• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo
‘কারেন্ট জালের উৎপাদন স্থান নির্মূল করতে হবে’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, জেলেদের কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরার একটি বিষয় রয়েছে। এই বিষয়ে নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবেও খুবই ব্যথিত। পাগলেও নিজের বুঝ বুঝে। এই কারেন্ট জাল দিয়ে সবেমাত্র ভূমিষ্ঠ হওয়া মাছের সন্তান যদি ধরেন, তাহলে এই মাছ বড় হতে পারবে না। বড় মাছ আমরা আর কোনদিন চোখে দেখব না। তাই এই কারন্টে জাল সমূলে উৎপাটিত হওয়া দরকার। কারেন্ট জালের যে উৎস, যেখান থেকে এই জাল তৈরি হয়, ওই জায়গাটাকে চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে। ওই কারেন্টের জাল যেখান থেকে তৈরি হয়, ওই খোয়াড়কে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিতে হবে। আর এটি প্রশাসনকেই করতে হবে। এটি বন্ধ করতে পারলে কোন জেলে এই জাল দিয়ে নদীতে নামার সুযোগ থাকবে না। সুতরাং এই বিষয়টি আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকষর্ণ করছি। সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মূলহেডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে ১১ থেকে ১৭ মার্চ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুর রহমান বলেন, আজকে আমরা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম, ইলিশকে নিরাপদ রাখবার জন্য, বিশেষ করে মা ইলিশকে বাঁচাবার জন্য এবং জাটকা নিধন বন্ধের জন্যই চাঁদপুরে আসা। অভিযানকালীন আমরা যদি মা ইলিশ রক্ষা না করি, তাহলে আমরাই (জেলেরা) বিপদে পড়ব। মা ইলিশ রক্ষার জন্য বড় ভূমিকা জেলেদের। দেশের সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে ৫ লাখ ৭১ হাজার মৎস্যজীবীদের তালিকা আছে। আমি এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলব আপনারা এই তালিকাটি সঠিকভাবে প্রণয়ন করেন এবং এই মৎস্য জীবীকার সাথে যারা জড়িত তাদের একটি নামও যেন এই তালিকা থেকে বাদ না যায়, সেই ব্যবস্থা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ভরসাস্থল হচ্ছে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের মমতাময়ী মা। মন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে বড় একটি চ্যালেঞ্জ এবং বড় একটি হুমকির মোকাবিলা করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজকে তিনি এ দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার স্থিতিশীল পর্যায় নিয়ে এসেছেন। আপনারা সবাই জানেন ৭ জানুয়ারি একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনের আগে অনেক নিন্দুকেরা এবং তাদের বিদেশি প্রভুরা বলেছিল এ দেশে শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরক্ষে নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের মুখে ছাই দিয়ে শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার অধীনে এবং কেবল মাত্র তার অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন হয়। গত ৭ জানুয়ারির দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচনই তা প্রমাণ করে। তিনি বলেন, এই দেশ বাঁচাতে হলে, শেখ হাসিনাকে বাঁচতে হবে। আর শেখ হাসিনাকে বাঁচতে হলে এই দলকে বাঁচতে হবে এবং সু-সংগঠিতভাবে বাঁচতে হবে। শেখ হাসিনার দূরদির্শতার কারণে আমরা সব ধরণের সংকট ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা যে জাটকা রক্ষা সপ্তাহ পালন করছি। আমাদের ইলিশের উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, এর থেকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তুলনা করি, তাহলে আজকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি প্রায় ৬ লাখ মেট্টিক টন ইলিশের উৎপাদন বাংলাদেশের অর্জিত হয়েছে, তা কেবল মাত্রই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার মাটি আমার মানুষ, আমার পাট আছে, আমার সম্পদ আছে এবং আমার ইলিশ আছে। আর এই ইলিশেই হতে পারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উপাদান। যথার্থভাবে আজ থেকে বহুদিন আগে ১৯৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছিলেন। যার বাস্তব ও প্রয়োগিক ফলাফল ধীরে ধীরে এই জাতি আজকে উপভোগ করছে। মন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদেরকে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু এই দেশের মানুষের মুখে হাঁসি ফুটাবার জন্য নিরন্তন কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনা বাবা-মা হারানোর ব্যথা ও অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এই বাংলার মাটিতে এসেছেন। সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের উদ্দেশে বলেছেন আমার পিতা ঘাতকের বুলেটে জীবন দিয়ে গেছেন। তার বুকের তাজা খুন এই পদ্মা-মেঘনা ও যমুনার কালো পানি লালে লাল হয়েছে। আজ আমি এসেছি একটি মাত্র স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। যে স্বপ্ন আমার বাবা বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। দেশের মানুষের মুখে তিনি হাসি দেখবেন। আর এই বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্যই আমার বাবার সেই অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করবার জন্যই আজকে এই দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেছি এবং আপনাদর মাঝে ফিরে এসেছি। সেই থেকে তার নিরন্তন যাত্রা। আব্দুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে তলাবিহীন ঝুড়ি সরকার, সেই বাংলাদেশ কেন আজ মেট্টোরেলের মালিক হবে। সেই বাংলাদেশ কেন আজকে আমাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করে নিজের অর্থে পদ্মা-সেতু নির্মাণ করবে। এই বাংলাদেশ কেন আজ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবে, কেন আজ বঙ্গবন্ধু ট্যানেল দিয়ে গাড়ি চলবে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কেবল মাত্র হিংসা থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু এই বাংলার লক্ষ কোটি মানুষের সমর্থন আজ শেখ হাসিনাকে সাহস যুগিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আজকের এই মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় নাই। আজকে বাঙালি দুই বেলা মাছে ভাতে থাকে না। এই বাংলাদেশের মানুষ আজ তারা একটি গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার জন্য নতুন প্রস্তুতি নিচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ইলিশ এমন সম্পদ, যে সম্পদ দিয়ে আমি বিদেশি মুদ্রা অর্জন করব এবং তৃতীয় রপ্তানিমূখী পণ্য হিসেবে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিব। তিনি বলেন, আমরা বছরে দুই থেকে তিনবার টিআর কাবিখা দিয়ে থাকি। সেখানে একটিবার যদি জেলেদের জন্য কিছু অংশ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি অর্থাৎ জেলেদের উপকরণ দিতে পারি, সেটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আমরা আনব। আর যেসব জেলেদের বাড়ি নেই, ভূমি নেই তাদের তালিকা তৈরি করেন। সেই ব্যবস্থা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী এই কার্যক্রম চালু রেখেছেন। মন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র নৌপুলিশ, ডিসি এবং এসপিকে দিয়ে জাটকা রক্ষা হবে না। আমাদের নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এই জাটকা রক্ষা সপ্তাহ গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। আমাদের এই জাটকা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে ভরা যৌবনের চাঁদপুর আবার ইলিশের যৌবনে ভরে যাবে এই কথা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, সেখানে এই ইলিশের উৎপাদন সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এটি আমি আশা এবং বিশ্বাস করি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন- মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর। অনুষ্ঠান শেষে শহরের মোলহেড থেকে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ সংশ্লিষ্টদের অশংগ্রহণে মেঘনা নদীতে নৌর‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ শত শত মৎস্যজীবী অংশগ্রহণ করেন।
১১ মার্চ ২০২৪, ২৩:২৭

মেঘনায় এক লাখ মিটার কারেন্ট জালসহ জাটকা জব্দ
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা পৃথক ৩টি বিশেষ অভিযান কম্বিং অপারেশন চালানো হয়। এ সময় এসব অভিযানে ১ লাখ মিটার কারেন্টজাল, ১টি বেহুন্দি, ৮টি মশারি জাল এবং ২৮ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে এসব তথ্য জানান চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুর সদরে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ অভিযান কম্বিং অপারেশন চালানো হয়। এর মধ্যে সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান করে ৪০ হাজার মিটার কারেন্টজাল ও ২৪ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অভিযানে জব্দ করা হয় ৩০ হাজার মিটার কারেন্টজাল ১টি মশারি জাল এবং ৪ কেজি জাটকা। দিনের সর্বশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এ সময় জব্দ করা হয় ৩০ হাজার মিটার কারেন্টজাল, ১টি বেহুন্দি ও ৭টি মশারি জাল। জব্দকৃত সব ধরনের জাল কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনে এনে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয় এবং জব্দকৃত জাটকা স্থানীয় গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এসব অভিযানে সহযোগিতা করেন শাহরাস্তি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, সদর উপজেলার ক্ষেত্র সহকারী জামিল হোসেন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৩
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়