• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo
রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয়
চলছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে প্রতি বছর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রাখেন সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে। দীর্ঘ সময় পানি পান না করায় এবং ইফতারে পরিমাণমত পানি পান না করায় এ সময় হতে পারে খুব সহজেই পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতা হলে শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন, অতিরিক্ত মুখ বা ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। এর থেকে তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা। নিয়মিত পরিমাণমতো পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।  রোজার সুস্থ ও পানিশূন্যতামুক্ত থাকতে চাইলে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি- >> ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত সময়ে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি খেতে হবে অবশ্যই। প্রতিবেলা খাওয়ার ১০ মিনিট আগে ও কিছুক্ষণ পরে ১ গ্লাস করে পানি খেতে হবে। খাওয়ার মাঝখানে পানি খাবেন না কিংবা একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি খেয়ে ফেলবেন না। ঠান্ডা পানির তুলনায় দ্রুত শোষণ হয় বলে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। >> রোজায় সময় খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখবেন যেগুলো সহজে হজম হয়। ভাজাপোড়া কিংবা রিচ ফুড শরীরকে আরও পানিশূন্য করে তোলে। >> ইফতার মেন্যুতে পানিজাতীয় খাবার ও ফল রাখুন। বেশি করে খেতে পারেন শসা ও তরমুজ। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। সঙ্গে থাকতে পারে শরবত।  >> ডাবের পানি খেতে পারেন প্রতিদিন। প্রয়োজনে স্যালাইন খান।  >> প্রয়োজন ছাড়া রোদে যাবেন না কিংবা রোজা রেখে ভারি ব্যায়াম করতে যাবেন না। এতে ঘাম বেশি হয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। >> ইফতারের পর অতিরিক্ত চা কিংবা কফি খাওয়া অনুচিত। >> অনেকেই ইফতারের পর ফ্রিজে রাখা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করেন, এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। >> নিয়মিত গোসল করতে হবে, খুব খারাপ লাগলে চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিতে পারেন। >> টকদই ও লাচ্ছি যোগ করতে পারেন ইফতারে। >> খেজুর, ফল, জুসের সঙ্গে ইফতারে রাখতে পারেন পান্তাভাত, যা সারাদিনের রোজার শেষে আপনার দেহে পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। >> ডায়রিয়া বা জ্বর বা অতিরিক্ত বমি হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। >> গবেষণায় দেখা যায়, প্রচুর চিনি থাকায় মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে তৃষ্ণা বাড়ে। এর পরিবর্তে ফল খেতে পারেন, যা দেহে তরলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তৃষ্ণাও মেটায়।
১৬ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৪

পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের করণীয় ও বর্জনীয়
রমজান মাসে যে রহমত নাজিল হয় তার তুলনায় অন্যান্য মাসের নাজিলকৃত রহমত, সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতো। এ কারণে সব আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। এই মাসে কোনো নফল করলে সেটা ফরজের সমান সওয়াব, আর কোনো ফরজ করলে সেটিরও ৭০ গুণ সওয়াব।  হাদিস শরিফে এসেছে, রসুলুল্লাহ দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন।’ এ মাসটি কত বরকতময় যে তা পাবার জন্য আল্লাহর রসুল পর্যন্ত দোয়া করতেন। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেন– يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ   ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার (সুরাহ বাকারাহ : ১৮৩)। এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, রোজা এই কারণে ফরজ করা হয়েছে যাতে আমরা পরহেজগার, মুত্তাকি হতে পারি। আর পরহেজগার হবার জন্য প্রথম গোনাহ পরিত্যাগ করতে হবে, তারপর নেকি বেশি বেশি করে করতে হবে। গোনাহ বর্জন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অনেকে রোজার দ্বারা ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করে না। অন্য এক হাদিস শরিফে বলেন, ‘যে গর্হিত কথাবার্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারে না, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, তার রোজা গ্রহণীয় নয়। সবরকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এর মধ্যে আর একটি ভয়াবহ গোনাহ হোলো গীবত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের যুগে দুই মহিলা রোজা রাখল। রোজায় তাদের এত কষ্ট হলো যে, তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হলো। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের কুলি করতে বললেন। তারা কুলি করলে তাদের মুখ থেকে ছোটো গোস্তের টুকরা বের হলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, আমরা তো কোনো পানাহারই করিনি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, মূলত তোমরা রোজা রেখে অন্যের গীবত করেছ। আর গীবত হোলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া।  অন্যান্য গোনাহ আসুন এই রোজায় সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করে ফেলি। মনে করি এটাই আমাদের শেষ রোজা। যারা মোবাইলে গান শোনেন তারা অন্তত এই মাসটা গান বন্ধ রাখুন, এর পরিবর্তে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, কাসিদা শুনুন। আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, কেউ কি কখনও বলে এটা ছোট আগুন ওটা বড় আগুন। ছোট হোক, বড় হোক পুড়িয়ে ধংস করার জন্য এক শলতে আগুনই যথেষ্ট। তেমনি গোনাহ ছোট হোক বা বড় হোক সব ক্ষতিকর। নেককারদের আমল রমজান মাসে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে, যথা- বিশ রাকাত তারাবিহ সালাত আদায় করা, সেহরি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, কোরআন করিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা।  রমজানে প্রতিটি ইবাদতের বিনিময় সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নফল পালন করলে একটি ফরজ পালন করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজান মাসে নফল ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসের বিশেষ নফল আমলসমূহ হলো- কোরআন মাজিদ একাধিকবার খতম বা পূর্ণ পাঠ করা; কালিমা তৈয়্যবা বেশি বেশি পাঠ করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পাঠ করা; তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা; সর্বদা তসবি তাহলীল ও জিকির করতে থাকা; দীনী শিক্ষা ও দীনী দাওয়াতি কাজে মশগুল থাকা; ধর্মীয় বই-পুস্তক, তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ও ইসলামি সাহিত্য পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা; দীনী মজলিশ ও মাহফিল আয়োজন করা; অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া এবং তাদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা; বেশি বেশি দান খয়রাত করা; ইহসান তথা সদা আল্লাহর অস্তিত্বের উপস্থিতির ধ্যান করা ও আল্লাহর সঙ্গ বাস্তবে অনুভব করা অথবা আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারির চেতনা মনে জাগ্রত রাখা। (বুখারি: ৪৮)।  
১১ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৭

রমজানের আগমনে মুমিনের করণীয়
ক্ষমার মহান বারতা নিয়ে সমহিমায় হাজির হচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। মুমিনের হৃদয়মাত্রই প্রহর গুনছে রমজানের একফালি চাঁদের জন্য। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়, তেমনি সব পাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর সুযোগও এনে দেয় রমজান। আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন পরেই শুরু হবে মর্যাদাপূর্ণ এই মাস। রমজানের আগমনের আগে মুমিনের বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে।  রমজানে মুমিন জীবনে যে পরিচ্ছন্নতা আসে, তা ধরে রাখতে মনীষীরা কিছু আমল করার পরামর্শ দেন। তা হলো— ১. রমজানের প্রস্তুতি কেন নেব: রমজান মাসকে অধিক ফলপ্রসূ করতে রমজানের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণ হলো—নিজেকে ইবাদত-বন্দেগি ও সাধনার জন্য প্রস্তুত করা। যেন রমজানের আগেই আলস্য দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য আল্লাহর তাওফিক লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯) ২. আল্লাহভীতির জীবন যাপন করা: দীর্ঘ এক মাস রোজা আদায়ের প্রধান উদ্দেশ্য তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩) সুতরাং রমজান-পরবর্তী জীবনে যদি আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে চলা যায়, তবে দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনা সার্থক বলে গণ্য হবে। আর আল্লাহভীতিই মুমিনজীবনে সাফল্যের মাপকাঠি। ৩. দোয়া করা: মুমিন রমজানের পরও একটি সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। আল্লাহর অনুগ্রহেই কেবল মুমিন বিভ্রান্তির হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং আপনার কাছ থেকে আমাদের করুণা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮) ৪. আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা: রমজান মাসে যেসব নেক আমল করা হতো, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুমিনের দায়িত্ব। মহানবী (সা.) আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় উৎসাহিত করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা সাধ্যানুযায়ী (নিয়মিত) আমল করবে। কেননা তোমরা বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না। মহান আল্লাহ ওই আমলকে ভালোবাসেন, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। তিনি (সা.) কোনো আমল করলে তা নিয়মিতভাবে করতেন। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৬৮) ৫. জাকাত ও দানের প্রস্তুতি: মহানবী (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ০৬) তাই রমজানে দানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। যদিও জাকাত প্রদানের নির্ধারিত কোনো মাস নেই। তবু আলেমরা বলেন, রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন। ৬. মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়: সমাজের অনেকে রমজান মাসে মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং রমজানের পর মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না—এটি নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেসব মানুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যারা মসজিদে উপস্থিত না হয়ে ঘরে নামাজ আদায় করে। তিনি বলেন, ‘যদি ঘরে নারী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা না থাকত, তবে আমি এশার নামাজে দাঁড়াতাম এবং দুই যুবককে নির্দেশ দিতাম, যারা (জামাতে অংশ না নিয়ে) ঘরে আছে তাদের পুড়িয়ে দিতে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৭৯৬) ৭. কোরআনচর্চা অব্যাহত রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে পরবর্তী যুগের সব মনীষী রমজান মাসে কোরআনচর্চা বাড়িয়ে দিলেও বছরের কোনো সময় তাঁরা কোরআনচর্চা থেকে একেবারেই বিরত থাকতেন না। ইসলামী আইনজ্ঞরা কোরআন থেকে বিমুখ হওয়াকে হারাম বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কোরআন পরিত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে। ’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৩০) ৮. কোরআন পাঠ ও তাহাজ্জুদ: রমজানে মহানবী (সা.)-এর দুটি প্রিয় আমল ছিল কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। রমজানে নবীজি (সা.) তার পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য ঢেকে দিতেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা পরস্পরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬) ৯. চাঁদের হিসাব রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫) ১০. সুযোগ হলে নফল রোজা রাখা: রমজানের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) শাওয়াল মাসে গুরুত্বের সঙ্গে ছয় রোজা পালন করতেন। একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা শাওয়ালের ছয় রোজার মর্যাদা ও ফজিলত প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪) এ ছাড়া মহানবী (সা.) আইয়ামে বিজ তথা চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমার বন্ধু (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন করে সওম পালন করা, দুই রাকাত সালাতুদ-দুহা আদায় এবং ঘুমানোর আগে বিতর নামাজ পড়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৮১)। ১১. আল্লাহওয়ালাদের সংস্রব: আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহমুখী মানুষের সংস্রব মানুষকে সুপথে থাকতে সহায়তা করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯) কাব (রা.) বলতেন, যে ব্যক্তি রোজা রাখে এবং মনে মনে প্রত্যয় গ্রহণ করে রমজানের পর আল্লাহর অবাধ্য হবে না, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে রোজা রাখে এবং মনে মনে বলে ফিতরের পর আল্লাহর অবাধ্য হবে, তার রোজা প্রত্যাখ্যাত হবে। (লাতায়িফুল মাআরিফ)। আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন।
০৯ মার্চ ২০২৪, ২১:২৩

বাংলাদেশে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা: করণীয় ও প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের নারীরা যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে তাকে সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। তার মেধা শ্রমশক্তিকে শুধু সাংসারিক কাজেই ব্যয় করা হয়েছে। সমাজ ও দেশ গঠন কাজে তাকে কখনও সম্পৃক্ত করা হয়নি। নারী আন্দোলনের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন– ‘তোমাদের কন্যাগুলিকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, তাহারা নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক।’ তাঁর এ আহ্বানে নারীর অধিকার অর্জনের পন্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও লিঙ্গভিত্তিক সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবু নারীদের নিরাপত্তা, বিশেষ করে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করা একটি স্থায়ী চ্যালেঞ্জ হিসাবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা মৌলিক অধিকার এবং ক্ষমতায়নের মূল চালিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ও সংস্কৃতির নানামুখী পরিবর্তন হয়। শিক্ষা শুধু যে আত্মিক বিকাশের জন্যই অপরিহার্য তা নয়; বরং শিক্ষা বর্তমানে কর্মের দৃঢ় সুযোগ এবং সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭২ সালে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রচিত এ সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে ২৭ ধারায় উল্লেখ আছে যে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ২৮(১) ধারায় রয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না’। ২৮(২) ধারায় আছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন’। ২৮(৩)-এ আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষভেদ বা বিশ্রামের কারণে জনসাধারণের কোনও বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনও নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না’। ২৮(৪)-এ উল্লেখ আছে যে ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের কোনও অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনও কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’। ২৯(১) এ রয়েছে–  ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে’। ২৯(২)-এ আছে–  ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না’। এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্র, অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি  বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গৃহীত হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ সালে কার্যকর হয়। নারীর জন্য আন্তর্জাতিক বিল অব রাইটস বলে চিহ্নিত এই দলিল নারী অধিকার সংরক্ষণের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড বলে বিবেচিত। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ তিনটি ধারায় [২, ১৩(ক), ১৬(ক), ও (চ)] সংরক্ষণসহ এ সনদ অনুস্বাক্ষর করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ প্রণয়ন করে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত এ দেশের বৃহত্তর নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়ন করা। এতদসত্ত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর ওপর যৌন হয়রানি ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভিভাবক মহলে দুশ্চিন্তার রেখাপাত দাঁড় করিয়েছে। একটি গবেষণা সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় যে পড়াশোনার মান নিয়ে সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীরা একই ধরনের মত দিলেও নিরাপত্তার বিষয়ে বিশাল মত পার্থক্য দেখা গেছে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও নারী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ঝুঁকির মতো বিষয়গুলোতে দুই দলের এই বিশাল মতপার্থক্য এটি স্পষ্ট করে দেয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনও নিরাপদ বোধ করার মতো পরিবেশ নারী শিক্ষার্থী প্রদান করা যায়নি। বাংলাদেশের সামাজিক রীতি-নীতিতে বরাবরই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটে আসছে। বাংলাদেশে আর্থিক উপার্জনমূলক খাতে নারীর পদচারণা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক উভয় কর্মক্ষেত্রেই বেড়েছে। নারীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বাড়ায়, নারীদের আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রের পরিধি ও অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের আওতায় শিল্প, কলকারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে। নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগ্যতা ও দক্ষতাতেও পরিবর্তন এসেছে। সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৭ শতাংশ নারী। উদ্যোক্তা হিসেবেও নারীদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে, বিশেষত অনলাইন ব্যবসায়। গত তিন দশকে নারীর ক্ষমতায়ন হলেও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পেছনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে কর্মজীবী নারীর নিরাপত্তা। যৌন হয়রানির ফলে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি, মর্যাদাহানি এবং নারীর জীবনের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে, নারীর পরিবারে দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা ও অসম্মান ভোগ করে। তাই যৌন হয়রানি বন্ধে সরকারকে আইন, বিচার ও প্রশাসন রাষ্ট্রের এই তিন অঙ্গের সবকটি দ্বারা নারীর জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছিল। সেখানে বলা আছে, কোনও প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্ত এবং প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু কর্মজীবী নারীদের এবং শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই হাইকোর্টের এই নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক গত ২০১৯ সালের ১০ জুন জেনেভাতে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ১০৮তম সেশনে ‘Elimination of Violence and Harassment in the world of work’ শীর্ষক কনভেনশন ১৯০-এ বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসনে একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা গ্রহণ করে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে এই কনভেনশনের প্রস্তাবনা একদিকে একটি শক্তিশালী ফ্রেমওয়ার্ক ও সুরক্ষা কবজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে শিক্ষার সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার হার সমান হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা মাত্র ৩ শতাংশ পিছিয়ে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ৬ শতাংশ এগিয়ে মাধ্যমিক স্তরে। পেশাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে। পেশাগত শিক্ষায় নারী ৩৮ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ৩৩ শতাংশ। অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করেই এগিয়ে চলেছেন দেশের নারীরা। আকাশে বিমান ওড়াচ্ছে নারী। হিমালয়ের চূড়ায় উঠছে নারী; বন্দুক কাঁধে যুদ্ধেও যাচ্ছে। নারীর নিয়োগ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে। রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরতদের ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী। শিক্ষায় নারীর নিরাপত্তার উন্নয়নে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং হয়রানির ব্যাপকতা। নারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মৌখিক অপব্যবহার, যৌন হয়রানি এবং এমনকি শারীরিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হয়, যা তাদের অ্যাকাডেমিক কর্মক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তদুপরি হয়রানির অভিযোগের সমাধান এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থার অভাব সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রায়ই রিপোর্ট করা হয় না, যা দায়মুক্তি এবং নীরবতার সংস্কৃতিকে স্থায়ী রূপ দান করছে। কিন্তু এরপরও সিংহভাগ নারীকে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। একক নারী, নারীর একক পরিবার এবং একক মা—নারীর এই পরিচয়কে সমাজ করুণার চোখে দেখে। উন্নয়ন ও আধুনিকতার এই ডামাডোলের মধ্যেও নারীকে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশে চলাফেরা করতে হয়। ঘরে, বাইরে, পরিবহনে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে নারীর যতই অর্জন থাকুক কিন্তু নিরাপত্তা ও অধিকার নারীরা ঠিক সেই অর্থে পাচ্ছেন না। অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন, দেশে ৪৩ শতাংশের বেশি নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজে যুক্ত। পুরুষের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। দেশের জিডিপিতে মোট জাতীয় উৎপাদনে নারীর অবদান ২০ শতাংশ। এই কাজগুলো কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা ছাড়াই গৃহিণীরা করে থাকেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গসমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেসকোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কিছু হতাশা থাকলেও নারীর ক্ষমতায়নে দেশের অর্জন অনেক। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জেন্ডার সমতাভিত্তিক এক উন্নত-সমৃদ্ধ বিশ্বে প্রবেশের মাধ্যমে উন্নত দেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। প্রান্তিক নারী প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলোর কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত নীতি তৈরি করা দরকার। যেসব আইন ও নীতি আছে, তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ অবসানে স্কুলের পাঠ্যক্রমে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এছাড়া নারীর নিরাপত্তার উন্নয়ন, সহিংসতার শিকার নারীদের আইনি সেবা পাওয়ার সহজপ্রাপ্যতা, সহিংসতা রোধে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়গুলো সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের কার্যক্রম ও কৌশলে স্থান পাওয়া উচিত। এছাড়াও দেশের শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। করণীয়– ১. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কার্যক্রমের শুরুতে এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গীয় সমতা ও যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত দিকনির্দেশনাটি বই আকারে প্রকাশ করতে হবে। ২. নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ৩. আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি থাকা উচিত। ৪. গণপরিসরে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা। ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলীর মাঝে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত আইন, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধী একটি কমিটি থাকতে হবে। ৭. নারীবান্ধব অবকাঠামোগত বরাদ্দ বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে নারী সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হয়। ৮. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নিজস্ব নৈতিক নীতিমালা বা কোড অব কন্ডাক্ট থাকা প্রয়োজন। ৯. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন সেল গঠন ও তার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত করা। ১০. নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশনগুলো অনুমোদন এবং সে অনুযায়ী আইন সংস্কার জরুরি। সর্বোপরি, নারীবান্ধব শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিবেশ উন্নত হলে বাংলাদেশ তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে, যা আগামীর জন্য সুখী, সমৃদ্ধশালী ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে। লেখক: প্রভাষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
০৯ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৩

রোজার প্রস্তুতি ও করণীয়
পবিত্র মাহে রমজান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ উপহার। রমজানে জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করিয়ে জান্নাতি করে তোলার চমৎকার সুযোগ। রমজান আসার আগে রমজানকে পাবার জন্য মু’মিনের হৃদয় ব্যাকুল থাকে। আবার রমজান শেষ হয়ে আসলে মুমিনের হৃদয়ে ইমানী ব্যথা অনুভূত হয়। মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। রুটিন করে ইবাদতসহ সময়ের কাজ সময়ে করার গুরুত্ব অনেক। কেননা যে কোনো কাজ পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে করলে তা সুন্দর ও সফল হয়। তাই রোজার মাসে করতে হবে পূর্বপরিকল্পনা এবং নিতে হবে প্রস্তুতি। দোয়া করা : রোজার মাসের প্রস্তুতি হিসেবে মহানবী (সা.) রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমদ)। রমজান মাসে সকলে কেই তাই নিজের জন্য পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। রমজান মাসে রোজাদারের দোয়া আল্লাহ সহজে কবুল করেন। জামাতে নামাজ আদায় করা : জামাতে নামাজ আদায় করলে তাকে দুটি মুক্তির ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দুই. মুনাফেকি থেকে মুক্তি।  তাই রমজানে জামাতে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। জামাতে নামাজ আদায় করলে আত্মার শান্তি মেলে। মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে সমাজের ছোট বড় অনেকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়। এতে সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়। নফল নামাজ : ফরজ নামাজের পাশাপাশি রমজান মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে হবে। রমজানে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে, যাতে রমজানে ইশারায়, চাশত, তারাবি এবং তাহাজ্জুদ নামাজ ভালোভাবে আদায় করা যায়। নবী (সা.) বলেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। (বায়হাকি) কোরআন তিলাওয়াত : রোজার মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজানে কোরআন তিলাওয়াতে ফজিলত অনেক। তাই রমজানে কোরআন তিলাওয়াতে মনোযোগী হতে হবে। কোরআনে আছে ,রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে-কেউ এ-মাস পাবে, সে যেন এ-মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে রোগী বা মুসাফির তাকে অন্য দিনে এ-সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পার ও তোমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে পার, আর তোমরা কৃতজ্ঞ হলেও হতে পার। (সুরা বাকারা: ১৮৫) দান-সদকা : রমজানে দরিদ্র অসহায় লোকদের দান-সদকা করার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু টাকা পৃথক করে রাখা উচিত। নবী (সা.) রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীর সব মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরও প্রসারিত হতো। (বুখারি) গুনাহের কাজ না করা : পবিত্র রমজান মাসে সব ধরনের গুনাহ মাফ করা হয়। রোজা রাখার পাশাপাশি এ মাসে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। মিথ্যা বলা, চোখের জেনা, পরকীয়া, পরনিন্দাসহ সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।
০৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০৮

শীতে শিশুর ডায়রিয়া, জ্বর-ঠান্ডার সমস্যায় করণীয় 
শীতের সময় শিশুর অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। এ সময় শিশুদের কয়েকটি সাধারণ অসুখের মধ্যে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, ভাইরাল জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, কানে সংক্রমণ ও ফ্লু অন্যতম। তাই এ সময় শিশুদের বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যাতে শীতের বৈরী আবওহাওয়া শিশুর নাজুক শরীরে কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেলে। শীতের সময় ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলো থেকে শিশুকে বিরত রাখতে জেনে নিন কিছু বিষয়।  কোল্ড ডায়রিয়া-  সাধারণত বুকের দুধ পান করার পর বা ছয় মাস বয়সী শিশু থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। ছয় মাসের কম বয়সীদেরও কোল্ড ডায়রিয়া বেশি হতে পারে। তবে বুকের দুধ পান করায় তাদের ডায়রিয়া তেমন বোঝা যায় না। এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ডায়রিয়া ঠেকানো যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে পুরোপুরি সেরে যায়। কারণ : কোল্ড ডায়রিয়ার তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘এডিনো’ ভাইরাসকে দায়ী করা হয়। এ ভাইরাস ঠান্ডা যেমন ঘটায়, আবার ডায়রিয়াও ঘটায়। প্রতিকার : কোল্ড ডায়রিয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন চিকিৎসার দরকার হয় না। ঘরোয়া যত্ন করলেই সুস্থ থাকা যায়। কোল্ড ডায়রিয়ার চিকিৎসা খুবই সাধারণ এবং মুখে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া সেরে যেতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। প্রতিরোধে করণীয় : যেহেতু ঠান্ডার কারণে কোল্ড ডায়রিয়া হয়, সেহেতু যেকোনোভাবেই হোক শীতের সময় শিশুকে ঠান্ডা বা শীতের অতিরিক্ত প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হবে। সব সময় পর্যাপ্ত গরম পোশাকে শিশুকে ঢেকে রাখতে হবে। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু ঘেমে না যায়। স্যাঁতসেঁতে ঘরে বা ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করা যাবে না। শীতের সময় শিশুর গোসলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। প্রতিদিন গোসল করানোর দরকার নেই। সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে। এ সময় নাকে-মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে নেবুলাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। শিশুর খাবার পানি ফুটিয়ে পান করাতে হবে। হাসপাতালে কখন নেবেন : কিছু ক্ষেত্রে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। নয়তো ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। খুব বেশি পানির মতো পাতলা পায়খানা অনবরত হতে থাকলে শরীর অতিরিক্ত পানিশূন্য হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা একেবারেই প্রস্রাব না হলে। মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে গেলে। স্যালাইন বা অন্য কোনো খাবার একেবারে খেতে না পারলে। খুব বেশি বমি করলে, এমনকি স্যালাইন খেয়েও বমি হলে বা অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। জ্বর-ঠান্ডা-  শীতের শুরুতে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে যায় খুব সহজেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এই ধরনের অসুবিধার শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদেরই নানা ধরনের অসুখের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে বাচ্চাদের ইমিউনিটি এমনিতেই অনেকটা কম থাকে আর সেই কারণেই খুব তাড়াতাড়ি তারা জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি কাশিতে ভুগতে পারে। আর এই সর্দি কাশি থেকে শিশুদের রক্ষা করতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললেই হবে। ঠান্ডা ও জ্বর : যদি শিশুর শরীরে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, কান চুলকানো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। এ ছাড়াও রাতে ঘুমোনোর সময় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শরীর ব্যথা ও খেতে না পারা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শিশু যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। শিশু যেন সঠিক মাত্রায় মায়ের দুধ পায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখুন। মায়ের দুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তাই মায়ের উচিত প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন সি খাওয়া। ফ্লু : হঠাৎ জ্বর, ক্লান্তি, নাক বন্ধ, শুকনো কাশি ও বমির উপসর্গ দেখা দিলে বার বার শিশুকে খাওয়ান। ঘরে পর্যাপ্ত আলো চলাচলের ব্যবস্থা করুন। একদিন পর পর ঈষ‍ৎ গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান। গোসলের সময় যেন সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি হয়। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সাবধানতা : শীতে প্রায় সবারই ঠান্ডা-কাশি লেগে থাকে। ফলে আমাদের হাতে জীবাণু থাকে। তাই সবসময় হাত পরিষ্কার রাখুন। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন। শিশুর হাতও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন শিশু যেন হাত মুখে না দেয়। এ ছাড়াও- ঠান্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে শিশুকে রাখবেন না। সময়মতো শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। শিশুর কানে ইনফেকশন হলে, শ্বাস প্রশ্বাস নিতে বাধাপ্রাপ্ত হলে বা নিশ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।  দৈনন্দিন যত্ন : ঠান্ডা লাগলে শিশুর শরীর অলিভ অয়েল, পাম অয়েল বা সরষের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া সরিষার তেল শিশুর শরীরকে গরম রাখে, যা শিশুর পক্ষে আরামদায়ক। গোসলের আগে শিশুর ত্বকে তেল ম্যাসাজ করার নিয়ম সবাই জানেন। তবে গোসলের সময় ভালোভাবে শিশুর ত্বক থেকে তেল তুলে ফেলতে হবে, নয়তো তেল লোমকূপের গোড়ায় জমে র‍্যাস হতে পারে।
১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৯
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়