• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo
জামাতে নামাজ আদায়কারীর জন্য রয়েছে যেসব মহাপুরস্কার
আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তার আসা এবং যাওয়ায় প্রতি পদক্ষেপে গুনাহ মিটে যায় এবং প্রতি পদক্ষেপে নেক আমল লেখা হয় (আহমাদ : ৬৩১১)। চলুন, জেনে নিই জামাতে নামাজ আদায়ের বেশ কিছু গুরুত্ব ও ফজিলত- ১. সালাত শয়তান থেকে হেফাজত করে হযরত আবু দারদা (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে গ্রামে বা মরুপ্রান্তরে তিনজন লোক অবস্থান করে অথচ তারা জামাত কায়েম করে সালাত আদায় করে না,  শয়তান তাদের ওপর চরে বসে।  কাজেই জামাতে সালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলছুট বকরিটিকেই উদরস্থ করে  (আবু দাউদ : ৪৬০)। ২. নিফাক থেকে পরিত্রাণ এবং জাহান্নাম খেকে মুক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, এশা ও ফজরের সালাত মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে বেশি ভারী বোঝা বলে মনে হয় (বুখারি ও মুসলিম : ১৪১১)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তকবিরের সাথে জামাতে সালাতে আদায় করে, তার জন্য দুটি মুক্তি রয়েছে- জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর নিফাক থেকে মুক্তি (তিরমিজি : ২২৪)।   ৩. কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ হযরত বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, অন্ধকার রাতে মসজিদে গমনকারীদের জন্য কেয়ামত দিবসে পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও (আব‍ু দাউদ : ৪৪৭)। ৪. জামাতে সালাত আদায়কারী আল্লাহর হেফাজতে হজরত উমামাহ (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায়, তার মধ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে ; এমনকি তার মৃত্যু হলে তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা তাকে ছাওয়াব বা গনিমত প্রদান করে (বাড়িতে) ফিরিয়ে দিবেন (আবু দাউদ : ২১৩৩)। তাছাড়া নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাত জামাতের সাথে আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে। যে আল্লাহর জিম্মাকে অবমাননা করবে, আল্লাহ তাকে  জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (দারামি : ৩৩৬৭)। ৫. মসজিদে সালাত আদায়ে অধিক ছওয়াব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জামাতের সাথে সালাত আদায়  ঘরে বা বাজারের সালাতের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি ছওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে অযু করে খুব সুন্দর করে । এবং (সালাতের জন্য) মসজিদের উদ্দেশে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে,  প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে সালাত আদায় করতে থাকে, ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে  থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ! এর ওপর দয়া কর। আর যতক্ষণ সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে সালাতের অর্ন্তভুক্ত থাকে (বুখারি ও মুসলিম : ৬১১)। ৬। কেয়ামত দিবসে আরশের নিচে ছায়া পাবেন সাহাবি আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা ছায়া দান করবেন ওইদিন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যার হৃদয় মসজিদের সাথে লাগানো। অর্থাৎ সালাত ও জামাতের প্রতি আন্তরিকভাবে আগ্রহী (বুখারি ও মুসলিম : ৬২০)। ৭. আল্লাহ তায়ালা মুসল্লির আগমনে খুশি হন রাস‍ুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পরিপূর্ণভাবে অযু করে, অতঃপর শুধু সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি এমন খুশি হন যেরূপ খুশি হয় নিরুদ্দেশ ব্যক্তির আচম্বিতে ফেরে আসায়  তার পরিবারের সদস্যরা । (ইবনু খুযাইমাহ : ৮১৩১) ৮. একাগ্রতা অর্জন ও অন্তর বিগলিত হওয়ার উপকরণ কোনো মুসলিম যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়, অতঃপর সে মসজিদে আগত মুসল্লিদের আল্লাহর সামনে  রুকু-সিজদারত অবস্থায় দেখে। যিকির এবং কোরআন তিলাওয়াত প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর কালাম স্বকর্ণে শোনার সুযোগ পায়। এসব থেকে  সে বুঝতে পারে এ ময়দান আল্লাহ ও তার  জান্নাত লাভের উদ্দেশে প্রতিযোগিতার ময়দান। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাকারীরাই  আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়। ৯. পারস্পরিক আন্তরিকতা ও মহব্বত সৃষ্টি করে জামাতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানগণ দিন ও রাতে পাঁচবার পরস্পর মিলিত হয়। তাদের মাঝে সালাম বিনিময় হয়। একে অপরের  খোঁজ-খবর নেয়। হাসিমুখে একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করে। এসব বিষয় পারস্পরিক মহব্বত, ভালবাসা এবং একে অপরের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়। ১০. অজ্ঞ লোকের শিক্ষা এবং বিজ্ঞের উপদেশ যে ব্যক্তি জামাতের সাথে মসজিদে সালাত আদায় করে, সে সালাতের আহকাম, আরকান, সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়গুলো আহলে ইলম থেকে শিখতে পারে । আহলে ইলমের সালাত দেখে উক্ত ব্যক্তি নিজের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে নেয়। এমনিভাবে ওয়াজ-নসিহত শুনে ভাল কাজে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এতে সে অনেক উপকৃত হয়, যা ঘরে সালাত আদায় করে আদৌ সম্ভব নয়।
১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১২
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়