• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
অভ্যুত্থান : কবিতায় নয়, কবিতার 
রি হোসাইন তিন দশকের বেশি সময় ধরে কবিতা লিখছেন।  ‘কবিতার অভ্যুত্থান চাই’ তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ। এই কবিতাগ্রন্থে অর্ধশতাধিক কবিতা স্থান পেয়েছে। শোষণ- বঞ্চনার দানবিক মুখশ্রী ও চিরন্তন বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে গণমানুষের অভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখছেন কবি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ কবিতা। গণ অভুত্থান শেষে প্রতিশ্রুত ভূমিতে পৌছানোর বাহনও হবে কবিতা।  প্রতিশ্রুত ভূমির উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে শ্বাসত প্রেম, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক মনস্তত্ত্ব, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব , প্রকৃতি, দার্শনিক ভাবনাসহ অন্যান্য বিষয়কে কবি জীবন্ত করে তুলেছেন। তার কবিতা কাব্যের দায় অস্বীকার করে শ্লোগানে পরিণত হবার মোহে পথ হারায় নাই। কবি নির্লিপ্ত স্বরে উচ্চারণ করেন ‘এখনো যাদের খুন করা হয়নি/তাদের চিৎকার মৃত্যুর মতো স্পন্দনহীন/তারা ঘুমের ছদ্মবেশে জেগে আছে/দুঃস্বপ্ন ছাড়া তাদের আশ্রয় দেয়নি কেউ।’ দুঃস্বপ্নের কোলে আশ্রিতদের জানান, ‘তারপর একদিন/ঘোলা জলে মাছ শিকার শেষে/বিপর্যস্ত হাহাকার ফুঁড়ে/গনগনে সুর্য উঠবে; শিকারীদের চমকে দিয়ে/স্লোগানে মুখর হবে ঐক্যবদ্ধ মৃত্যুহীন লাশ।’ (যেদিন সুর্য উঠবে)  রি হোসাইনের কবিতা বহুমুখী। তাঁর পরিমিতি বোধ ও ভাব প্রকাশের ভারসাম্য অসাধারণ। তিনি নিপুণ কুশলতায় চেনা শব্দ ব্যবহার করে দৃশ্যচিত্র নির্মাণে সাবলীল ও সতেজ। সুরিয়াল স্বরে রূপক ব্যবহারে তাকে জটিলতার আশ্রয় নিতে হয় না। ‘অর্ধেক কবিতা’র কিছু অংশ ‘অর্ধেক আষাঢ় আর অর্ধেক পূর্ণিমায়/অর্ধেক কাম আর অর্ধেক সন্ন্যাসে/এক আকাশে উড়েছে আমাদেরই অর্ধেক ফানুস।/ অর্ধেক মৃত্যু দিয়ে দেয়াল ভেঙ্গেছি যখন/তুমিও অর্ধেক মৃত পড়ে ছিলে, দেয়ালের ওপারে/বাকি অর্ধেক ছিলো বিভ্রান্ত শূন্যতার ইতিহাস...’।  মানব-মানবীর শ্বাসত প্রেমের ক্ষেত্রে কবি দ্বান্দ্বিক মনস্তত্ত্বের প্রতি সংবেদনশীল। এই পক্ষপাতিত্ব ফুটে ওঠে এভাবে ‘এরপর একদিন অপেক্ষার অবসান হলো/আমাদের দেখা হলো/তুমি জানলেই না, অথবা আমিও জানলাম না/কিংবা দুজনের কেউই না।/কিন্তু বারবার মনে হলো; যাক দেখাতো হয়েই গেলো.../আর জ্যামিতি শাস্ত্র তুচ্ছ করে/দুটি সমান্তরাল রেখা পরস্পরকে ছেদ করে চলে গেলো।’ আবহমানকাল ধরে শোষকের দানবিক থাবার বিরুদ্ধে এবং গণমানুষের পক্ষে বারবার সটান দাঁড়িয়েছে বাংলা কবিতা। বাংলা কবিতা জানে শোষকের আস্ফালন ভুলে যায়  ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন। কবি গণজোয়ারে ভেসে যাবার আগ পর্যন্ত তাদের সংযত হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুরু চামড়ার গদির ভাঁজে/জমা রেখো কিছু অনুতাপ,/জিহ্বার চকচকে বিষ ঢেকো সুগন্ধি মেখে, /কূটিল আর্তনাদে ঢেকে রেখো পাপ।’ রি হোসাইন বিশ্বাস করেন একজন কবি কখনো নিরপেক্ষ হতে পারেন না। কবিরও মত থাকতে হয়। তাকেও পক্ষ নিতে হয় - হয় জনতার নয় শোষকের। রাজনীতিবিমুখ কবিতার আধিপত্যের যুগে ‘কবিতার অভ্যুত্থান চাই’ ক্ষুদ্র হলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস।  নিয়ন্তা মাহজাবীনের অজটিল প্রচ্ছদে ‘কবিতার অভ্যুত্থান চাই’ প্রকাশ করেছে অন্যধারা পাবলিকেশন্স। একুশে বইমেলায় অন্যধারার স্টল এবং অনলাইন বুকশপে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৪
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়