• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
‘ঈদের কথা ভুলে গেছি, দুমুঠো ভাতের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা’
সন্তানদের মুখে দুবেলা ভাতের জোগান দিতে পারি না সেখানে ঈদের কথা ভাবি কি করে? স্বামী যেদিন আগুনে পুড়ে পৃথিবী থেকে চলে গেলো সেদিন থেকেই দুঃখের সাগরে ভাসি। আমার এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে এখন কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। দিন যত পার হয় ততই চোখেমুখে অন্ধকার দেখি। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে একমাত্র আল্লাহ জানে। কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া জুয়েল রানার স্ত্রী মাজেদা আক্তার। তিনি আরও বলেন, যে মানুষটির আয়ের ওপর সংসার চলতো সেই মানুষটি চলে যাওয়ার পর পুরো পরিবারে নেমে আসে অমাবস্যার কালো রাত। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা। একেবারে সাজানো গোছানো ছিলো আমাদের ছোট্ট পরিবারটি। কিন্তু হঠাৎ তছনছ হয়ে গেল। জানা যায়, জুয়েল রানা নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য গত ৭ বছর আগে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে পরিবারের হাল ধরেন। সর্বশেষ কর্মস্থান রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন। এই রেস্টুরেন্টেই জীবন দিতে হলো কলাপাড়া উপজেলার মীঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামের ইসমাইল গাজী ও মোসা. ফাতেমা দম্পতির ছেলে জুয়েল গাজীর। পরিবার জানায়, নিহত জুয়েলের সংসারে রয়েছে দুসন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ে তাসলিম আক্তার জুয়েনা বয়স ৭ বছর। আর ২ বছরের ছোট্ট পুত্র সন্তান তাইফুর রহমান তাহমিদ। জীবনের একটি ঈদ বাবার সঙ্গে কাটালেও এবার ঈদে আর বাবার সঙ্গে ঈদ কাটানো হলো না। এ জীবনের তরে তাসলিম আক্তার জুয়েনা ও তাইফুর রহমান তাহমিদের বাবার ভালোবাসা ও ঈদের নতুন পোশাক পাবে না। জুয়েল রানার মামাতো ভাই সায়মন বলেন, পুরো পরিবারের দায়িত্ব ছিল জুয়েল ভাইয়ের ওপর। এখন তার দুটি সন্তান ও তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে কে দেখবে। তাদের আর্থিক সংকট অনেক। সরকার ও দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তার সন্তানরা অন্তত দুমুঠো ভাত খেয়ে বড় হতে পারতো। স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার মুসল্লি বলেন, জুয়েল অনেক ভালো ছেলে ছিল। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। আমরা চেষ্টা করবো, সাধ্যমত ওর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। মিঠাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান দুলাল বলেন, পরিবারটি অসহায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ছিল জুয়েল। পরিবারের খোঁজ নিয়ে চেষ্টা করবো সহযোগিতা করতে। এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি কলাপাড়ায় মাত্র কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং পরবর্তীতে যতদূর এ পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা যায় সেটা করা হবে।
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৭

এসির ওপর দাঁড়িয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না জুয়েল
রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় নিহত জুয়েল রানা গাজী (৩০) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম মধুখালী গ্রামের ইসমাইল গাজীর ছেলে। জীবন বাঁচাতে সাত তলা থেকে নামার চেষ্টা করেন তিনি। অনেক কষ্টে জানালার পাশে এসির ওপর দাঁড়ান জুয়েল রানা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি সাহসী এ যুবকের। অপ্রত্যাশিতভাবে নিচে পড়ে গিয়ে মারা যান জুয়েল।  শুক্রবার (১ মার্চ) গণমাধ্যমের কাছে এ তথ্য জানান জুয়েলের ভাগিনা রাকিব।  জানা যায়, ওই ভবনে এমবাসিয়া নামের একটি খাবারের দোকানে কাজ করতেন জুয়েল। তার মা-বাবা ছাড়াও এক ভাই, তিন বোন রয়েছে। এ ছাড়াও জুয়েলের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, ছয় বছরের মেয়ে তাসনিয়া ও তিন বছরের ছেলে তাইফুর রয়েছে। বাড়িতে চলছে মাতম। শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে জুয়েল ও বড় ভাই আল আমিন ঢাকায় কাজ করতেন। প্রায় ৩ বছর আগে জুয়েল ঢাকায় যান। মাঝখানে করোনার ধকলে বেকার ছিলেন।  জুয়েলের মরদেহ শুক্রবার শেষ বিকেলে কলাপাড়ায় বাড়িতে নিয়ে গেলে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এলাকার হাজারো মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় করেন। পরে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় জুয়েলকে।  নিহতের মামাতো ভাই সায়মন বলেন, পুরো পরিবারের দায়িত্ব ছিল জুয়েলের মাথায়। নিজে জীবনে কত কষ্ট করেছে তা আমি কাছ থেকে দেখেছি। আজ ভাই চলে গেল। এখন তার দুটি সন্তান ও তার বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে। তাদের আর্থিক সংকট অনেক। জুয়েলের এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গ্রামবাসী কি বলে বৃদ্ধ বাবা মাকে সান্ত্বনা দেবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। জুয়েলের বন্ধুরাও শোকে ভাষাহীন। স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার মুসল্লি বলেন, জুয়েল অনেক ভালো ছেলে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। আমরা চেষ্টা করবো সাধ্যমত ওর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান দুলাল বলেন, পরিবারটি অসহায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ছিল জুয়েল। এখন পরিবারটি আরো অসহায় হয়ে পড়ল। পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকব সুখে দুঃখে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাড়িতে মরদেহ আসার খবর পেয়ে আমি উপস্থিত হয়ে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছি।
০১ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩২
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়