• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo
নড়াইলে শত বছরের পাগল চান্দের মেলায় উপচে পড়া ভিড়
নড়াইলের হিজলডাঙ্গা গ্রামে প্রতি বছরের মত এবারও ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পাগলের চাঁদের মেলা হয়েছে। পৌষ মাসের শেষ দিনে অধিবাসের মধ্য দিয়ে বরাবরের মত এবারও সেখানে দূর দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তদের নিজ নিজ ইচ্ছা পুরণে পাগলের মাজারে বাতসা দিয়ে মানত করতে দেখা গেছে। হিন্দু সম্প্রোদায়ের পাগলের ভক্তরা বিশ্বাস করে পাগলের মাজারে মানত করে পাগলরে সন্তুষ্টি করতে পারলে পাগল তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে দিবে। এই উদ্দেশ্যে পাগলের মাজারে বাতাশা ছুড়ে মেরে পাগলকে সন্তুষ্টি করতে ব্যস্ত ভক্তকুল।  স্থানীয়রা এ মেলাকে পাগলচাঁদের মেলা বলে অভিহিত করে থাকেন। আধ্যাত্বিক সাধু পাগল চাঁদ স্বরণে প্রায় একশ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে বলে জানালেন মেলা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার রায়।  নড়াইল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে হিজলডাঙ্গার মেলা। দুপুর থেকেই মেলায় দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন আর মেলা চলে গভীর রাত অবধি। হিজলডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল মাঠের এই মেলায় হাজারো পসরা নিয়ে এসেছে দূর দূরান্তের লোকেলা। মেলায় প্রায় ২শ’ স্টল রয়েছে আর আছে খোলা দোকান। মেলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে এলাকার লোকজনসহ দূর-দূরান্ত থেকে আগত নারী-পুরুষ জড়ো হতে থাকেন একশ বছরের পুরানো গ্রামীণ পৌষ মেলায়। মেলায় বাহারি সব খাবার আর তৈজসপত্রের মিশেলে উৎসবে মেতে ওঠেন দর্শকরা। শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি সব বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই মেলা। শুরুতে এই মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে চলে আসা এ মেলায় নানা রকম গ্রামীণ পণ্য পাওয়া যায়। নড়াইলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির জন্য। সন্ধ্যার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন মেলার আকর্ষণকে আরও বেশি সম্মৃদ্ধ করে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শতবছরের এই পাগল চাঁদের মেলায় নানা বয়সী মানুষের পদচারণে মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠেছে। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মিলে এই মেলায়। মাটির তৈরি নানা তৈজসপত্র উঠেছে এ মেলায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টলে আধুনিক খেলনার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। নাগরদোলায় ওঠার জন্য শিশুদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রাম্য মেলার সম্পূর্ণ চেহারা ফুটে উঠেছে এখানে। পান থেকে শুরু করে পিতলের বাসন আর বাশ-বেতের তৈরী ধামা, সের, পাইকে সনাতন সব দ্রব্যাদি মেলে এই মেলায়। বাহারী পান, পাপড়, তিলের খাজা, কদমা, টক-মিষ্টি আচার এবং বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন কিনে বাড়িতে ফিরে যেতে দেখা যায় মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। জানা গেছে, পাগল চাঁদ তিনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সারাদিন দেখা নাই অথচ রাতে হঠাৎ কোনো ভক্তের সামনে এসে হাজির হয়ে খাবার চাইতেন। কেউ কেউ সেধে তাকে খাওয়াতে পারত না আবার কোনো বাড়িতে গিয়ে তিনি নিজে চেয়ে খেতেন। পাগল বাবা যাকে পছন্দ করতেন তার মনের ইচ্ছা ফলে যেত। তার বিচরণ ছিলো সর্বত্র। এই সাধু পুরুষ নড়াইলের মুলিয়া, শেখহাটি, হিজলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন আর ভক্তরা তার সেবা করার জন্য ব্যস্ত থাকতো।  মরার সময় হিজলডাঙ্গা গ্রামের এক ভক্তের বাড়িতে এসে শুয়ে বললেন, আমাকে আর ডাকিস না, সেই সময়ই তিনি মারা গেলেন। সেই থকে এই গ্রামে পাগল চাঁদের পূজা শুরু, তা থেকে মেলা। মেলায় হাজারো ভক্তরা আসেন, পাগলের মাজারে পূজা দিয়ে মানত সেরে তারা কেনাকাটা করেন।  মেলার একপ্রান্তে রয়েছে পাগল চাঁদের সমাধি। ভক্তরা মেলায় আসছেন, এসে পাগলের মাজারে সেবা দিয়ে তাকে পূজা করছেন। নিজের মনের বাসনা পূরণ করতে পাগলের পছন্দের খাবার বাতশা নিয়ে তা ছুড়ে মারছেন উপরে। মেলায় ঘুরতে আসা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী মোহনা সাহা জানান, এবার প্রথম এ মেলায় এসেছি। মেলায় ঘুরে খুব আনন্দ লাগছে।
১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৪১
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়