• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo
পিস্তল ও চাকু নিয়েই ক্লাসে যেতেন শিক্ষক রায়হান
ইন্টারনেটে বিদেশি পিস্তলের ছবি দেখে পছন্দ হলেই ডাউনলোড করে রাখতেন শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের কাছ থেকে দুটি পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ গুলি, বিদেশি ও অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু জব্দ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ।  মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুলহাজ উদ্দীন।  এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দুটিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জব্দ হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দুটি সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড তাজা গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি ছুরি, ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু ও দুটি ব্রাশ নাকেল। এ ছাড়া তার কাছ থেকে আইডি কার্ড ও ব্যবহৃত নিজ নামীয় ডিজিটাল সিল, গুলির খোসা, মোবাইল ফোন ও লেদারের ব্যাগও জব্দ করা হয়েছে।  মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। পরে অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাগ্রতা প্রকাশ করেন সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে হেফাজতে নেওয়ার সময় ওই শ্রেণিকক্ষ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়। এরপর অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি জানান, তার একটি লেদারের ব্যাগের মধ্যে আরও পিস্তল ও গুলি রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বাকি অস্ত্র জব্দ করা হয়।  সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ওসি জুলহাজ উদ্দীন বলেন, তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও ডিবির এক উপ-পরিদর্শক বাদী হয়ে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুটিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষক ইন্টারনেটে বিদেশি পিস্তলের ছবি দেখে পছন্দ হলেই ডাউনলোড করে রাখতেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল ফোন ঘেটে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তলের অনেক ছবি পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, অস্ত্রের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।  এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরি বলেন, ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। এমন ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ সরেজমিনে মেডিকেল ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আমি যতটা ভেবেছিলাম ছেলেটা ততটা আহত হয়নি। সেই তুলনায় এখন সে অনেকটা ভালো আছে। তবে সে ভীষণ ভয় পেয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।  ড. জান্নাত আরা হেনরি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসে। ওরা তো আমাদেরই সন্তান। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের সবার। এই অন্যায়কে আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেব না। আমি বলেছি অপরাধী যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে।  প্রসঙ্গত, সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।  এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত করতে কলেজে এসেছেন তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। 
০৫ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৭
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়