সোমবার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ
আগামীকাল সোমবার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তবে বাংলাদেশ থেকে এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে না। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় গ্রহণটি পুরোপুরিভাবে দেখা যাবে।
আংশিকভাবে দেখতে পাবে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার কিছু স্থানের বাসিন্দারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রিনিচ মান সময় অনুযায়ী কাল ৮টা ৩৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। আর শেষ হবে বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ১১টা ১২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে। এবারের চন্দ্রগ্রহণের সর্বোচ্চ মাত্রা হবে ১ দশমিক ১৯৫৩ এ।
এসজে/পি
মন্তব্য করুন
সব ঝিনুকে মুক্তা না থাকার রহস্য জানেন কি
মুক্তার সৌন্দর্য্য যে কাউকে আকৃষ্ট করে। মুক্তার তৈরি বিভিন্ন গয়না পরতেও পছন্দ করেন অনেকেই। একটা ঝিনুক যাকে বাইরে থেকে দেখতে মোটেই অবাক করার মতন কিছু মনে হয় না। কিন্তু তার ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসে ঝলমলে মুক্তা। সব ঝিনুকেই যে মুক্তো থাকবে, তা কিন্তু নয়। তবে ঝিনুকের মধ্যে কীভাবে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় মুক্তা, তা জানেন কি? ঝিনুকের ভেতরে মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়াটি জানলে অবাক হতে পারেন।
ঝিনুকের পেটে যেভাবে তৈরি হয় মুক্তা-
সাগরে শামুকের বিভিন্ন প্রজাতি আছে। যার পেটে মুক্তা থাকে, কিন্তু তা থেকে কীভাবে মুক্তা উৎপন্ন হয়, তা হয়তো জানেন না অনেকেই। শামুক নিজেকে রক্ষা করার জন্য একটি খুব শক্তিশালী খোসার মধ্যে বাস করে এবং এই খোলসটিকে ঝিনুক বলা হয়। যখন হাজার হাজারের মধ্যে একটি বা দুটি ঝিনুকের খোসার মধ্যে একটি ছিদ্র থাকে, তখন বালির কণা তার ভেতরে যায়। এমন অবস্থায় ঝিনুকের ভেতরে বালির কণাগুলোকে এক বিশেষ ধরনের পদার্থ লেপ দিতে শুরু করে।
এই বিশেষ পদার্থটিকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বলা হয় এবং এটি সেই জীবের ভিতরেই উৎপন্ন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি সাদা রঙের চকচকে গোলাকার আকৃতির পাথরে পরিণত হয় যাকে মুক্তা বলে। ঝিনুকের অভ্যন্তরে থাকা বালির কণা যখন শামুককের মধ্যে বিক্রিয়া করে, তখন তা থেকে এক ধরনের তরল চর্বিযুক্ত পদার্থ বের হয়। মুক্তা গঠন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশের গবেষকরা বলছেন অনুকূল আবহাওয়া, দেশজুড়ে অসংখ্য পুকুর জলাশয় থাকায় আর উৎপাদন খরচ খুব কম হওয়ায় মুক্তা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের মধ্যে।
মুক্তা একটি মূল্যবান রত্ন হিসেবে পরিচিত যা সাধারণত গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর বাইরেও কিছু রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয় বলে জনশ্রুতি আছে।
মুক্তার একমাত্র উৎস হলো ঝিনুক। এক সময় প্রাকৃতিকভাবে ঝিনুকে মুক্তা উৎপন্ন হতো আর সেগুলো আহরণ করে মুক্তা সংগ্রহ করত জেলে বা চাষিরা।
কিন্তু পরে মুক্তা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
৫০ বছর পর ফের চাঁদের পিঠে নামছে মার্কিন মহাকাশযান
ফের চাঁদের পিঠে অবতরণ করতে যাচ্ছে একটি মার্কিন মহাকাশযান। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর আবার চাঁদের পিঠে অবতরণ করতে যাচ্ছে এই মার্কিন মহাকাশযানটি। হাউসটনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের পাঠানো এ মহাকাশযানটি বৃহস্পতিবার চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের চেষ্টা চালানোর কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু সংগঠিত হলে এদিন প্রতিষ্ঠান ‘ইনটুইটিভ মেশিন’ তার ষড়ভুজ আকৃতির রোবট ‘অডিসিয়াস’কে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে (২২:৩০ জিএমটি) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পথ নির্দেশনা দেবে। এর আগে বুধবারই এ মহাকাশযানটি চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছায়। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি।
বাণিজ্যিক মহাকাশযানের মাধ্যমে পরিচালিত এ চন্দ্রাভিযানে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। চলতি দশকের শেষ দিকে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর পথ সুগম করাই এ অভিযানের লক্ষ্য।
অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা আশা করছেন, চাঁদের মাটি স্পর্শ করার ঐতিহাসিক মুহূর্তের প্রায় ১৫ সেকেন্ড পর তারা চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে অভিযানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি গিয়ে রোবট অডিসিয়াস তার ‘ইগলক্যাম’-এর সাহায্যে ল্যান্ডার অবতরণের মুহূর্তের সর্বশেষ কয়েক সেকেন্ডের ছবি তুলবে।
এর আগে গত মাসে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চন্দ্রাভিযান পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সবশেষ ১৯৭২ সালে নাসা সফলভাবে চাঁদে অ্যাপোলো ১৭ মিশন পরিচালনা করেছিল।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্পেস পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ কাউন্সিলের সাবেক সদস্য স্কট পেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক অনুপস্থিত থাকার পর তার চন্দ্রাভিযানের সক্ষমতা নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই এমন কথা শোনা যায়, আমরা অতীতে সফল চন্দ্রাভিযান পরিচালনা করেছি তাহলে এখন কেন পারব না?’ এ অভিযান কীভাবে করতে হয়, তা প্রতিটি প্রজন্মকেই শিখতে হবে বলেও জানান স্কট।
অর্ধশতাব্দী পর চন্দ্রাভিযানে সাফল্য এলো যুক্তরাষ্ট্রের
অ্যাপোলো মিশনের সাফল্যের ৫০ বছর পর আবারও চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রযান। তবে এবার এ অভিযান পরিচালনা করেছে ইনটুইটিভ মেশিন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করে মহাকাশযান ‘অডিসিয়াস’। বাণিজ্যিক মহাকাশযানের মাধ্যমে পরিচালিত এই চন্দ্রাভিযানে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। ‘ইনটুইটিভ মেশিন’ ও নাসা যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
হাউস্টনভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা কোম্পানি ইনটুইটিভ মেশিনের এ অভিযানের নাম ছিল ‘আইএম-১’ । প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী স্টিভ আন্টেমুস বলেন, এ চন্দ্রযানকে অভিযানের জন্য প্রস্তুত করতে অনেক নির্ঘুম রাত পার করেছি আমরা। চন্দ্রযানের যে অংশটি চাঁদের পৃষ্ঠে যাবে, সেই ল্যান্ডারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অডিসিয়াস’। মহাকবি হোমারের ‘দ্য ওডিসি’ মহাকাব্যের নায়কের নামানুসারে দেওয়া হয়েছে এই নাম।
সম্প্রতি আরেকটি কোম্পানি চাঁদে অভিযানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অ্যাস্ট্রোবায়োটিক টেকনোলজির তৈরি চন্দ্রযানটি ১০ দিন মহাশূন্যে ঘোরাঘুরির পর প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে।
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১ চন্দ্রযান প্রথমবারের মতো মানুষ নিয়ে চাঁদে অবতরণ করে। এরপর ১৯৭২ সালে নাসা চাঁদে অ্যাপোলো ১৭ মিশন পরিচালনা করে।
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখবে বিশ্ব, দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার
আগামী ৮ এপ্রিল বিরল এক সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। তবে সব সূর্যগ্রহণের মতো একই সঙ্গে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে দেখা যাবে না এটি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন দেশে দিনকে রাতের মতো অন্ধকার দেখাবে। বিরল এক সূর্যগ্রহণের ফলে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মানুষ দেখবে এমন দৃশ্য। ওই দিন সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ফলে দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার। প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দিন সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ফলে দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে এ দৃশ্য দেখা যাবে। তবে সব সূর্যগ্রহণের মতো একইসঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে এর দর্শন মিলবে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের সূর্যগ্রহণ খুবই বিরল। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের তারিখে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মতো আকাশ অন্ধকার হয়ে যাবে। মূলত, সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ এলে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। নির্দিষ্ট সময় সূর্যকে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলে এটি। এতে সম্পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। ফলে আকাশ হালকা অন্ধকার হয়ে যায়। সে সময়কে ভোর বা সন্ধ্যার মতো মনে হয়।
কোয়ান্টাম ফিজিক্সে অভূতপূর্ব সাফল্য পেলেন বাংলাদেশি গবেষক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দীর্ঘ ১৫ বছর গবেষণার পর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কঠিন এক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন একজন বাংলাদেশি গবেষক। তার নাম এম জাহিদ হাসান।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নেচার ফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত সংখ্যায় এই তথ্য জানানো হয়।
এম জাহিদ হাসান ইতিমধ্যেই কোয়ান্টাম ফিজিক্স গবেষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন। তিনি প্রিন্সটনের ল্যাবরেটরি ফর টপোলজিক্যাল কোয়ান্টাম ম্যাটার অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্পেক্ট্রোস্কোপির নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া জাহিদ হাসান ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স বার্ক্লে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একজন ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি সায়েন্টিস্ট এবং কোয়ান্টাম ফেনোমেনা ইন টপোলজিক্যাল ম্যাটেরিয়ালস ক্ষেত্রে তার গবেষণার জন্য বেটি অ্যান্ড গর্ডন মুর ফাউন্ডেশন থেকে ইপিআইকিউএস-মুর ইনভেস্টিগেটর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বিসমাথ ব্রোমাইড নামের মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার প্রশস্ত একটি বস্তু ব্যবহার করেন এবং কোয়ান্টাম কোহেরেন্স নামের একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন আগের তুলনায় বেশি তাপমাত্রায়।
কোয়ান্টাম কোহেরেন্স হলো- কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যান্য ধারণাগুলো হলো- সুপারপজিশন ও এনট্যাংগলমেন্ট। এগুলো বুঝতে হলে কোয়ান্টাম কোহেরেন্স জরুরি। কিন্তু কোয়ান্টার কোহেরেন্স পর্যবেক্ষণ করতে খুবই কম তাপমাত্রা (প্রায় পরম শূন্য) প্রয়োজন হতো। কিন্তু প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এই গবেষণায় সাফল্য প্রমাণ করে যে, এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রাতেও কোয়ান্টার কোহেরেন্স পর্যবেক্ষণ সম্ভব।
বিসমাথ ব্রোমাইড ছিল এই গবেষণার তুরুপের তাস। বেশি দূরত্বে ও বেশি তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কোহেরেন্স ধরে রাখতে তা সক্ষম। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা অতীতের এক পরীক্ষায় বিসমাথ ব্রোমাইড তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এই প্রথম করা হলো কোয়ান্টাম কোহেরেন্স পর্যবেক্ষণে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা।
গবেষণাটির সাফল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তা ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এমন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে আসতে পারে। এ ছাড়া কোয়ান্টাম ফিজিক্স গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
এক সময়ে সাধারণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর বদলে ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে এমন ডিভাইস সর্বজনীনভাবে ব্যবহার হবে, ফলে বিশাল পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ কমে আসবে বলে আশা গবেষকদের।
নির্মল জ্বালানির উৎস হতে পারে প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সন্ধানে হাইড্রোজেন অন্যতম সম্ভাবনাময় উৎস৷ কিন্তু সেই জ্বালানি উৎপাদনের ঝক্কি কম নয়৷ এবার মাটির নীচে প্রাকৃতিক হাইড্রোজেনের ভাণ্ডার কাজে লাগানোর উদ্যোগ শুরু হচ্ছে৷
পৃথিবীর গভীরে প্রচুর হাইড্রোজেন জমা রয়েছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মাটির নীচে এমন ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে বলে অনুমান করা হয়৷ প্রাকৃতিক হাইড্রোজেনের এই ভাণ্ডার কি আমাদের চাহিদা মেটাতে টেকসই এক স্বর্ণখনির মতো হয়ে উঠতে পারে? যান চালাতে পেট্রোল ও ডিজেলের বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যায়৷ ইস্পাত ও রসায়ন শিল্পখাতকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতেও সেই সম্পদ কাজে লাগানো যায়৷ কারণ কম্বাসচন প্রক্রিয়ার পর সে ক্ষেত্রে শুধু পানি অবশিষ্ট থাকে৷ প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন আমাদের গ্রহের কার্বন নির্গমন নাটকীয় মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারে৷ তা সত্ত্বেও এই উৎস কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না?
ভূতত্ত্ববিদ ও স্টার্টআপ উদ্যোগপতি এরিক গোশের মনে করেন, পৃথিবীতে এখনো ভালোভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়নি৷ মাটির গভীরে এখনো অনেক কিছু অজানা থেকে গেছে৷ মানুষ নিজেকে সবজান্তা মনে করলেও বাস্তবে সেটা ঠিক নয়৷ গ্রহের একটা বড় অংশে কোনো অন্বেষণ হয়নি৷ এরিক গোশের বহু বছর ধরে হাইড্রোজেনের প্রাকৃতিক উৎসের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমে পিরেনিস পর্বতমালায় এমন এক উৎস রয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস৷
তিনি বলেন, হাইড্রোজেনের অস্তিত্বের কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে, কারণ ভূপৃষ্ঠে তার কিছুটা বেরিয়ে আসছে৷ এমন সিপেজ বড় ফাটল বা টেকটনিক ফল্টের মধ্যে দেখা যায়৷ অর্থাৎ, একটি এলাকার গভীরে সীমাবদ্ধ৷ আমরা সেই এলাকাকে কিচেন বলি৷ মাটির গভীরে সেই কিচেন-এ হাইড্রোজেন সৃষ্টি হচ্ছে৷ ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে কিচেনের লৌহঘটিত শিলার সংস্পর্শে আসে৷ তখন হাইড্রোজেন বেরিয়ে এসে সেখানে জমা হয়৷ এখনো পর্যন্ত মাত্র একটি এমন হাইড্রোজেনের উৎস কাজে লাগানো হয়েছে৷ পশ্চিম আফ্রিকার এক গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে একটি জেনারটর হাইড্রোজেন শক্তিতে চলছে৷
লাইবনিৎস ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. রুডলফো ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, মালিতে মাটির অগভীরে বিশাল পরিমাণে হাই কনসেন্ট্রেশন হাইড্রোজেন পাওয়া গেছে৷ প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিটার নীচেই সেই ভাণ্ডার রয়েছে৷ অন্যান্য দেশেও সেই প্রক্রিয়া নকল করে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে ইলেকট্রিক গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই আমাদের উদ্দেশ্য৷
ফেয়ারি সার্কেল বলে পরিচিত এমন রিং হাইড্রোজেন ভাণ্ডারের ইঙ্গিত দেয় ড. ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, হাইড্রোজেন বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে এমন কাঠামো সৃষ্টি করে৷ স্যাটেলাইট ইমেজের সাহায্যে আমরা এমন কাঠামো চিহ্নিত করতে পারি৷ জানতে পারি, মাটির নীচে ঠিক কোথায় হাইড্রোজেন সৃষ্টি হচ্ছে বা অতীতে ঘটেছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্টার্টআপ কোম্পানি হাইড্রোজেনের সন্ধানে ড্রিলিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ মোটা মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা সেই কাজে কোটি কোটি ডলার ঢালছেন৷ স্টার্টআপ উদ্যোগপতি ভিয়াচেস্লাভ জগোনিক বলেন, মাটির নীচ থেকে হাইড্রোজেন যে উত্তোলন করা যায়, সেটা হাতেনাতে দেখানোই ছিল ড্রিলিং-এর মূল কারণ৷
কারণ অনেক বিনিয়োগকারী ও অন্যান্যরা আমাকে বলেছেন, যে এত সহজে এমন সাফল্য তাদের অভাবনীয় মনে হচ্ছে৷ সেটা যে আদৌ সম্ভব, তা সবার আগে দেখিয়ে দিতে বলেছেন তাঁরা৷ কেউ বিশাল ভাণ্ডার আবিষ্কার করে মোটা অংকের অর্থ লাভ করতে পারেন৷ বিষয়টা অনেকটা পেট্রোলিয়াম যুগের সূচনার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে৷ কিন্তু এর আগে কেউ কখনো সেই চেষ্টা না করায় হাইড্রোজেনের জন্য ড্রিলিং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ৷