• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

৬৭ গবেষক, শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নির্মাতা, রাজনৈতিক কর্মীর বিবৃতি

‘অধ্যাপক আকমলকে নয়, ঢাবি শিক্ষক সমিতিকেই ক্ষমা চাইতে হবে’

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:৫৫

বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্য খন্ডিত ও বিকৃতভাবে প্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ৬৭ তরুণ গবেষক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নির্মাতা, রাজনৈতিক কর্মী বিবৃতি দিয়েছেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে ভুল স্বীকার করে অধ্যাপক আকমল হোসেন ও জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গেলো ১৯ জুলাই, ২০১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে অধ্যাপক আকমল হোসেনের প্রদত্ত একটি বক্তৃতাকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যগণ যে ভ্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে আমরা হতভম্ব ও ব্যথিত হয়েছি।

বিবৃতিদাতারা বলেন, সংহতি সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অধ্যাপক আকমল হোসেন প্রকৃতপক্ষে যা বলেছিলেন তা হল এই: “সেদিন আমার সহকর্মী তানজীমকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দীন খান) বলা হয়েছে যে সে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল কিনা। (ছাত্রলীগের কর্মীরা গত ১৫ জুলাই শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের সময় যে পাল্টা মানববন্ধন করে সেখানে তারা এমন বক্তব্য দেয়)। এখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা যদি আপনার এধরনের আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের অনেকেই সেই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তানজীম বা ফাহমিদের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক) বয়স মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার বয়সের সমান। আর মুক্তিযুদ্ধের মতো মহান একটি ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে, সেটা নিয়ে যেভাবে অবস্থান নেয়া হয়, বক্তব্য রাখা হয়, তাতে আমার মনে হয়, যে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়। আমার প্রশ্ন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী -- তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তার পিতা -- তার পিতা, যিনি এই আন্দোলনের যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যার মাধ্যমে তৈরী হয়েছিল, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই যে বিচার করা, কে প্রতিবাদ করতে পারবে, কে অন্যায় (অন্যায়ের প্রতিবাদ) করতে পারবে, সেটা আমার মনে হয় অত্যন্ত নেতিবাচক চিন্তা।” (অধ্যাপক আকমল হোসেনের ওই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ইতোমধ্যেই সবাই দেখেছেন। তিনি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পত্রিকায়)। তাঁর উপরিল্লিখিত বক্তব্যে এটা পরিস্কার যে তিনি এখানে প্রধানমন্ত্রী বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাউকেই কোন কটুক্তি করেননি। বরং যৌক্তিকভাবে এটাই দেখাতে চেয়েছেন যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলেই যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না এটি একটি নেতিবাচক চিন্তা।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: সিলেট সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সমর্থন পেলো আ.লীগ
--------------------------------------------------------

বিবৃতিদাতারা দাবি করেন, এত পরিস্কার বক্তব্য দেয়ার পরও অধ্যাপক আকমল হোসেনের এই বক্তব্যকে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সম্মানিত শিক্ষকগণ গত ২৪ জুলাই প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে খণ্ডিতভাবে প্রচার করেছে এইভাবে, “গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অধ্যাপক আকমল হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাঁর পিতা...তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?’ আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সত্ত্বেও উক্ত সমাবেশের আয়োজকরা তার এ বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ তো করেনইনি বরং বাহবা দিয়েছেন।” এভাবে খন্ডিত ও বিকৃতভাবে অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যকে প্রচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সম্মানিত সদস্যগণ অভিযোগ করছেন যে অধ্যাপক আকমল হোসেন নাকি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন! তাদের উক্ত প্রেস রিলিজে আরো লিখেছেন যে অধ্যাপক আকমল হোসেন যেন তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন! এভাবে অধ্যাপক আকমল হোসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিষয়ে যা বলেছেন সেটিকে শিক্ষক সমিতি তিনটি ডটের দ্বারা ফেলে দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে খন্ডিত ও বিকৃত করে এমনভাবে প্রচার করছেন যে তাতে তাঁর বক্তব্যের মূল অর্থ পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। তাছাড়া কোন প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়ে অধ্যাপক আকমল হোসেন কথা তুলেছেন সেটিও কিন্তু তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেছেন। অথচ শিক্ষক সমিতি তাঁর বক্তব্যের মাঝখানের একটা অংশকে বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করে অভিযোগ করছেন যে তিনি নাকি অপ্রাসঙ্গিকভাবে এই প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করেছেন!

বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যকে খুবই খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে প্রচার করেছেন এবং এর ফলে তাঁর বক্তব্যের অর্থ বদলে যাচ্ছে। শিক্ষক সমিতির এই কাজ পরিস্কারভাবেই সত্যের অপলাপ ও কার্যত জঘন্য মিথ্যাচারের শামিল। যার ফলে অধ্যাপক আকমল হোসেনকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে ও হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা অধ্যাপক আকমল হোসেনকে নিয়ে করা এহেন জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতি তীব্র ধিক্কার জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যগণের কাছ থেকে এমন মিথ্যাচারের সমতুল্য ভ্রান্ত প্রচারণা আমরা আশা করি না।

তারা বলেন, এই ভ্রান্ত প্রচারণা দ্বারা শিক্ষক সমিতির সদস্যগণ অধ্যাপক আকমল হোসেনকে যেভাবে হয়রানি ও বিপদগ্রস্ত করছেন সেটি যে কতটা নীতি-নৈতিকতাবর্জিত ও ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেটি শিক্ষক সমিতির শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সদস্যরা অচিরেই অনুধাবন করবেন বলে আমরা আশা করতে চাই। আমরা মনে করি নিজেদের ভুল স্বীকার করে অধ্যাপক আকমল হোসেনকে নিয়ে মিথ্যাচারের সমতুল্য ভ্রান্ত প্রচারণা চালানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বরং উচিত অধ্যাপক আকমল হোসেন ও জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। সেই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দ্বারা হেনস্তা করা হচ্ছে আমরা অনতিবিলম্বে তারও অবসান ঘটানোর দাবি জানান বিবৃতিদাতা।

বিবৃতিদারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক আতিয়া ফেরদৌসী চৈতী, ইউল্যাবের শিক্ষক হিয়া ইসলাম, শিল্পী শ্যাম সাগর মানকিন, বিজন দাস, এক্টিভিস্ট তৃষা বড়ুয়া, বাবু আহমেদ, লেখক ইমতিয়াজ আহমেদ, শিল্পী হরেন্দ্রনাথ বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক আল বিরুনী প্রমিথ, কবি রুদ্র রথি, কবি শ্মশান ঠাকুর, চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপা মাহবুবা ইয়াসমিন, সাংবাদিক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর, ছাত্রফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ঐক্য ফোরামের আর্নিকা তাসমীম মিতু, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবিতে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুমে’ অচেতন শিক্ষার্থী, তদন্ত কমিটি গঠন
‘ইনস্যুরেন্স পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণে অংশীজনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল
ঢাবির সুইমিং পুলে ছাত্রের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
প্রচণ্ড গরমে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
X
Fresh