• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যে পথে হাঁটছে হেফাজত!

আরটিভি নিউজ

  ২৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৯
হেফাজতের নেতৃত্ব ফের সুযোগ খুঁজছে! 

এক দশক আগেও হেফাজতে ইসলামের নাম কেউ জানত না। হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির মাওলানা আল্লামা শাহ আহমদ শফী নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করা এবং ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানী ঢাকা অবরোধ করার মধ্য দিয়ে হেফাজত দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে দলটি। তবে বিগত বছরে খুব একটা আন্দোলনায় ছিল না দলটি। সর্বশেষ স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় সফরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মোদি বিরোধী কঠোর আন্দোলন করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এতে ২০১৩ সালের ৫ মে’র মতো ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ দেশের বেশকিছু এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন হেফাজতের কর্মী মারা যায়। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত বা সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি চাপে পড়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়েও হেফাজত বিব্রত। চলছে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়।

অতীতে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে নানা ধরনের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু বর্তমানে পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। হেফাজতকে ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক দল বলা হলেও বিভিন্ন সময়ে সরকার পতনের পরিকল্পনায় মাঠে নেমেছে। এসব আন্দোলনের পেছন থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা যোগান দেয় বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করছেন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকার বিরোধী মাঠের রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন সংগ্রাম করতো। এখন হেফাজতে ইসলামের মতো বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের কর্মীরা কৌশলে মিশে গেছে। তারাই মূলত সরকার বিরোধী আন্দোলন জোড়ালো করতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে উস্কে দেয়। এছাড়া জামায়াতের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিহ্নিত নেতারা ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না থাকলেও পেছনে থেকে ইন্ধন যোগায়। তবে এই ধর্মভিত্তিক দলকে ভোটের রাজনীতিতে রাখতে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে আন্দোলনের পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেদের হাতে কাছে রাখাতে কৌশল অবলম্বন করে। তৎকালীন হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে দলটির নেতৃত্বে যারা এসেছেন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব বেড়ে যায়। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছে। এই দলের নেতারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ের সঙ্গেই দর-কষাকষির কাজ করেন। এই দর-কষাকষি করতে কওমি মাদরাসার কমলমতি শিক্ষার্থীদের রাজপথে নেমে আন্দোলন মধ্য দিয়ে নিজেদের নাগালের কাছে নিয়ে আসতে চায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, এখনকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পেছনেও তার ভাষায় দু'পক্ষের আঁতাতের বিষয় থাকতে পারে। হেফাজত মাওলানা শফী যখন বেঁচে ছিলেন, তখন সরকারের সঙ্গে তাদের আঁতাত আমরা দেখেছি। এবং সরকার হেফাজতকে ব্যবহার করে। হেফাজতের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম আছে বলে আমি মনে করি না। সরকার তাদের ব্যবহার করে তাদের যখন যে পারপাসে দরকার হয়।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, শাপলা চত্বরে (২০১৩ সালে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি) এতবড় ঘটনার পরে তাদের সঙ্গে কি মিলমিশ হয়নি?" প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তারা সরকারের কথায় বিভিন্ন কার্যক্রম করে। আবার যখন একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, বাইরে একটা বাজে ইমেজ হয় আমাদের জন্য, তখনই তারা সেটা ধপ করে ছেড়ে দেয়। আঁতাত না থাকলে এটা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াত জড়িত ছিল। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ১৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ব্যর্থতার গ্লানি থেকে এসব করছে। বিএনপির অসহযোগিতার কারণেই দেশে গণতন্ত্রের মসৃণ যাত্রা বারবার হোঁচট খেয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নানা কৌশলে মোকাবিলা করেছি। বেশিরভাগ এলাকায় এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে। সম্প্রতি ঢাকার বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এতে আমরা ব্যথিত। সাম্প্রদায়িক শক্তি আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে। কার্যালয় ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছে সরকারি বহু নথি। এগুলা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এগুলো কঠোর হস্তে দমন করা। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, হেফাজতের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ধাপে ধাপে এই অভিযানের গতি বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরই অংশ হিসেবে হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতার গতিবিধির ওপর নজর রাখছে পুলিশ।

হেফাজতের কয়েকজন নেতা সরাসরি ও বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রেপ্তার বন্ধ করে ফের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানায় সূত্র। পুলিশের গোয়েন্দারা মামুনুল হকসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনসহ তিনটি শর্ত দিয়ে পরে আলোচনা হতে পারে বলে জানান। এব্যাপারে হেফাজতের ভেতরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে কমিটি গঠনে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়া শফীপন্থী কয়েকজন নেতাও বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন। তারা প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চের সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী। তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমরা মিলে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন গঠন করেন। এর সদর দফতর চট্টগ্রামের হাটহাজারী কওমি মাদ্রাসায়।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh