড়ে সময় কাটায়। এদিকে তার প্রতিষ্ঠিত প্রথম লাইব্রেরীটির আধুনিকায়ন করতে নিজস্ব জমির প্রয়োজন হয়। বাবাকে বুঝিয়ে লাইব্রেরীর নামে পাঁচ শতাংশ জমি লিখে নেন জামাল। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গড়েছেন সেই আধুনিক লাইব্রেরীর ভিত্তি ও দেয়াল। কিন্তু অর্থ সংকটে মাঝ পথেই থেমে আছে তার কাজ। আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হরিপদ রায় পাঠাগার সম্পর্কে বলেন, লাইব্রেরি গড়ে উঠে শহর এলাকায়। কিন্তু এলাকার যুবক জামাল গ্রামে লাইব্রেরি করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা নিয়মিত পাঠাগারে আসছেন বই পড়ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাইব্রেরী স্থাপন করায় এলাকার লোকজন বই পড়ার ওপর আগ্রহী হয়ে উঠছে। জামালের এই অনন্য উদ্যোগ দেখতে এসেছিলেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রমেশ সিং সহ দেশি-বিদেশী অনেক পর্যটক। জামাল জানান, রমেশ সিং সারাবিশ্বে বইপড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটা কনসেপ্টের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। শুধু বই পড়া নয় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে চলেছে তার সংগঠনের সদস্যরা।   কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভিএসও গ্লোবাল ভলান্টিয়ারিং ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২৩, আন্তর্জাতিক ভলান্টিয়ার অ্যাওয়াড-২০২২, কবি জীবনানন্দ সম্মাননা ও অসীম সাহা সম্মাননা পেয়েছেন জামাল। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন জামাল। তার মতে, জনসংখ্যা অনুযায়ী দেশে ষাট হাজার লাইব্রেরী প্রয়োজন। এই বিপুল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি জ্ঞানপিপাসু, সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 
০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬

টাঙ্গাইলে শীতার্তদের মুখে হাসি ফোটালো বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার
টাঙ্গাইলে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের উদ্যোগে দুস্থ ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার চৌরাকররা পাঠাগার প্রাঙ্গণে অর্ধশতাধিক পরিবারের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে চৌরাকররা গ্রামের না ষাটোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম বলেন, এই ঠান্ডায় আমাদের কেউ একটা কাপড়ও দেয় নাই। ঠান্ডায় খুব কষ্ট করতাছি। আমরা গরিব মানুষ, ট্যাহা পয়সা নাই। কম্বল পেয়ে আমি খুব খুশি হইছি। আল্লায় আমারে ঠান্ডা থিকা বাঁচাইলো। দুই সন্তান নিয়ে শীতবস্ত্র নিতে এসেছেন জহুরা বেগম। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এই নারী। গরম কাপড় পেয়ে তার যেন আনন্দ আর ধরে না। খুশি হয়ে বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে কয়েকদিন ধরে শীতে খুব কষ্ট করছি। ঠান্ডার কোনো কাপড়চোপড় নাই। কোনো মতে এ্যাহন ঠান্ডা থেইকা বাঁচুম। বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মো. কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, সামাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের সাধ্যমত আর্তমানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তবেই মানবিক পৃথিবী গড়ে উঠবে। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পাঠাগারের সভাপতি মো. শাহজাহান। এ সময় পাঠাগারের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, মো. রাকিব হোসেন, লিখন আহমেদ, নূর মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌরাকররা গ্রামে ২০১০ সালে গড়ে ওঠে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঠাগারটি গ্রামের মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে সেলুন, বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন অণুপাঠাগার স্থাপনসহ শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৫৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়