• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo
সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর দাবি সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা সংশোধন করে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী জবাবদিহি থেকে দায়মুক্তির পাশাপাশি দুর্নীতি সুরক্ষিত ও উৎসাহিত হবে। এতে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো সংস্থাটির এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধি বাতিলে অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের আরও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি চাকরিজীবী (আচরণ) বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার ঠিক উল্টো। প্রথমে প্রতি বছর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের অনীহার মুখে পরে তা শিথিল করে তা পাঁচ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করা হয়। সেই বিধানও সঠিকভাবে পালনে অনাগ্রহ ছিল তাদের। চাকরির শুরুতে সম্পদের বিবরণী দিলেও পাঁচ বছর পর পর হিসাব হালনাগাদের বাধ্যবাধকতার গুরুত্বই দেন না সরকারি কর্মচারীরা। এখন এই বাধ্যবাধকতা সরিয়ে দেওয়ার অর্থ প্রকারান্তরে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে উৎসাহ দেওয়া বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি মনে করেন, সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার মতো কোনও বিধান না থাকলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নির্ভয়ে দুর্নীতি ও এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুযোগ বাড়বে। একইসঙ্গে প্রাপ্য সেবা পেতে সরকারি অফিসে ভোগান্তি বাড়বে জনগণের। অবৈধ অর্থ লেনদেন বহুগুণে বাড়বে এবং সুশাসিত সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিতের স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব সরাসরি নিয়মিত জমা ও হালনাগাদের পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দেওয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন থেকে নেওয়ার যে যুক্তি, বাস্তবে তা অর্থহীন দাবি করে বলেন, ‘আয়কর আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। আইনের ৩০৯(২) ও ৩০৯(৩) ধারা অনুযায়ী কোনও কর্তৃপক্ষ কোনও সরকারি কর্মচারীকে এই আইনের অধীনে কোনও ট্যাক্স রিটার্ন, অ্যাকাউন্ট বা নথি উপস্থাপন, সাক্ষ্য বা প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপনের আদেশ দিতে পারে না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি বা বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ আহরণের অভিযোগে কোনও ব্যক্তির আয়কর বিবরণী আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেখতে পারবে না। ফলে জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়ার বদলে এই সংশোধনীর মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরা নতুন সুরক্ষা পাবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রহিত করে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের খসড়া সংশোধনী যাচাইয়ের পর এটি এখন প্রশাসনিক উন্নয়নবিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হবে।
২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিআরটিএর প্রতিবাদ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুমান নির্ভর, অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তবে টিআইবি যে গঠনমূলক ও বাস্তবধর্মী সুপারিশগুলো করেছে তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করবো। সম্প্রতি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সম্পর্কিত মোটরযান নিবন্ধন-রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সনদ ইস্যু, নবায়ন, রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়নে ঘুষ প্রদান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি। বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর বনানী সড়ক পরিবহন ভবনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, তথ্য প্রকাশের বিরুদ্ধে বিআরটিএ তীব্র প্রতিবাদ এবং তা প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ, এতে বিআরটিএসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুমান নির্ভর তথ্য যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এরূপ প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আমরা টিআইবির কাছে এর লিখিত ব্যাখ্যা চাইব। বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (bsp.brta.gov.bd)-এর মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের আবেদন ঘরে বসে দাখিল ও ঘরে বসেই সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতে পারছেন জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, অধিকন্তু, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী পরীক্ষার দিনই বায়োমেট্রিক প্রদান করে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অনলাইনে প্রযোজ্য ফি জমা প্রদানপূর্বক আবেদন দাখিল করে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ওই দিনই পেয়ে যাচ্ছে যা ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে পারছে। এছাড়াও অনলাইনে আবেদন দাখিলের ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাকযোগে আবেদনকারীর কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যেহেতু সেবা পেতে সশরীরে বিআরটিএতে আসার প্রয়োজন হয় না, সেহেতু উল্লেখিত সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোটরযান মালিক ডিলার বা শো-রুম থেকে মোটরযান ক্রয়ের পর অনলাইনে মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিজে বা ডিলার /শো-রুম এর মাধ্যমে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল এ দাখিল করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন দাখিলের পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে মোটরযান সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক একই দিনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত গড় ব্যয়িত সময় ৩০ কর্মদিবসের বিষয়টি অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত। তিনি বলেন, রুট পারমিট সার্টিফিকেট ইস্যু/নবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের যাত্রী, ও পণ্য পরিবহন কমিটির সুপারিশের আলোকে বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রুট পারমিট সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ১৫ অক্টোবর ২০২০ থেকে ফিটনেস নবায়নে অনলাইনে অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে  বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, অ্যাপয়নমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মোটরযান সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে হাজির করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উপযুক্ততা সাপেক্ষে ফিটনেস সার্টিফিকেট একই দিনে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
০৬ মার্চ ২০২৪, ২২:০৫

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মানি লন্ডারিং যথাযথভাবে তদন্তের দাবি টিআইবির
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে যথাযথভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে বিদেশে সম্পদ অর্জন ও নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য সংস্থাটির। রোববার (৩ মার্চ) এক সংবাদ বিবৃতিতে বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন উল্লেখ করে তদন্তের এ দাবি জানায় টিআইবি।  এর আগে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লন্ডনে নিজের ব্যবসা ও সম্পদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে, দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি বলে দাবি তার।  সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এ মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে ও সরকারকে বিব্রত করতেই টিআইবি বিদেশে গড়া সম্পদের এ হিসাব এনে প্রতিবেদন করেছে। যদিও টিআইবি মনে করে এ ধরনের সঠিক তথ্য প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিব্রত হওয়াই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৬ হাজার ৭ জন প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতে সার্বিক, আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে একটি ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি। যার উদ্দেশ্য নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য, প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদের তুলনামূলক চিত্র জনস্বার্থে তুলে ধরা। কিন্তু সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রদর্শিত সম্পদের সঙ্গে তার প্রকৃত সম্পদের গরমিল থাকায় তার বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উঠে এসেছে। হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পত্তি আলাদা করে ঘোষণা করার কোনও কলাম নেই এ অজুহাতে সেসব সম্পদের উল্লেখ করেননি— সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এ ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রথমত সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় একজন প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। বিদেশে সম্পদের জন্য আলাদা কলাম নেই বলে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আয়কর বিবরণীতে না থাকায় হলফনামায়ও বিদেশে সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি বলে যে দাবি তিনি করেছেন, তা নিতান্তই অবান্তর যুক্তি। বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনও লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে যুক্ত কোনও কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোভাবে অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এ বিধানকেও লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা তদন্তে যে কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন তা একেবারেই অবান্তর বলে মনে করে টিআইবি।  সংস্থাটির দাবি, অর্থপাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধানের লঙ্ঘন কোনও তদন্ত কমিটির বিষয় নয়, বরং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ এবং সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।  
০৪ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৭

টিভি বিজ্ঞাপন মূল্য নিয়েও টিআইবির ভুল তথ্য
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবির ট্র্যাকিং রিপোর্টে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিটিভি’র রাত ৮টার সংবাদে নির্বাচন সম্পর্কিত সব প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে প্রচারণা হিসেবে। আর এসব সংবাদের প্রতি ১০ সেকেন্ডের মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০০০ টাকা। এছাড়া অনএয়ার ডাটাতেও গড়মিল পাওয়া গেছে। টিআইবির এই রেটের সাথে বিটিভি নির্ধারিত টেরিস্টেরিয়াল রেটের কোন মিল পাওয়া যায়নি। টিআইবির দেওয়া তথ্যমতে, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাত ৮ টার খবরে ৪৯৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ড নির্বাচন সম্পর্কিত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। আর এই সময়ের অনএয়ার মূল্য বলা হয়েছে ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডের মূল্য ১৫০০ টাকা।  টিআইবির প্রতিবেদনে ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২২ মিনিট ২৭ সেকেন্ড এবং ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৭১ মিনিট নির্বাচন সম্পর্কিত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। আর নির্বাচনী সব সংবাদকে প্রচারণা হিসেবে দেখিয়েছে টিআইবি।  এই অনএয়ার হিসেবের যোগফলেও ভুল তথ্য। মোট সম্প্রচার ৪৯৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ড বলা হলেও মোট সম্প্রচার ৪৯১ মিনিট ২৮ সেকেন্ড। এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড এবং ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৬৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ড। বিটিভি বিজ্ঞাপন আকারে কোন সংবাদ প্রচার করেনা। রাত ৮টায় বিটিভির সুপার পিক টাইম শুরু হয়, যা শেষ হয় রাত ১২টায়। সংবাদ শুরুর ঠিক আগের প্রতি ১০ সেকেন্ডের মূল্য ৬,৬৬৭ টাকা এবং সংবাদের আগে সাড়ে ৫হাজার টাকা। আর বিরতিতে ১০,৮৩৪ টাকা। টিআইবির প্রতিবেদনে সংবাদের মূল্য নির্ধারণ এই তিনটির কোনটিতেই পড়েনা। বিটিভির এই বিজ্ঞাপন মূল্যহার ‘পিক টাইম’ সংবাদের মাঝে প্রচারিত ‘স্পট বিজ্ঞাপন’ ক্যাটাগরির প্রতি ১০ সেকেন্ডের মূল্যহার হিসেবে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছে টিআইবি। বস্তুত এই স্পট বিজ্ঞাপন আলাদা কিছু নয়। বিটিভির ওয়েবসাইটে দেওয়া মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, তাদের বিজ্ঞাপন স্পটগুলো হলো- সংবাদের শুরু ঠিক আগে বা সংবাদ শেষের পরে, সংবাদের আগে বা পরে, সংবাদের মধ্য বিরতিতে। এখানেই টিআইবির প্রতিবেদনে অসঙ্গতি দেখা গেছে। সংবাদকে মোট ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এতে প্রতি ১০ সেকেন্ডের দাম দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যা প্রতি মিনিটের দাম হিসেব করলে দাঁড়ায় ৯০ হাজার টাকা। অথচ বিটিভির সম্প্রচার মূল্য তালিকায় কোথাও এরকম রেট নেই। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ জানান, বিটিভি ন্যাশনালে বিজ্ঞাপন পেলেও বিটিভি ওয়ার্ল্ড-এ খুব একটা বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়না। আর বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারিত। বিটিভি কেন বাংলাদেশে কোনো টেলিভিশনেই প্রতি মিনিটের বিজ্ঞাপন খরচ ৯০ হাজার টাকা নয়। এই মূল্য যারা দেখিয়েছে তারা বাস্তবতার ভিত্তিতে নয়, বিশেষ উদ্দেশ্যে করেছে।  
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০১

প্রতিবেদনের নামে টিআইবির এজেন্ডাভিত্তিক গবেষণা
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের গবেষণায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো’ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দাবি করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক হয়নি বলে জানিয়েছে। তবে টিআইবি’র এই গবেষণায় বেরিয়েছে নানা অসংগতি এবং তথ্যের গড়মিল। তাদের গবেষণা পদ্ধতিকে এজেন্ডাভিত্তিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই তারা ব্যক্তিগত মতামতকে তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে।         টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এটি একটি মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা। গুণগত ও সংখ্যাগত উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।   গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত প্রত্যক্ষভাবে নিয়েছে। মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী, দলীয় নেতা-কর্মী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, কমিশনের কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, নির্বাচনী ট্রাইবুনালের কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিক, ভোটার, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা জরিপ করেছে টিআইবি।  প্রত্যক্ষ তথ্য যাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আছেন। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন অসংগতির বার্তা আসেনি। বরং বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে জানিয়েছেন।  টিআইবি পরিমাণগত ফলাফলসহ তার রিপোর্ট দিয়েছে। যদিও মেথোডলজি সেকশন (সেকশন ৩, পৃষ্ঠা ৩) থেকে দেখা যাচ্ছে যে তারা তাদের সিদ্ধান্তে আসার জন্য গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় ডেটা ব্যবহার করেছে। তারা কীভাবে পরিমাণগত ফলাফলে এসেছে তার কোনও প্রক্রিয়া উল্লেখ নেই। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তারা ৩০০টির মধ্যে ৫০টি নির্বাচনী এলাকার তথ্য নিয়েছে। কিন্তু তারা কতোগুলো ভোট কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে তার উল্লেখ নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোটকেন্দ্র ছিল। তাদের পদ্ধতি কীভাবে কার্যকর ধরা যায়, যখন তারা কতগুলো ভোট কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে, সেই সংখ্যাটিই প্রকাশ করেনি। তাদের ছিল মাত্র ৩ জন গবেষক এবং ৪ জন গবেষণা সহকারী। এত অল্প সময়ে এত ছোট টিম দিয়ে নির্বাচনের পুরো মেকানিজম জরিপ তারা কীভাবে করতে পারলেন এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে।  মতামতকে তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি। ৩০০ আসনের মধ্যে দৈবচয়নে ৫০টি আসন নিয়ে গবেষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিসের ভিত্তিতে তারা এই ৫০টি আসন বেছে নিয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করেনি। কাদের কাছ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাও উল্লেখ করেনি। যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা মূলত অংশীজন। তারা তথ্য নয়, মতামত দিয়েছে। তথ্য এবং মতামতের মধ্যে পার্থক্য আছে। তারা মতামতকে তথ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। টিআইবি ৫০টি আসনের মধ্যে কতোগুলো কেন্দ্র বা পোলিং বুথে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারও উল্লেখ নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩৫০টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। পোলিং বুথ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫টি। তারা কতোগুলো বুথে গবেষণা করেছে তা উল্লেখ না করে প্রতিবেদনের উপংহারে পৌঁছে বলেছে ৫১ শতাংশ আসনে পোলিং বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেয়া হয়েছে। গায়েবিভাবে তারা এই তথ্য উপস্থাপন করেছে।  তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, আন্তর্জাতিক কোনো জার্নাল তাদের এই গবেষণা প্রকাশ করবে না। কারণ এই গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি। টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।  তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে গবেষণা করবে এবং তার ফলাফল জনগণের সামনে তুলে ধরবে। টিআইবি যেটা করেছে, সেটা গবেষণা না, এটা তাদের মতামত।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনালজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘দেশে সমানুপাতিক আচরণের বিষয়টা বেশ অনুপস্থিত। যেমন- একজনের বক্তব্যে যদি কাউকে খারাপ বলা হয় তাহলে সে খারাপ হয়ে গেল। বর্তমানে বাংলাদেশে এক ধরনের সুশীল সমাজ তৈরি হয়েছে যারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। এসবের মধ্যে বেশ কিছু ভালো বিষয় থাকলেও তাদের মধ্যে অনেক কিছু আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। বাংলাদেশে নির্বাচন কিংবা তার আগ মুহূর্তে এই বিষয়টা বেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক সময় দেখতাম সুশীল সমাজ নির্মোহভাবে বক্তব্য দিতো , এখন আমরা সেই নির্মোহ জিনিসটিকে হারিয়ে ফেলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘টিআইবি আগে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণার তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা তিনজন শিক্ষক অসংগতিগুলো তুলে ধরেছিলাম। তার গবেষণাটি করেছিল সংসদ সদস্যদের নিয়ে। সেখানে অজস্র ভুল ছিল, গবেষণায় কোন স্ট্যান্ডার্ড মেথোডলজি ব্যবহার করা হয়নি। এখন টিআইবি’র দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদন দেখে আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগছে। একটি হচ্ছে তারা যে কথাগুলো বলেছে তার অধিকাংশ হচ্ছে মতামত। মতামত প্রকাশের জন্য কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন হয় না। তাদের গবেষণা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য ও সঠিক- তিনটি মানদণ্ডের উপর আমরা বলে থাকি যে একটি গবেষণা কতটুকু মানসম্পন্ন ও গ্রহণযোগ্য। সেগুলো তো তারা কিছুই উল্লেখ করেনি। আমি গবেষণার কোন কিছুই দেখিনি এর মধ্যে। মূল কথা হচ্ছে- টিআইবি’র গবেষণায় আমরা গবেষণার মূল যে তাত্ত্বিক বিষয় সেটি কিন্তু দেখিনি'। 
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবির যত ভুল তথ্য
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘২৪১ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি’সহ বেশকিছু বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবদেনে। টিআইবির ওই প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতেই এই প্রতিবেদন। বিজ্ঞানসম্মত ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ না করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে টিআইবি। টিআইবি গবেষণা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। গত ১৭ জানুয়ারি নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি দাবি করে, একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনও অন্তত ৫১ শতাংশ আসনে জাল ভোট, প্রকাশ্যে সিল মারা ও বুথ দখলের ঘটনা ঘটেছে। তবে ৩০০ আসনের মধ্য ৫০টি আসনে কীসের ভিত্তিতে তারা গবেষণা করেছে তা উল্লেখ করা হয়নি। কাদের কাছ থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাও উল্লেখ করেনি। এ প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩৫০টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। পোলিং বুথ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫টি। টিআইবি কতগুলো বুথের তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা উল্লেখ না করে প্রতিবেদনের উপংহারে পৌঁছে বলেছে ৫১ শতাংশ আসনে পোলিং বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া হয়েছে। গায়েবিভাবে তারা এই তথ্য উপস্থাপন করেছে।’ তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা মূলত অংশীজন। তারা তথ্য নয়, মতামত দিয়েছে। তথ্য এবং মতামতের মধ্যে পার্থক্য আছে। তারা মতামতকে তথ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।’ টিআইবি গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, টিআইবি পরিমাণগত ফলাফল সহ তার রিপোর্ট দিয়েছে। যদিও মেথডলজি সেকশন (সেকশন ৩, পৃষ্ঠা ৩) থেকে দেখা যাচ্ছে যে তারা তাদের সিদ্ধান্তে আসার জন্য গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় ডেটা ব্যবহার করেছে। তারা কীভাবে পরিমাণগত ফলাফলে এসেছে তার কোনও প্রক্রিয়া উল্লেখ নেই। পয়েন্ট-২ : টিআেইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তারা ৩০০টির মধ্যে ৫০টি নির্বাচনী এলাকার তথ্য নিয়েছে। কিন্তু তারা কতগুলি ভোট কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে তার উল্লেখ নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোটকেন্দ্র ছিল। তাদের পদ্ধতি কীভাবে কার্যকর ধরা যায়, যখন তারা কতগুলি ভোট কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে, সেই সংখ্যাটিই প্রকাশ করেনি? তাদের ছিল মাত্র ৩ জন গবেষক এবং ৪ জন গবেষণা সহকারী। এত অল্প সময়ে এত ছোট টিম দিয়ে নির্বাচনের পুরো মেকানিজম জরিপ তারা কীভাবে করতে পারলেন? পয়েন্ট-৩ : কেউ যদি সেকশন ৫ (পৃষ্ঠা ৫, ৬) পড়ে, তবে এটি স্পষ্ট হবে যে, প্রতিবেদনটি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। এতে বিএনপির ঐতিহাসিক অনিয়ম ও সাম্প্রতিক সহিংসতার কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। বরং আওয়ামী লীগকে এমন একটি দল হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যারা ক্ষমতা দখলের জন্য যা ইচ্ছা তাই করে। টিআইবি প্রতিবেদনে বলেছে, অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। অথচ ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে মোট ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। তবে যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ প্রার্থী বা মোট ২৭ শতাংশ প্রার্থীকে বাতিল করেছে ইসি। দ্বৈত নাগরিকত্বের দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাম্মী আহমেদের (বরিশাল-৪ আসনে) প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। মাত্র ৫০টি নির্বাচনী আসন সম্পর্কে অস্পষ্ট পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে টিআইবি রায় দিয়েছে। তারা বলেছে- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু রিপোর্টে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি। নির্বাচনী প্রচারণা, আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ইসি ৭৬২ বার শোকজ করেছে, যার মধ্যে ৩০০ বার ছিল আওয়ামী লীগের শতাধিক সংসদ সদস্যকে।  এছাড়াও প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ৬৩টি মামলা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, বিরোধী দলগুলোর পোলিং এজেন্টদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাত, সাংবাদিকদেরকে তথ্য সংগ্রহে বাধাদান, জাল ভোটদান ইত্যাদি অভিযোগ তুলেছে টিআইবি। এক্ষেত্রেও সংস্থাটির মাপকাঠি মাত্র ৫০টি নির্বাচনী আসন। সেগুলোর কতগুলো ভোটকেন্দ্রে তারা পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে, তার উল্লেখ নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৪০টি কেন্দ্র থেকে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্তত ৯টি নির্বাচনী এলাকার ২১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে (চট্টগ্রাম-১৬) অযোগ্য ঘোষণা করে ইসি। এটি দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। নরসিংদী-৪ আসনে জাল ভোট অভিযোগে শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছেলেকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় ইসি।  একটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের ফলাফলও স্থগিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ২৭ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশ ভোটার টার্নআউট নিয়ে বিতর্ক বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়েছে টিআইবি। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর হালনাগাদ তথ্য পেয়েছে। এর মানে হল যে ২৭ শতাংশ ভোটারের তথ্য, যা বিকাল ৩ টায় বলা হয়েছে, তা কমপক্ষে দুই ঘন্টা পুরানো ছিল। অতএব, ৪১ শতাংশ ভোট পড়ার বিকাল ৪টায় আপডেট হওয়া তথ্যের সঙ্গে আগের তথ্যের তিন ঘন্টার ব্যবধান ছিল। নির্বাচনের দিন সকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়েছিল। পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল।  ভোটারদের একটি বড় অংশ তাদের ভোট দেওয়ার জন্য দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল, যার আপডেট ওইদিনে দেরিতেই গণনা করা হয়েছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র হেভিওয়েট প্রার্থীদের পরাজয় কিভাবে হলো প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলেই- ঢাকা-১৯ সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, যশোর-৫ আসনে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও দুইবারের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, হবিগঞ্জ-৪ আসনে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, গাজীপুর-৫ আসন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পুলিশের সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আবদুস সোবহান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শকের ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ কুষ্টিয়া-২ আসনে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পিরোজপুর-২ আসনে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরে গেছেন।
২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৮

টিআইবির রিপোর্ট অসত্য-মানহীন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত রিপোর্ট অসত্য ও মানহীন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেন, তাদের রিপোর্ট তৈরিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা এই গবেষণা করেছেন, তাদের গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের কোনো গবেষণা নেই। টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের সুশীল সমাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের মাধ্যমে গবেষণা করে তার ফলাফল জনগণের সামনে তুলে ধরবে।  তিনি বলেন, টিআইবি যেটা করেছে, সেটা কোনো গবেষণা না, এটা তাদের মতামত। তারা মানুষের মতামতকে তথ্য হিসেবে দেখিয়েছে। ৪২ হাজার কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে পুরো নির্বাচন ঘিরে তৈরি রিপোর্ট কখনো সঠিক হতে পারে না। মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হলে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা অনিয়ম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। টিআইবির রিপোর্টে অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাদের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগে, বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনে সংস্থাটি দাবি করে, নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৪১টি আসনেই প্রকৃত অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৩

এমপিদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান টিআইবির
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের কারও অবৈধ সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়। টিআইবি বলছে, দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় ৮৫ শতাংশই কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন সংসদ সদস্য সংখ্যা ১৫। সংসদের সদস্যদের অস্থাবর সম্পদের সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গড় অস্থাবর সম্পদের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে দশম সংসদের তুলনায় একাদশ সংসদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া বছরে এক কোটি বা তার বেশি টাকা আয় করেন— এমন ১১২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন এবারের সংসদে, যা পুরো সংসদের প্রায় ৩৮ শতাংশ। সংস্থাটি আরও বলছে, দেশের আইন (ল্যান্ড রিফর্ম অ্যাক্ট, ২০২৩) একজন ব্যক্তির ভূমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা (কৃষি জমির ক্ষেত্রে ৬০ বিঘা এবং অকৃষি জমিসহ যা ১০০ বিঘা পর্যন্ত যেতে পারে) বেঁধে দিলেও আইনি সীমার বাইরে জমি আছে ১৩ জন সংসদ সদস্যের কাছে। সম্মিলিতভাবে এই ১৩ জন সংসদ সদস্যের আইনি সীমার বাইরে বাড়তি জমি রয়েছে ৮০০ একর (৩ বিঘায় ১ একর বিবেচনায়)। সংসদ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক, হলফনামায় তার প্রদর্শিত জমির পরিমাণ ৩৮০ দশমিক ৭৫ একর। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে, আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি জমি বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যদের অনেকের মালিকানাধীন রয়েছে। এসব জমি বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের আহ্বান জানাই।
১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৩
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়