• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
করোনা টিকায় স্নায়ুতে দেখা দিতে পারে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া!
মানুষের স্নায়ুতে করোনা টিকার জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। যদিও টিকার এ প্রভাব খুব বিরল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের ওপর চালানো হয়েছে এ গবেষণা।  সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত করতে অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের ৯ কোটি ৯ লাখের বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। করোনার টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত করা সবচেয়ে বড় গবেষণা এটি।  গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা টিকার প্রভাবে জটিল স্নায়বিক রোগ এবং মেরুদণ্ডের প্রদাহের মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। গবেষকদের দাবি, গবেষণায় এমআরএনএ ভ্যাকসিন (ফাইজার ও মডার্না) গ্রহণের ক্ষেত্রে মায়োকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের পেশির প্রদাহ) এবং পেরিকার্ডাইটিস (হৃৎপিণ্ডের পাতলা থলির ফুলে যাওয়া) -এর বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো উচ্চস্তরের নির্ভুলতার সঙ্গে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও  অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রভাবে গুইলেন-বারে সিনড্রোম (যেখানে ইমিউন সিস্টেম স্নায়ু আক্রমণ করে) এবং সেরিব্রাল ভেনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস (মস্তিষ্কে এক ধরনের রক্ত জমাট বাঁধা) মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের সহপরিচালক অধ্যপক জিম বাটারি বলেন, এই অনুসন্ধান গবেষকদের স্বাধীনভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এবার প্রায় ৬৮ লাখ অস্ট্রেলিয়ান, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের একটি পৃথক ডেটাসেট বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। যেখানে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে প্রদাহ এবং ফুলে যাওয়ার মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।  গবেষকরা অবশ্য বলছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও করোনা টিকা গ্রহণের ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাওয়ার ঝুঁকি অনেক কমেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ ডোজে মাত্র ০ দশমিক ৭৮টি ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক জটিলতা এবং ১ দশমিক ৮২টি ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডে প্রদাহজনিত সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে।  সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জুলি লিস্ক বলেন, একটি শক্তিশালী টিকাদান কর্মসূচির জন্য এসব সমস্যা শনাক্ত করা এবং সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে দেশে আবারও বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। শনিবার ৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এ সময়ে ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। চলতি বছরে দেড় মাসের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামনের কয়েক মাসে এই সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য দ্রুত টিকা নেওয়াসহ সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৫

জটিল হিসাবে টালমাটাল পাকিস্তানের রাজনীতি
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা পার হলো। এত বেশি সময় হয়ে গেলেও এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা। অন্তত ১০টি আসনের ফলাফল অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সবচেয়ে বেশি আসনে ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেলেও শেষ মুহূর্তের পরিসংখ্যান সব হিসাব বদলে দিতে পারে। নির্বাচনের ফলাফল এখন যে অবস্থাতে রয়েছে তাতে বলাই যায়, জটিল হিসাবে টালমাটাল পাকিস্তানের ভোটের রাজনীতি।  বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমরান খানের সমর্থকরা জয়ী হলেও তাদের জন্য সরকার গঠন করা অনেকটা অনিশ্চিয়তার মধ্যেই থাকবে।  জানা যায়, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত আসন, যার মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি অমুসলিমদের জন্য। এবার একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় মোট ২৬৫ আসনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। নির্বাচনে বিজয়ী হতে অন্তত ১৩৪টি আসন পেতে হবে তাদের। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের তথ্য বলছে, ভোট হওয়া ২৬৫ আসনের মধ্যে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তারা জিতেছেন ৯২ আসনে। এরপর ৭১টি আসনে জিতেছে রয়েছে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)। ৫৪ আসনে জিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি। যদিও পাকিস্তানের আরেক গণমাধ্যম জিও নিউজ দাবি করছে, ইমরানপন্থী স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৯৪ আসনে। পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৪ এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৪ আসন। ১৭টি আসনে জিতে এমকিউএম-পি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এ ছাড়া, অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৯টি আসনে। কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইমরান সমর্থক প্রার্থীরা ৯৬ আসনে, পিএমএল-এন ৭৫ এবং পিপিপি জিতেছে ৫৪ আসনে। এখনো ১০টি আসনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি। অর্থাৎ, এবারের নির্বাচনে কোনো দলই যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তা নিশ্চিত। ফলে সরকার গড়তে জোট গঠন অবধারিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইমরানপন্থিদের সরকার গঠন আটকাতে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হয়েছে নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল। পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট ও নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ বিলওয়াল ভু্ট্টো ও তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জানা যায়, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বাসায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শাহবাজ শরিফ। এ সময় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বেশ বিপাকে রয়েছেন ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরা। কারণ, দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তারা সংরক্ষিত আসন পাবেন না। ফলে পিটিআই’র পক্ষে সরকার গঠন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, স্বতন্ত্ররা তিন দিনের মধ্যে যেকোনো দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০২

নির্বাচনের সরল অঙ্কটা শুধু শুধু জটিল করা হচ্ছে 
আমাদের ছাত্রজীবনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর যখন লেখাপড়ার বিষয় আলাদা হয়ে গেল, আমার আজকের লেখার গল্পটা ওই সময়ের। আমরা একেকজন তখন একেক বিষয়ে পড়ি, কিন্তু সরল আড্ডায় যুক্ত হই সবাই। সেখানে একেক জনের পড়ার বিষয় নিয়ে গল্প বানানোর একটা চল ছিল। নির্মল মজার সব গল্প। পরিসংখ্যানের বন্ধুদের নিয়ে গল্পটা ছিল এরকম। শুকনো মৌসুমে নদীর ধারে এক ভদ্রলোক বসে আছেন। তাকে এসে আরেক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন ‘ভাই নদীতে পানি কতটুকু’? যাকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি পরিসংখ্যানের ছাত্র। তিনি জবাব দিলেন ‘পানি গড়ে এক ফুট।’ ভদ্রলোক নিশ্চিন্তে হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে নদীতে নেমে গেলেন। কিছু দূর গেলেনও। হঠাৎ নেমে গেলেন গলা পানিতে। গলা পানিতে দাঁড়িয়ে ওই ভদ্রলোক পরিসংখ্যানের বন্ধুকে বললেন, ভাই আপনি বললেন পানি একফুট! এটা কী হলো? পরিসংখ্যানের বন্ধু গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আপনি খেয়াল করেননি, আমি বলেছিলাম পানি গড়ে একফুট। আপনি এখন তথ্যের সর্বোচ্চ সীমায় আছেন।’    আমাদের এবারের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এই গল্পটা খুব মনে পড়ছিল। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে যখন নানা সংগঠন একপেশে মন্তব্য করছে, কিন্তু সার্বিক তথ্য দিচ্ছে না। ঠিকঠাক গড় কেউ করছে না। কেউ গড়ের মত করে বললেও, নিজের পছন্দ নয় এমন তথ্য বাদ দিয়ে গড় করছেন। যার যেখানে সুবিধা সেখান থেকে তথ্য দেয়া শুরু করছেন। ঠিকঠাক শুনে, বুঝে না চললে তো গলা পানিতে নামতেই হবে। নির্বাচন নিয়ে সবশেষ ওই রকম সিদ্ধান্ত দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। একটি গবেষণা ও গবেষণা পদ্ধতির ওপর ভর করে তারা বলেছে, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। পরে তারা নানা নির্বাচনী অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রায় এই একই সুরে নির্বাচনের সমালোচনা করেছে নির্বাচনে অংশ না নেয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের সুরে ও লয়ে কথা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।   বিএনপির নিয়ে সমালোচনা নিয়ে আমার কোন কথা নেই। তারা একটি রাজনৈতিক দল। তারা একটি দর্শন প্রতিষ্ঠা করার রাজনীতি করে। ভিন্ন মতের কাজে তারা সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলের ভুল ক্রুটি জনগণ বিবেচনায় নেবে। মার্কিন সমালোচনাও আমার খুব অস্বাভাবিক মনে হয় না। আমাদের সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে নিয়ে যে বলয়ে ছিলো আজও সেই বলয়ে আছে। বিশেষ কোন দলতো তাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়। তাদের ফ্যাক্টর বলয়। সেটা আজকের আলোচনার বিষয় নয়। আজকের আলোচনা, সম্প্রতি শেষ হওয়া খুবই সরল একটি নির্বাচন নিয়ে।  আমরা যদি টিআইবির রিপোর্টটি দেখি, সেখানে কোথাও বলা হয়নি যে নির্বাচন হয়েছে টানা দুইদিন হরতালের মধ্যে। নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে ঢাকায় একটি ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন যায়গায় বোমা ফাটিয়ে ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরিকল্পিত গুজবে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল পুরো নির্বাচনী পরিবেশ। টিআইবির রিপোর্টে ৫০টি আসন থেকে তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। তাদের কথা যদি সত্য ধরি তাহলেও কি ৫০টি আসনের তথ্য দিয়ে ৩০০ আসনের সার্বিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো নৈতিক? মানুষের ভোট দেয়ার প্রবণতা একেক জায়গায় একেক রকম। গড় তথ্য দিয়ে মানুষের মনো বিশ্লেষণ কতটুকু ঠিক তা নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশ্ন রয়েছে।  আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে যদি একটা সরল হিসাবে যাই, দেখবো সেখানে গড়ে ভোট পড়েছে ৮৭ ভাগ। এটাই আমাদের দেশের সর্বোচ্চ ভোটের হার। সেই নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগ ভোট পায় ৪৮ ভাগ এবং জাতীয় পার্টি ৭ ভাগ। বিএনপি পায় ৩২ ভাগ। নির্বাচন বিরোধী আন্দোলনে আছে বিএনপি। তাদের বেশিরভাগ ভোটার ভোট দিতে যাবে না সেটাই স্বাভাবিক। বাকি ৫৫ ভাগের মধ্যে ১৫ ভাগও যদি ভয় পেয়ে ভোট দিতে না যায় সেটা কী খুব অস্বাভাবিক হবে? এরমধ্যে শটকারা ৪২জন ভোটার ভোট দিতে বের হতে পেরেছে। আমাদের বলা উচিত ভোটারদের দিক দিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকই হয়েছে।  এই ৪২ ভাগ ভোট পড়ায়ও খুশি হয়নি টিআইবি। তাদের মনোভাব বলছে, ভোট আরও কম পড়ার কথা। ভোটারদের জোর করে কেন্দ্রে আনা হয়েছে। ভোটারদের জোর করে কেন্দ্রের আনার তথ্য সেইভাবে গণমাধ্যমেও আসেনি। গণমাধ্যমে এসেছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যান। একজন নির্বাচন পরিচালক যদি বলেন ‘আপনারা ভোট দিতে যান’ দোষ কোথায়? বিএনপির পক্ষ নিয়ে ইসিতো বলতে পারে না যে ‘আপনারা ভোট দেবেন না’ এর আগেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।    আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ বলছে, আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি দুদলই নির্বাচনে ফল খারাপ করেছে। তাদের সব ভোটার ভোট দিতে আসেনি। এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনী ফলাফলের চেয়ে তারা দুদলই আসন কম পেয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ। টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাপ্রাপ্তদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্যে হুমকি দেয়া হয়েছে। প্রচলিত গণমাধ্যমে এমন রিপোর্টও দেখিনি। আমার জানামতে সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত ভোটারের সংখ্যা পাঁচকোটি। এই পাঁচ কোটি ভোটার কী হরতালের বাধায় ভোট কেন্দ্রে আসতে পেরেছে? এই সুবিধাভোগীরা সবাই ভোট দিতে পারলে তো ভোটের হার ৫৫ থেকে ৬০ হয়ে যাওয়ার কথা।   তবে টিআইবির একটা বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। সেটা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের দিক দিয়ে সবদল নির্বাচনে আসেনি। যে কারণে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। আমিও বলতে চাই এবারের নির্বাচন ২০০৮ এর মত হয়নি। কিন্তু নিজেকে অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাবি করে যদি বলতাম, তাহলে বলতাম কেন এবারের নির্বাচন ২০০৮ এর মত হয়নি। যে দাবিতে বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে, সেই দাবিটি কতটা যৌক্তিক সেই বিশ্লেষণটাও করতাম। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম একটা লেখায় এরকম একটি বিশ্লেষণ করেছিলেন। অসাধারণ সেই বিশ্লেষণে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে নিজেদের নৈতিকতার সূচক কতটা নামালো।  রিপোর্ট প্রকাশের পর টিআইবির প্রধান একটি জাতীয় দৈনিকের সাক্ষাতকারে বলেছেন আজকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও বলতো টিআইবি আওয়ামীপন্থী। আসলে তিনি কোন পক্ষ না। তিনি নিরপেক্ষ। আসলে এই নিরপেক্ষ চরিত্র কারো চাওয়া নয়। নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে, তিনি যদি ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্রের ভোট মূল্যায়ন করেন গুটিকয় কেন্দ্রের ওপর ভর করে, নির্বাচনী কৌশলকে যদি তিনি ‘খেলা’ হিসাবে মূল্যায়ন করেন তাহলে কী তিনি নিরপেক্ষ থাকলেন? একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে তিনি যদি নির্বাচন মূল্যায়ন করে থাকেন আমার কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু তিনি যদি নিরপেক্ষতার দাবি তোলেন, তাহলে অবশ্যই তাঁকে নিউটনের সূত্র মানতে হবে। ‘প্রত্যেকটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে’ আজ যদি আমি বলতে চাই ২০২৪ এর নির্বাচন ২০০৮ এর নির্বাচনের মত হয়নি। তাহলে কেন হয়নি কোন পক্ষের বাধায় হয়নি, কোন অনমনীয় মনোভাবের কারণে হয়নি, সবই বলতে হবে। সব না শুনে না বুঝে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তারা ওই পরিসংখ্যানের গল্প শোনা লোকটির মত গলা পানিতে নেমে যাবেন।  লেখক : গণমাধ্যম কর্মী
২১ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:১৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়