• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ফখরুলসহ অন্যরা কী সংসদে যাবেন?

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:১৭
ফাইল ছবি

আগামী ৩০ এপ্রিল শেষ হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের শপথ গ্রহণের শেষ সময়। শেষ মুহূর্তে বিএনপির আরও কয়েকজন সাংসদ জাতীয় সংসদে যোগ দিতে পারেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। বিএনপির কোনও সাংসদ যাতে শপথ না নেন, সে জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা শপথ নিয়ে এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন। প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছেন না। অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। এতে তারা বিব্রত, আতঙ্কিত। গতকাল শনিবার এক কর্মসূচিতে দলীয় সংশয়ের কথা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, দু-একজন শপথ নিলেও বিএনপির কোনও ক্ষতি হবে না।

তবে দলের ভেতরে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শনিবার রাতে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জাহিদকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ শপথ নিলে কড়া সিদ্ধান্ত নিতে দল পিছপা হবে না।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জন এবং শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তেই তারা অনড় থাকতে পারবেন। এমনকি স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও (২২ এপ্রিল) তাদের সে সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়। তবে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিয়ে নেওয়ায় সে হিসেবে গরমিল দেখা গেছে।

এরপরই কড়া সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। শপথ নেয়ায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে নির্বাচিত জাহিদুর রহমানকে শনিবার রাতে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানিয়েছেন, মো. জাহিদুর রহমানের শপথ নিয়ে হাইকমান্ড একটু বেশিই বিব্রত। শপথ ঠেকাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। নিয়মিত যোগাযোগ করতে হচ্ছে। তবে শপথ নিয়ে বহিষ্কার করলেও সংসদ সদস্য বাতিল হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় আছে। ফলে হাইকমান্ডও বেশ চিন্তায় পড়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি থেকে নির্বাচিত, শপথ না নেয়া সাংসদের মধ্যে অন্তত চারজন শিগগিরই সংসদে যোগ দিতে পারেন। এঁরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার ও বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন। তাদের সঙ্গে সরকার থেকেও নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

শপথ নেবেন কিনা জানতে চাইলে আরটিভি অনলাইনকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুনুর রশীদ জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গেই আছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বাকি তিন সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শপথগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে এ বছরের ৩০ জানুয়ারি। এই হিসেবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণ করতে হবে।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব সাংসদ শপথগ্রহণ করেছেন, আইন অনুযায়ী তাদের সদস্যপদ থাকবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও সাংসদ নির্বাচনের পর সাংসদ পদে থাকার অযোগ্য হবেন কিনা কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনও সাংসদের আসন শূন্য হবে কিনা—এ সম্পর্কিত কোনও বিতর্ক দেখা দিলে বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনও ব্যক্তি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তবে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সুলতান মনসুর, মোকাব্বির খান ও জাহিদুর রহমান দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগও তাদের নেই। তবে তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাদের বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকতে হবে।

এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দল কোনও সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করলে তার সদস্য পদ কি হবে এটার উত্তর সরাসরি আমাদের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে নেই। ৭০ অনুচ্ছেদে দল থেকে পদত্যাগ অথবা দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার কথা বলা আছে। বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে তখন উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। তবে আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা দাঁড়াবে পদত্যাগ ও বহিষ্কার শব্দটা সমর্থক কিনা। হাইকোর্ট হয়তো এটাই বলবেন যে, দল থেকে পদত্যাগ করা আর বহিষ্কার করা সমর্থক। তাহলে এই বিবেচনায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। তবে হাইকোর্ট কি বলবেন সেই সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে, বিএনপি নেতাদের শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বেশ উৎফুল্ল। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি যে ব্যর্থ রাজনৈতিক দল, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে কতটা ব্যর্থ হলে নির্বাচনের পর জয়ী ব্যক্তিরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যান। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ায় বিএনপির রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে। আমি আশা করছি, বিএনপি বাকি নেতারাও দ্রুত শপথ নেবেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপির ছয়জনকে সংসদে যাওয়ার বৈধতা দিয়েছে। তারা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়, তবে সবাই অবশ্যই সংসদে আসবে। তারা গণতন্ত্র চাইছে আবার সংসদে যাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছে। নির্বাচিতদের সংসদে যেতে বাধা দিচ্ছে। এটা বিএনপির দ্বিচারিতা। বিএনপি নেতাদের গণতন্ত্রে বিশ্বাস নেই বলেই তারা নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়ার বিরোধিতা করছে। আশা করছি, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির নির্বাচিত বাকি এমপিরাও অচিরেই শপথ নেবেন।

এসজে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইফতার পার্টি করে মিথ্যাচার চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের 
বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না : রিজভী
ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব!
স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের
X
Fresh