• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর আন্দোলনে যাবে জাপা
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাধ্য করতে প্রয়োজনে ঈদের পর আন্দোলন করার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাতে সায় দিয়ে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, এগুলো (দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ) করার জন্য আমাদের দায়িত্ব সরকারকে বাধ্য করা। জনগণের পাশে দাঁড়াতে না পারলে, জনগণের কোনো সমর্থন পাওয়া যাবে না। রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বরে জাতীয় পার্টি ঢাকা উত্তরের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন জাপা নেতারা। চুন্নু বলেন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সরকারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ রমজানে যাতে দিনানিপাত করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেন। তিনি বলেন, আপনাদের প্রতারণামূলক কথা মানুষ আর বিশ্বাস করে না। সরকার যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না আনতে পারে, তাহলে চেয়ারম্যানকে বলবো ঈদের পরে মানুষের পক্ষে আন্দোলন করা প্রয়োজন। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এসবের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ করে সরকারকে বাধ্য করা উচিত, যাতে সরকার জিনিসপত্রের দাম কমায়। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সরকারের অনেক ধরনের আশ্বাস আমরা শুনেছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা শুনেছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই, সাধারণ মানুষের নামে দলীয় কিছু নেতাকর্মীকে সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গুটিকয়েক মানুষকে সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক ন্যায়বিচার বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ভালো দেখা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব সরকারকে বাধ্য করা এগুলো করার জন্য। প্রস্তুতি নিতে হবে, জনগণের পাশে দাঁড়াতে না পারলে জনগণের কোনো সমর্থন পাওয়া যাবে না। সংগঠন করতে হলে জনসমর্থন দরকার। জনসমর্থনের জন্য সেই রাজনীতি দরকার যেটা জনগণ চায়। সেই রাজনীতি করার প্রস্তুতি নিতে হবে। জিএম কাদের আরও বলেন, সরকারের কাজকর্ম ও খরচাখরচ দেখে মনে হয় না দেশের মানুষ কষ্টে আছে। ধুমধাম চলছে সবখানে। সরকারি কর্মকাণ্ডে চাকচিক্য চলছে। সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে, সাধারণ মানুষের টাকায় এগুলো করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।  
১৭ মার্চ ২০২৪, ২০:৫২

টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘ধর্ষণ বিরোধী’ আন্দোলনে উত্তাল জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে পাশের জঙ্গলে নিয়ে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘ধর্ষণ বিরোধী’ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদেরকে বের করা, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন এবং নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে দিনব্যাপী মানববন্ধন, প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিদের মানববন্ধন কর্মসূচি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন, ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল এবং সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধন কর্মসূচি ইত্যাদি। সিনেটরদের মানববন্ধন  ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সিনেট সদস্য অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ‘সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা অপকর্ম করে তাদের বিতাড়িত করতে হবে। একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনও বহিষ্কার করা হয়নি। অবিলম্বে সেই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করছি।’ সিনেট সদস্য আশীষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘হলে অছাত্ররা আয়েশে অবস্থান করছেন আর বৈধ শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা দেখতে চাই, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অবৈধ ছাত্ররা হল ছেড়ে দিয়েছে।’ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘ন্যাক্কারজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। হলগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ ছাত্র অবস্থান করছে। অবিলম্বে হল থেকে গণরুম উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের সিট নিশ্চিত করা হোক। হলের প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেনদের হলে থাকতে হবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে যেন ছেলেমেয়েরা ফিরে আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ উপাচার্যকে হুঁশিয়ার করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত উপাচার্য। আপনি কেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পান? মনে রাখবেন, পাঁচ দিন মানে পাঁচ দিন। এরপরে যেন একজনও অছাত্র, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, বহিরাগত আবাসিক হলে স্থান না পায়।’ শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন ধর্ষণের প্রেক্ষিতে নেওয়া সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন, বহিরাগত ও অছাত্র মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। বুধবার বেলা ১২টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে শতাধিক শিক্ষকের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘ধর্ষকের বিচারের পাশাপাশি ধর্ষণে সহায়তাকারী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি প্রভোস্ট ও প্রক্টরের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরও বিচার করতে হবে। ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জাগ্রত থাকতে হবে।’ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘কিছু কুলাঙ্গার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিশ্ব পরিমণ্ডলে পদদলিত করেছে। আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। পৈশাচিক এই ঘটনাকে বিছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার সুযোগ নেই। এর আগেও দেখেছি, প্রেপ্তার হলেও শেষ পর্যন্ত দোষীরা বেরিয়ে আসে। সরকারের কাছে আমি দাবি জানাই, এদের যেনো প্রকৃত বিচার হয়।’ ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ এর বিক্ষোভ মিছিল ধর্ষণ ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। বুধবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ এর ব্যানারে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ থেকে বক্তারা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো, ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের অপরাধ তদন্তপূর্বক তাদেরকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা। নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ১৯৯৮ সালে আমরা যখন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম, তখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন আন্দোলন গড়ে উঠেছে। সেদিন জাবিতে ধর্ষণের ঘটনা শুনে আমার হৃদয় কেঁদে উঠেছে। এই ঘটনা কেন তদন্ত সেলের কাছে আসেনি?  আামি প্রশাসনকে বলবো, যদি সহযোগিতা চান, আমাদের অভিজ্ঞতা আপনাদের কাজে লাগবে। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এ ক্যাম্পাস নিরাপদ না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। ধর্ষক, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ: ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৩ টায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো, ধর্ষণে অভিযুক্ত ও পলায়নে সহায়তাকারীদের দ্রুততম সময়ে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার নিশ্চিত করা, মীর মশাররফ হোসেন হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে পলায়নে সাহায্য করার অভিযোগের তদন্তে কমিটি গঠন করা, সকল আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ: চলমান ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা এবং জড়িত সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনাসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। বিকাল ৪ টায় শহীদ মিনারের পাদদেশে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দাবিগুলো হল- যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে পূর্বের সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারপূর্বক দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, হল থেকে অছাত্রদের বিতাড়ন করে সিট সংকট নিরসন করতে হবে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে কৌশলে স্ত্রীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন। এ ঘটনায় মোস্তাফিজসহ পলায়নে সহায়তাকারী তিনজনকে পরদিন সকালে গ্রেফতার করে সাভার থানা পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত মামুন ও পলায়নে সহায়তাকারী মুরাদকে গ্রেফতার দেখাতে পারেনি পুলিশ।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫০
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়