• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo
লাইলাতুল কদরে যা করণীয়
লাইলাতুল কদর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ মর্যাদা বা সম্মান। এ ছাড়াও এর অন্য অর্থ ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতের মাধ্যমে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। এ রাতে ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ হলে আল্লাহতায়ালা অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, শবেকদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)। গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া : মহান আল্লাহর কাছে গোনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত) জামাতে এশা ও ফজর নামাজ আদায় : কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশির ভাগ মুসলিম সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়েন, ইবাদত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে জামাতে ফজরের নামাজ পড়া জরুরি। কেননা নফল ইবাদতের চেয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদরে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে। কোনোভাবেই যেন জামাতের নামাজ ছুটে না যায়। কাজা নামাজ পড়া : সারাবছর নানা কারণে অনেক নামাজ কাজা হয়ে যায়। অনেকে সফরে থাকার সময় নামাজ আদায় করতে পারে না। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা উত্তম। কোরআন তেলাওয়াত করা : লাইলাতুল কদর রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল কোরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা উচিত। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে রমজানের শেষ দশক অতিবাহত করা। ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা : কদরের রাতে ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ রাতটি নির্দিষ্ট নয়, সেহেতু রমজানের শেষ দশকের পুরোটা সময় বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিবাদে লিপ্ত থাকলে অতীতের সব গুনাহ মাফ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। দোয়া করা : লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা জরুরি। যেন আল্লাহতাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন এ রাতে। হাদিস পড়া : লাইলাতুল কদরের রাতে জ্ঞানার্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা। যে সামান্য সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি। কম ঘুমানো : রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ইতিকাফের জন্য বিশ্বনবী ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে। তাই কম ঘুমিয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। কম খাবার গ্রহণ : রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ দেহ ও মন প্রয়োজন। বেশি খাওয়া হলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কম খেতে হবে।  
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০২

শবেবরাতের তাৎপর্য ও আমল
মাহে রমাদানের প্রস্তুতির মাস হলো রজব ও শাবান মাস। রসুল (সা.) এ দুই মাসে নিজে রমাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে তাকিদ দিতেন। শাবান মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে, যা রমাদানের আগমনী বার্তা। তা হলো শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত।  এই রাতটিকে  ‌‘শবে বরাত’  বলা হয়। শবে বরাত এটি ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে।  শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের  আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারায়াত’। হাদিসে এই রাতটিকে নিসফ শাবান বলা হয়। লাইলাতুল বারায়াতের তাৎপর্য এই রাতে আল্লাহ তায়ালা মুক্তি ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন,  আল্লাহ তায়ালা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ( ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)  অন্য হাদিসে এসেছে,  রসুল (সা.) বলেন, এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয়না। তা হলো- ১. জুমার রাত,  ২. রজব মাসের প্রথম রাত, ৩. শবে বরাতের রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত, ৫. ঈদুল আজহার রাত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৭৯২৭) শবেবরাতের আমল  এ রাতের আমল সম্পর্কে একাধিক হাদিস পাওয়া যায়। কিন্তু হাদিসগুলো জাল বা মওজুর দ্বারা দলিল সাব্যস্ত করা যায় না। যেহেতু রাতটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই নিজের গুনাহ মাফের জন্য ইবাদত বন্দেগীতে কাটানো উত্তম। যেমন : ১. নফল নামাজ পড়া ২. বেশি বেশি দরুদ পড়া ৩. দান-সদকা করা ৪. নফল রোজা রাখা ইত্যাদি। পরিচিতি : লেখক ও গবেষক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৭

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মায়ের ভাষার কথা বলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মাতৃভাষা মহান আল্লাহর অপার দান। এ ভাষা দিয়ে মানুষ নিজের মনের ভাষা প্রকাশ করে। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে গোমরাহী থেকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে অগণিত অসংখ্য নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন। যাদের প্রত্যেককেই তিনি স্বজাতির ভাষায় দান করেছেন আসমানি কিতাব। যাতে করে মানুষের মাঝে তাওহিদের প্রচার-প্রসারের কাজ সহজ হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, আমি রাসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দ্বীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪) মানুষের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এবং মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। তাইতো ভৌগলিক অঞ্চলভেদে প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদ ভাষা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুরা রূমের ২২ নং আয়াতে উল্লেখ করেন, ‘আর মহান আল্লাহর নিদর্শসমূহের হতে (একটি নিদর্শন হলো) আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ রয়েছে।’ বাঙালি ও বাংলাদেশীদের মুখের ভাষা, প্রাণের ভাষা, আত্মার বন্ধনের ভাষা তথা রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো বাংলা ভাষা। যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানির হানাদার বাহিনীর অস্ত্রের মুখে গর্জে উঠেছিল এদেশের সূর্য সন্তান সালাম, রফিক ও জাব্বারদের মতো একদল দেশপ্রেমী মর্দে মুজাহিদ। যাদের অবদানে আজ বাংলা ভাষায় ইসলাম ও মুসলিম তাহজিদ তমদ্দুনের দাওয়াত, প্রচার-প্রসারে আমরা বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত ও কুরআনের বাণী পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছি। তাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুশীলন চর্চায় বিকল্প নেই। ভাষার গুরুত্ব উপলব্দি করেই আল্লাহ তাআলার পয়গাম্বর হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তার ভাই হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে নিজের সঙ্গি করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এই কারণে যে, সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় আল্লাহর একত্ববাদ ও দ্বীনের বক্তব্যকে উত্তম বচন ভঙ্গিতে তৎকালীন সম্রাট ফিরাউন ও তার সঙ্গিদের নিকট তুলে ধরবে। ভাষার গুরুত্ব বুঝাতে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বক্তব্যকে আল্লাহ তাআলা তা কুরআনে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ভাই হারূন, তিনি আমার থেকে অনেক বেশি প্রাঞ্জল ভাষী। তাই আপনি তাকে আমার সহযোগী করে প্রেরণ করুন; যাতে সে আমাকে (দাওয়াতের ক্ষেত্রে তার প্রাঞ্জল ভাষার দ্বারা) সত্যায়িত করে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি (আমার বক্তব্য সত্য হওয়া সত্বেও) তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৩৪) ভাষার গুরুত্ব অত্যাধিক হওয়ায় আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন হিব্রু ভাষায়, ইউনানি ভাষায় যাবুর অবতীর্ণ করেছেন পয়গাম্বর হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর, আর হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেছেন সুরিয়ানি ভাষায়। সর্বোপরি সমগ্র জাতির হেদায়েতের জন্য আলোর দিশারী হিসেবে শেষ নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ করেন তার স্বজাতি ভাষা আরবি ভাষায়।  সালাম, রফিক, জাব্বারসহ এদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত ভাষা বাংলা ভাষা। যা আমাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার ও দান। আর এ বাংলা ভাষায় অনুদিত হয়েছে কুরআনের হাদিসের অগণিত অসংখ্য কপি। রচিত হয়েছে কুরআনে হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থসহ অসংখ্য ইসলামি পুস্তকের মহাসম্ভার। যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য আল্লাহ অশেষ রহমত। সুতরাং যারা দেশের জন্য বুকের তাঁজা রক্তকে এ জমিন ঢেলে দিয়েছেন, আজকের এই দিনে সেই সকল ভাষা শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করাও ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা সকল ভাষা শহীদদের সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়